ভারি বর্ষণে মঙ্গলবার তলিয়ে যায় চট্টগ্রামের নিচু এলাকা। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। আগ্রাবাদ সিডিএ এক নম্বর এলাকার
২৫ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ১২:২২

টানা বৃষ্টিতে অর্ধেক এলাকা পানির নিচে

বন্দরনগরীর রাস্তায় ডিঙিতে যাতায়াত

টানা বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অর্ধেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নগরীর জনজীবন এক প্রকার থমকে যায়। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিসে উপস্থিতি ছিল কম। নিচু এলাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। রাস্তা দিয়ে নৌকা চলাচল করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে লাল ডিঙিতে চড়ে চলাচল করেছেন কর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

চট্টগ্রামে সোমবার রাতে থেমে থেমে আবার কখনও মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এই বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয় পাহাড়ি ঢল আর জোয়ারের পানি। কাপ্তাই হৃদের পানিও কর্ণফুলী নদীতে যোগ হয়ে নগরীতে প্রবেশ করে। এতে ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে বহদ্দারহাট মোড়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র প্রবর্তক মোড়, সিডিএ আবাসিক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া প্রধান পাইকারি বাণিজ্য কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, স্টেশন রোডের ফলের আড়ত পর্যন্ত শুধু পানি আর পানি। অথই পানিতে কোথাও কোথাও সড়কে গাড়ির পরিবর্তে নৌকায় লোকজন যাতায়াত করেছে। কোথাও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলা হাঁটুপানিতে ডুবে যাওয়ায় রোগী ও স্বজনরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এ দুর্ভোগের চিত্র কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ দেন। প্রশ্ন তোলেন এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে কখন।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জানান, বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকবে। তবে নদী বা সমুদ্রবন্দরগুলোয় কোনো সতর্কসংকেত নেই। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা

কুতুবুদ্দিন হাসান নূরী ফেসবুকে লাইভ দেন। মুরাদপুরের শিক্ষা বোর্ডের সামনে হাঁটুপানির চিত্র ধরা পড়ে তার লাইভে। পানির কারণে বোর্ডের কর্মকর্তারা জরুরি কাজে অফিস থেকে বের হতে পারেননি। তবে বোর্ডের সামনের মাঠে হাঁটুপানি থাকলেও মূল সড়কে ছিল কোমরপানি। নগরীর সঙ্গে দক্ষিণাংশ ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে অথই পানির স্রোত থাকায় যানবাহন চলাচল ছিল না বললেই চলে। পানিতে রিকশা ও ভ্যানে করে নাগরিকরা কোনোভাবে চলাচল করেছেন। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কর কার্যালয় প্রাঙ্গণে বৃষ্টি ছাড়াও অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারেও পানি ওঠে। সোমবার রাত ও মঙ্গলবার দিনের মুষলধারার বৃষ্টির পানির সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হয়ে অথই পানিতে তলিয়ে যায় এই আবাসিক এলাকা। কর কার্যালয়ের লোকজন যাতায়াতের জন্য আগেই ডিঙি কিনে রাখেন। মঙ্গলবার দুপুরে এ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাল ডিঙিতে চড়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
স্টেশন রোডের ফল ব্যবসায়ী শহীদুল আলম জানান, নালার পানিতে তাদের আড়ত সয়লাব হয়ে গেছে। রাতভর বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানি আড়তে প্রবেশ করায় লাখ লাখ টাকার ফল নষ্ট হয়েছে। নিচতলার অনেক দোকানপাটে ময়লা-আবর্জনাভর্তি দূষিত পানি প্রবেশ করেছে। চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীরা তাদের ফল রক্ষা করতে পারেননি।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদ যুগান্তরকে জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই হাসপাতালের নিচতলায় পানি প্রবেশ করে। মঙ্গলবারও পুরো হাসপাতালের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে রোগী, স্বজন ও চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। চট্টগ্রামের অন্যতম পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়েও বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। দোকান ও আড়তে পানি প্রবেশ করায় লাখ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র প্রবর্তক মোড়ে রাস্তার ওপর দিয়ে কোমরপানি প্রবাহিত হয়। এ সড়কে যানবাহন চলেনি। রিকশা ও ভ্যানে করে জরুরি কাজে নগরবাসীকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া নগরীর অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/73752