ভাঙা ওয়েস্ট িবন জড়ো করে রাখা হয়েছে ইস্কাটন গার্ডেনের ফুটপাতে। সম্প্রতি তোলা ছবি।
২৫ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ১২:২৩

ডিএসসিসি

ওয়েস্ট বিনে দুই কোটি টাকা গচ্চা

পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রায় ১১ হাজার ওয়েস্ট বিন (ময়লা ফেলার ছোট পাত্র) স্থাপন করেছিল দুই সিটি করপোরেশন। এর অধিকাংশই চুরি ও অকেজো হয়ে গেছে। অল্প কিছু বিন টিকে আছে। এগুলো তেমন ব্যবহৃত হচ্ছে না। অথচ এ বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা।

চলতি বছরের ২০ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়েস্ট বিন বাবদ খরচের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে অডিট অধিদপ্তর। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে পাঁচ হাজারের বেশি ওয়েস্ট বিন কিনে স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় দুই কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই অর্থ দায়ী ব্যক্তিদের থেকে আদায় করে ডিএসসিসির তহবিলে জমা দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) এখনো এ-সংক্রান্ত অডিট বা নিরীক্ষা করা হয়নি।

ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, নগরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কস লিমিটেড থেকে ৫ হাজার ৭০০টি ওয়েস্ট বিন কিনেছিল ডিএসসিসির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগ। একই সময় প্রায় সমপরিমাণ ওয়েস্ট বিন কিনেছিল ডিএনসিসি। ডিএসসিসির ওয়েস্ট বিন কেনা ও স্থাপন বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

ডিএসসিসি বলছে, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই এই ওয়েস্ট বিনগুলো কেনা ও স্থাপন করা হয়। জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছিল। এখনো অর্ধেকের বেশি ওয়েস্ট বিন ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলো চুরি হয়েছে ও ব্যবহার অনুপযোগী সেখানে নতুন বিন স্থাপন করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসসিসির পলাশী, আজিমপুর, লালবাগ, চানখাঁরপুল, শাহবাগ, গুলিস্তান, বাংলামোটর এলাকায় অন্তত ২০টি ওয়েস্ট বিন ভাঙা বা ব্যবহার অনুপযোগী দেখা গেছে। এর মধ্যে খোদ ডিএসসিসির নগর ভবনের সামনের রাস্তায় দুটি ওয়েস্ট বিন রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যে কয়েকটি ভালো আছে, সেগুলো ময়লা নেই। আবার সেগুনবাগিচা এলাকার একটি ওয়েস্ট বিনে বর্জ্য স্তূপ হয়ে থাকতে দেখা গেছে।

ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে তারা ওয়েস্ট বিনগুলো নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ৫ হাজার ৭০০টি বিনের মধ্যে ৫১ শতাংশ বিন ভালো বা ব্যবহার উপযোগী। বাকি ২৭ শতাংশ বিন এখন মেরামতযোগ্য, আর ২২ শতাংশ বিন চুরি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিকে মানুষ সেগুলো ভালোভাবেই ব্যবহার শুরু করেছিল। তবে অনেক জায়গায় এই বিনে বাসা-বাড়ির বর্জ্য ফেলা শুরু করে বাসিন্দারা। অন্যদিকে বিনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতেন না পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ফলে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকত বিনের চারপাশে। এর মধ্যে একটি একটি করে চুরি হতে থাকে। কিছু রাস্তা ও ফুটপাত মেরামতের সময় খুলে ফেলা হয়। এভাবে অর্ধেক ওয়েস্ট বিন নাই হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে যথাযথ নিয়ম ও চাহিদার ভিত্তিতেই এসব ওয়েস্ট বিন কেনা হয়েছিল। সম্প্রতি অডিট অধিদপ্তরকে সে জবাব দেওয়া হয়েছে।
তবে অডিট অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, গত মার্চে অডিট আপত্তিতে ওয়েস্ট বিন ক্রয়ের বিষয়ে ডিএসসিসির জবাব চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংস্থাটি কোনো জবাব দেয়নি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় আপত্তি সঠিক ছিল। তারপর যদি তারা যথাযথ কারণ দেখাতে পারে তা হলে বিষয়টি মীমাংসা হতে পারে।
ডিএনসিসি
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ডিএসসিসির বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় পাঁচ হাজার ওয়েস্ট বিন স্থাপন করা হয়েছিল। এখন কটি বিন আছে, তার পরিসংখ্যান দিতে পারেনি ডিএনসিসি। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে নগরের ফুটপাতগুলোয় টাইলস বসানোর সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অর্ধেকের বেশি ওয়েস্ট বিন উপড়ে ফেলেছে। এসব বিন মানুষ তেমন ব্যবহার করে না বলে সেগুলো পুনঃস্থাপনের তেমন উদ্যোগ নেই।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ওয়েস্ট বিন কেনার বিষয়ে অডিট অধিদপ্তরের কোনো আপত্তি তাঁরা পাননি।

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1539396