২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৪:৫৩

ডিএসসিসির দখলে রেলওয়ের জমি

যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ রেলওয়ের; ডিএসসিসি বলছে জমি বরাদ্দ দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

রেলওয়ের জমিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মানিকনগর ভবন (১৫ তলা) নির্মাণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একই সঙ্গে এই সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে বিতর্কিত জমিটি বুঝিয়ে দিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ডিএনসিসি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ের জমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিভাবে বুঝিয়ে দেবে বিষয়টি বোধগম্য নয়।

রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) মো: মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে গত ১১ জুলাই একটি চিঠি দেন। এতে তিনি কমলাপুর স্টেডিয়ামের দক্ষিণপাশে মালিবাগ সায়েদাবাদ মহাসড়কের পূর্বপাশে রেলওয়ের ব্রাহ্মণচিরণ মৌজায় ২ দশমিক ৪২ একর জমি অবৈধ দখল করে মানিকনগর ডিএনসিসি ভবন নির্মাণ বন্ধ করার অনুরোধ করেন। চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মানিকনগর ডিএনসিসি ভবন (১৫ তলা) নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

গত ১১ জুলাই ওই এলাকায় ডিএনসিসি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং রেলের ভূমি দখল করে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিএনসিসিকে ২ দশমিক ৪২ একর ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে জমিটিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করতে ডিএনসিসিকে অনুরোধ করে। চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য অধিগ্রহণকৃত ও রেকর্ডকৃত সম্পত্তি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিএনসিসিকে বরাদ্দ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

চিঠিতে রেলওয়ে আরো উল্লেখ করেছে, রেলওয়ের ১৬/৫৯-৬০ নম্বর এলএ কেইসমূলে ব্রাহ্মণচিরণ মৌজায় সিএস ১৩০ ও ১৩১ নম্বর দাগের ভূমিসহ অন্যান্য মৌজা ও দাগে ৩২.৫০৩৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ মহানগর জরিপে জমিগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের নামে রেডর্কভুক্ত হয়েছে। ডিএনসিসি কর্তৃক ব্রাহ্মণচিরণ মৌজার ১৩০ ও ১৩১ দাগে উচ্ছেদকৃত ২ দশমিক ৪২ একর জমি শেরে বাংলা মার্কেট দোকানদার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনুকূলে বিক্রি করা হয়েছে। ওই সমিতি রেলওয়েকে ১৮ কোটি ২৪ লাখ ২৪১ টাকা পরিশোধ করেছে। তবে সমিতির অনুকূলে ওই জমির রেজিস্ট্রেশন বা দখল হস্তান্তর করা হয়নি। রেলওয়ে এবং শেরে বাংলা মার্কেট দোকানদার বহুমুখী সমবায় সমিতির মধ্যে ভূমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি রিভিউ মামলা চলমান আছে। এ ছাড়াও শেরে বাংলা মার্কেট দোকানদার বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্তৃক হাইকোর্টে একটি কনটেম্পট পিটিশন রয়েছে।

এদিকে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) আব্দুল মালেক গত ৯ জুলাই র্যাব মহাপরিচালক বরাবর প্রেরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, ব্রাহ্মণচিরণ মৌজার সিএস ১৩০ ও ১৩১ দাগের ২ দশমিক ৪২ একর ভূমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা জমির দখল নিতে গত ১১ জুলাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক র্যাব ফোর্স মোতায়েনের অনুরোধ করেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী নয়া দিগন্তকে বলেন, মানিকনগর ডিএনসিসি ভবন নির্মাণের জন্য যেখানে জমি নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল গণপূর্তের ওপর। গণপূর্ত তা বরাদ্দ দিতে পারে না। তিনি বলেন, রেলওয়ের এই জমিটি একটি সমবায় সমিতির কাছে বিক্রি করলেও তারা যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ করেনি বলে তাদেরকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ওই সমিতি একটি মামলা করেছে যা এখনো আদালতে চলমান। এই জমি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেকের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শেরে বাংলা মার্কেটের দোকানদার সমবায় সমিতির এক নেতা বলেন, তারা জমিটি নিয়ম মোতাবেক মূল্য পরিশোধ করে রেলওয়ে থেকে ক্রয় করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পরে ঝামেলা হলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হন। এই অবস্থায় জমিটি অন্য কোনো মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/335288