টানা বর্ষণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ
২৫ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ১২:২০

নগরজুড়ে অসহনীয় ভোগান্তি

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ব্যাপক যানজটের পাশাপাশি যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। স্কুলশিক্ষার্থী থেকে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষের ভোগান্তির মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। অনেক স্থানে পথচারীদের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের এগিয়ে আসতে দেখা যায়। এ ছাড়া নৌকা নামানো হয় কোথাও কোথাও।
সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। ফলাফল নগরজীবনে ভোগান্তি। আর ভারী বৃষ্টিপাত হলে তো কথাই নেই। ভোগান্তির তখন অসহনীয় মাত্রায় চলে যায়। গতকাল মঙ্গলবারও সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটল। নগরজীবনে নেমে এলো সীমাহীন ভোগান্তি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিমিটার। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বিরাজ করায় ও বাংলাদেশের ওপর মওসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার প্রভাবে গত সোমবারও রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আবহাওয়া অফিস আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টিপাতের। এ জন্য সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় বৃষ্টি। কখনো মুষল ধারায়, কখনো গুঁড়িগুঁড়ি। সারা দিনই ছিল এ চিত্র।

এ বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় ব্যাপক জলাবদ্ধতা। নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসীর জীবনে নেমে আসে তীব্র ভোগান্তি। বিশেষ করে শেরেবাংলানগর থেকে পল্লবী পর্যন্ত সড়কে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এ পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কালসী পর্যন্ত সড়ক পুরোটাই পানির নিচে চলে যায়। ফলে যানবাহনগুলো আর এগোতে পারেনি। দুপুর থেকেই ওই সড়কে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে গভীর রাত হয়ে যায়। কালসী রোডের প্রায় পুরোটাই পানির নিচে চলে যায়।
বৃষ্টিপাতের কারণে পানি জমে রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় লেগে যায় তীব্র যানজট। অনেক স্থানে সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। অনেক স্থানে পানির ভেতরে থাকা ম্যানহোলে নগরবাসী পড়ে গিয়ে জীবন সংহারের ঝুঁকিতে পড়েন। অনেক স্থানে রিকশা উল্টে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যান যাত্রী। অনেক এলাকার পানির সাথে স্যুয়ারেজের লাইনের বর্জ্য যুক্ত হয়ে যাওয়ায় সেসব এলাকায় দুঃসহ অবস্থা তৈরি হয়। এরই মধ্যে ময়লাপানিতে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার দৃশ্যও দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে কোনো কোনো সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেন। বিকেলে জাতীয় প্রেস কাব, শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন বাস স্টপেজে দেখা যায় ঘরমুখী অসংখ্য মানুষের বাসের জন্য অপো। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতেও। প্রায় সব রুটেই যাত্রীদেরই গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনগুলোকে স্থবির হয়ে থাকতে দেখা যায়। অগত্যা যানজটে ধৈর্যহারা হয়ে অপেমাণ অনেক যাত্রী হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। নারী-শিশুদের পড়তে হয় মহাযন্ত্রণায়।
মুষলধারায় বৃষ্টির পরপরই রাজধানীর ঝিগাতলা, ট্যানারি মোড়, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, মানিক মিয়া এভিনিউ, কাকরাইল, বাড্ডা, কুড়িল, ভাটারা, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, বংশাল, আজিমপুর, লালবাগ, কমলাপুর, বাসাবো, মুগদাপাড়া, জুরাইনসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব এলাকার প্রতিটি সড়কে লেগে যায় তীব্র যানজট। অনেক স্থানে ম্যানহোলে চাকা ঢুকে রিকশা উল্টে গিয়ে যাত্রী আহত হন। কাঁচাবাজারগুলোয় তৈরি হয় উৎকট দৃশ্য।
ঢাকা ওয়াসা জানায়, প্রতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পানি নিষ্কাশনের মতা বর্তমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় রয়েছে। এর চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই জলজট তৈরি হয়। হঠাৎ ভারী বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের ক্যাসপিডগুলোর মুখে রাস্তার আবর্জনাগুলো আটকে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে গতকালও ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের লোকজন মাঠে নেমেছিল। এ জন্য দ্রুতই পানি সরে যায়।

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টির কারণে গতকাল রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গুলশান, নিকেতন, শান্তিনগর, মালিবাগ, গুলিস্তান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। এসব এলাকার বেশির ভাগ ট্রাফিক পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হয়।
মতিঝিল থেকে পল্লবী পৌঁছতে পুরো চার ঘণ্টা লেগেছে বলে জানান আব্দুর রহমান নামে এক যাত্রী। অন্যান্য দিন তিনি এ দূরত্ব এক থেকে দেড় ঘণ্টায় চলে যান।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, মওসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের সর্বত্রই বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিন কমবেশি বৃষ্টি থাকবে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে।
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সীতাকুণ্ডে ২৪০ মিলিমিটার
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২৪০ মিলিমিটার। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২১০ মিলিমিটার। আগের ১২ ঘণ্টায় ছিল ৩০ মিলিমিটার। দেশের আট বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগেই সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে মোট ১২ স্টেশনে ৩৭ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিমিটার; কিন্তু পূর্ববর্তী ১২ ঘণ্টার সাথে এটা যোগ করলে ঢাকায় মোট বৃষ্টির পরিমাণ ৭৯ মিলিমিটার ছিল।

বৃষ্টিপাতের কারণে সারা দেশে তাপমাত্রাও বেশ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। গতকাল সারা দেশেই ২৪ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কারণ গতকাল যশোরে সারা দিন এক মিলিমিটার বৃষ্টিও হয়নি। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুসারে যশোর ছাড়াও সাতক্ষীরা ও ভোলায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি গতকাল।
আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছেÑ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/335884