২৫ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ১২:১৮

দেশে বেকারত্ব মহামারিতে রূপ নিয়েছে

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। গোটা শিল্পব্যবস্থা সংকীর্ণতর হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদন-(জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। এখন এদেশের শিক্ষিত তরুণ আর মান সম্পন্ন কাজ নয়, কোনো রকমে একটা কাজ চায়। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগে বন্ধ্যাত্বের কারণে সে আশায়ও গুড়ে বালি। প্রতিবছর হু হু করে বেকারত্ব বাড়লেও সরকার এ সংখ্যা নিয়েও লুকোচুরি খেলছে। সরকার কর্মসংস্থানের যে গোজামিলের ফিরিস্তি তুলে ধরছে বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই। সকল পরিসংখ্যান বলছে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর ২৬-৩০ লাখ যুবক প্রবেশ করছে। কিন্তু সরকারি বেসরকারি মিলে চাকরি হচ্ছে মাত্র ২ লাখের মতো। আর সিংহভাগই থেকে যাচ্ছে বেকার। দেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কর্মসংস্থানের অভাব ও চাহিদানুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় ¯œাতক ও স্নাতকোত্তর পাস অর্ধেকই বেকার থেকে যাচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। কর্মসংস্থানে পোশাক শিল্প বরাবর বড় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হলেও বিনিয়োগ পরিবেশ ভাল না থাকার কারণে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না, বরং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এর ফলে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। সরকারি খাতে অল্প কিছু চাকরি হলেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতায় বেকারত্ব মহামারিতে রূপ নিয়েছে। সরকার দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বেকারত্বের গ্লানি নিয়ে হতাশার জীবন কাটাচ্ছে শিক্ষিত যুবকরা।

জানা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই কর্মসংস্থানের স্থবিরতা নেমে আসে। এর আগে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা পালন করে আসছিল বেসরকারি খাত। কিন্তু বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারায় বেসরকারি খাতে তেমন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে বিগত দশ বছর ধরে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ জিডিপি’র ২২/২৩ শতাংশে আটকে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজার বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সামষ্টিক কর্মকৌশল প্রণয়নের বিকল্প নেই। শিক্ষিত মানুষের বেকারত্ব আসলে সম্পদের অপচয়। দেশের তারুণ্যের এক তৃতীয়াংশ কর্মহীন। ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ১৮.৮ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি। বছরে ৩০ লাখ যুবকের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, সেটা চাকরি কিংবা ব্যবসা যাই হোক না কেন। তারা বলেন, গোটা শিল্পব্যবস্থা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কর্মসংস্থান তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। দেশে বিদেশে রোড- শো হয়, কিন্তু এসব শোতে যেতে আসতে যে খরচ হয় সেই প্লেন ভাড়া উঠে কিনা তারও জবাবদিহিতা নেই।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কর্মসংস্থান বাড়লেও ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এর হার নেমে এসেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশে। বর্তমানে এ হার আরও নিচে নেমেছে। পোশাক খাতে নতুন নিয়োগ কার্যত বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কর্মরত আছেন। শ্রমজীবী তিন নারীর মধ্যে অন্তত একজন কাজ করেন বিনা পারিশ্রমিকে।
জানা যায়, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম ৪ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষ বেকার হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরো বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করে মাত্র ২৬ লাখ বেকার দেখিয়েছে। অথচ ওই সংজ্ঞা অনুযায়ীই দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ কর্মে যুক্ত নয়। কর্মক্ষম হয়েও যারা কর্মে যুক্ত নয়, তাদের বেকার না দেখানো কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর বেকারের যে হিসাব, তার মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি। এখন এদেশের শিক্ষিত তরুণ আর মান সম্পন্ন কাজ নয়, কোন রকমে একটা কাজ চায়। বেসরকারি বিনিয়োগে বন্ধ্যাত্ব এটা স্থবির অবস্থা সৃষ্টি করেছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, দেশে এমনিতেই ৪ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বেকার, তার ওপর বর্তমানে কর্মসংস্থান সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। সরকারের শীর্ষমহল ও শ্রম-শিল্প-কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিনিয়োগ পরিস্থিতি মন্দা হওয়ার কারণে নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে না। আর বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প-কারখানা গড়ে না উঠলে কাঙ্খিত কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। কারণ মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশেরই জোগানদাতা বেসরকারি খাত হলেও বিনিয়োগ না থাকায় এ খাতে বর্তমানে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না বললেই চলে। শীর্ষস্থানীয় ৮০ জন ব্যবসায়ীর মতামতের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেকারত্ব কমানো দরকার দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে। মানুষ বেকার থাকলে পরিসংখ্যানে সেটা কম দেখালে লাভের বদলে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ দেড় বছরে ১৪ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, এমনকি তাদের হিসাবে মোট বেকারের ৩৫ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর একটি চাকরির বিজ্ঞাপনের বিপরীতে যে হারে উচ্চশিক্ষিতরাও আবেদন করেন, তাতে এ দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের শীর্ষ মহলের উচিত এসব বিষয় খতিয়ে দেখা। বেকারত্ব দেখানোর জন্য আইএলও’র সংজ্ঞার কাছে যেতে হবে না, সবাই খালি চোখেই পরিস্থিতি বিচার করতে পারবে।
দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকহারে বেড়ে গেছে। ইকোনমিস্ট এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর ২৬-৩০ লাখ যুবক প্রবেশ করে। সরকার প্রতি বছর নিয়ম করে কিছু চাকরির ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিপুল চাহিদার বড় অংশই প্রত্যাশা করে বেসরকারি খাতের কাছে। কিন্তু বিনিয়োগ না থাকায় সে পথ বন্ধ। শুধু চাকরি নয়, আত্মনির্ভর হতে গেলে ব্যবসা করতে হবে। ব্যবসায়ের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকায় সব শ্রেণির বেকার ব্যবসায়ে আগ্রহী হয় না। তাছাড়া ব্যবসায়ের জন্য পুঁজির প্রয়োজন যা ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায় না। স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীদের পক্ষে অর্থায়নের ব্যাংকের জটিল সব চাহিদা, অবকাঠামো সুবিধার জন্য দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা মহা বিড়ম্বনা। ফলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠী চাকরির প্রতি তাই বেশি আগ্রহী। কিন্তু প্রতিবছরই কমছে সেই সুযোগ।

