২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৫:০০

খুলনায় ভবন নির্মাণে কোটি টাকা আত্মসাৎ

জেলা আইনজীবী সমিতির সভা আজ

জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য নির্মিত ভবনে ১ কোটি ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৫০ টাকার ভুয়া ভাউচার দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আইনজীবী সমিতি আজ বেলা ২টায় সাধারণ সভা আহবান করেছে। সাধারণ সভায় একটিই আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হলেও শর্ত ভঙ্গ করে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজ দায়িত্বে নির্মাণ কাজ তদারকি করেন। এ ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৩ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ১১ জুন এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন বারের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ কমিটির কর্মকর্তারা হচ্ছেন- আহ্বায়ক এসএম মঞ্জুরুল আলম, সদস্যরা, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আবদুল মালেক, চিশতি সোহরাব হোসেন শিকদার ও এমএম মুজিবর রহমান। তদন্ত কমিটি ছয় মাস বিভিন্ন ভাউচার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসকে ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ঠিকাদার নির্মাণ কাজ না করায় ২০১৭ সালে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল নিজের তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণ কাজ শেষ করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইট, সিমেন্ট, বালি, পাথর, রড, পাইলিং, টাইলস, গ্রিল, কাঠ, রঙমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রি’র মজুরির ভাউচার বাস্তবতাবিহীন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের টাকা খরচের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা যায়। ভবনের কাজে প্রকৌশলীর পরামর্শ নেওয়া হয়নি। লিফট ক্রয়ে ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। লিফট ক্রয়ে সরকারি অনুদানের ব্যয়ের শর্তগুলো ভঙ্গ করা হয়েছে। পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ তলা নির্মাণে ভাউচারগুলো নিরীক্ষার পর প্রমাণিত হয়েছে অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়। শনি পূজা বাবদ জনৈক লিলা রানী সাহাকে ২ হাজার টাকা অনুদান, আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সম্মেলনে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান বাবদ ১২ হাজার টাকা অনুদান, জেলা ও দায়রা জজের চিকিৎসা বাবদ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেখানো হয়েছে। সদ্য বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) হওয়া জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আনোয়ার সীমাহীন নির্লিপ্তভাবে সব আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির কাছে কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ভুয়া ভাউচার প্রমাণিত হওয়ায় আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে ১৩ ও ২৪ মে হাজির হওয়ার জন্য দু’দফা চিঠি দেয়া হয়। ৩ জুন অডিট কমিটির সামনে হাজির হয়ে কমিটির সদস্য এমএম মুজিবর রহমানের জিজ্ঞাসাবাদে বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল স্বীকার করেন ভবন নির্মাণে এসকে ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হলেও তারা কাজ না করায় তিনি নিজে এ দায়িত্ব পালন করেন। অনিয়মতান্ত্রিক ব্যয়ের অভিযোগ সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু রোববার যুগান্তরকে জানান, চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ৬৫ পাতার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আজকের সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে বারের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলুন। সোমবার বারের মিটিং আছে। মিটিংয়ের পর সব জানতে পারবেন। আমার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার হয়েছে।’ এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল ও তার স্ত্রী শ্রীমতী ডলি বাছাড়ের নামে ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, এর সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের সম্পর্ক কী? উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের কমিটিতে সরদার আনিসুর রহমান পপলু সভাপতি ও বিজন কৃষ্ণ মণ্ডল সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ সম্পাদক গভর্মেন্ট প্লিডারের (জিপি) দায়িত্ব পালন করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/72945