চলতি বছরের মার্চে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্কিলস ফর টুমোরোস জবস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের কলেজগুলো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ৭০ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং প্রতি বছর ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থানে প্রবেশ করতে পারছে পাঁচ লাখের কিছু বেশি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ কর্তৃক প্রকাশিত ‘কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার পর্যালোচনা ২০১৭’ শীর্ষক সমীক্ষা মতে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের (অনার্স-মাস্টার্স) মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এ হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এক পরিস্যংখানে বলা হয় ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের জুন প্রর্যন্ত গত দেড় বছরে বঙ্গোপসাগর রুট ব্যবহার করে শিক্ষিত যুবকসহ মানব পাচার হয়েছে প্রায় ১ লাখ। এর মধ্যে সহস্রাধিক সাগর বক্ষে মৃত্যুবরণ করেছে। জনসংখ্যার ক্রমাগত বিস্ফোরণ এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দিন দিন বেকার সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে চাহিদাবিধির বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। তারা এক পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেন, বর্তমানে দেশের ৩০ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী কলা ও মানবিক শাখায় অধ্যয়নরত। তবে এ শাখার বাজার চাহিদা ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। তাহলে বাড়তি ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার সমস্যার কারণ হবে। অন্যদিকে ব্যবসা শিক্ষা শাখায় চাহিদা ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ থাকলেও এ খাতে উৎপাদন ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বিজ্ঞান শাখায় চাহিদা ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ; কিন্তু জোগান মাত্র ৮ শতাংশ। চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখায় চাহিদা ১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে জোগান শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। জোগান ও চাহিদাবিধির এমন অসামঞ্জস্য বেকার সমস্যাকে আরো উচকে দিচ্ছে। তারা বলছেন, কারিগরি শিক্ষায় উন্নতি করা সম্ভব হলে দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর ব্যবহার যেমন নিশ্চিত করা যাবে, তেমনি চাহিদার আলোকে দেশে ও বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদের জোগান দিয়ে বেকার সমস্যা সমাধান সম্ভব। বেকার সমস্যার সমাধান করতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখছি বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেড়েছে প্রবৃদ্ধির হার। আবার কৃষি কাজের জন্যে লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সবমিলে আমার কাছে ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুহিত বলেন, দেশে একটা বড় ধরণের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে (জবলেস গ্রোথ) কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বলেন, প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে আটকে থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অতিক্রম করে। এরপর গত দুই অর্থবছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাও সরকারি বিনিয়োগের কারণে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ গত তিন বছর ধরে প্রায় একই জায়গাতে স্থবির। তাহলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে বেসরকারি ঋণপ্রবাহ যে বাড়ছে, সেই অর্থ কোথায় যাচ্ছে। আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

ইউজিসির তথ্য মতে, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবেশি ২৯ লাখ। এর বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাড়ে তিন লাখের মতো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৮২ জন। ওই বছর ৭৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে ৬৫ হাজার ৩৬০ জন। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩০২ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছে। এর বাইরে পাশ করতে পারেনি বা ঝরে গেছে এমন শিক্ষার্থী সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা সম্পন্ন করেছে আরও কয়েক লাখ যুবক। কিন্তু এদের মধ্যে চাকরি হয়েছে হাতে গোনা কিছু যুবকের। একইভাবে প্রতি বছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন, অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারপ্রেস নেটওয়ার্ক, আইপিএনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রায় ২৭ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসে। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারিভাবে কাজ পায় মাত্র ২ লাখ মানুষ। ফলে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার থাকছে। ২০১৫ সালে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলিয়ে মোট ৫০ হাজার ৪৭৩ জনের চাকরি হয়েছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এর আগের ৫ অর্থবছরে সরকারি খাতে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে মোট নিয়োগ পেয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৭৫ জন।

বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য মতে, দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৫ অনুযায়ী, গেল ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এই দুই বছরে মাত্র ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে মাত্র ৩ লাখ মানুষ চাকরি বা কাজ পেয়েছেন। এর ফলে প্রতি বছর বেকার হচ্ছে প্রায় ২৪ লাখ মানুষ। সেই হিসাবে দুই বছরে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। বিগত বছরগুলোতেও তেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি সরকার। বিনিয়োগ না হওয়ায় বেসরকারি খাতেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, কাজের সুযোগ না পেয়ে অসংখ্য বেকার যুবক হতাশা থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। হতাশা থেকে আত্মহননের পথও অনেকে বেছে নিচ্ছেন। একই কারণে নিকটাত্মীয়কে হত্যা করার মতো ঘটনাও এই সমাজে ঘটছে। শিক্ষিত যুবকদের অনেকেই হতাশা থেকে মাদকের সংস্পর্শে আসছেন। এই সুযোগে মাদক বাণিজ্যসহ অনেক বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আয় রোজগারের পথ খুঁজছেন।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। বর্তমান চাকরির বাজারে যোগ্যতা ও দক্ষতা খুবই কম। তাদের সনদ অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। এ কারণে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।

http://www.dailysangram.com/post/339146