২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:৩২

বিদেশে ও জেলে থাকা সন্ত্রাসীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে আন্ডারওয়ার্ল্ড

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীদের তথ্য

বিদেশে ও জেলখানায় অবস্থান করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে অপরাধীরা। খুন-জখম, অন্যের জমি দখল, চাঁদাবাজি এখনো তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের নির্দেশনা তামিল করছে ঢাকায় থাকা সহযোগীরা। সম্প্রতি কয়েকটি খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীদের দেয়া তথ্যে এসব উঠে এসেছে।

গত ১৫ জুন বাড্ডার আলীর মোড় এলাকায় জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাড্ডা থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পাঁচজনকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতারের পর জানতে পারে ঘটনার দিন সকালে উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে একত্রিত হয় অমিত, নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদ। অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেয়। ব্যাকআপ হিসেবে সাদকে নিয়ে আলাদাভাবে অবস্থান নেয় অমিত। আর সুজন নামের অপর এক সন্ত্রাসী তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করে। গত ৪ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম শুটার নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত। অস্ত্র সরবরাহকারী সুজন হলো বিদেশে অবস্থানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজানের ভাই। বিদেশে বসেই শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিক এ হত্যার নির্দেশ দেয়। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বিদেশে অবস্থান করেই ঢাকার রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতের বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি করছে এসব সন্ত্রাসী। তাদের অনেককে হত্যার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে।
বাড্ডার ঘাতক স্বপন নামের আরেক সন্ত্রাসী অবস্থান করছে মালয়েশিয়ায়। গত এপ্রিলে রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী ‘সি’ ব্লকের ৭ নম্বর রোডে কুপিয়ে আহত করা হয় আশিকুল ইসলাম রিমন নামের এক যুবলীগ নেতাকে। রিমন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক। জানা গেছে, বিদেশে অবস্থানকারী স্বপনের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে। ১০ বছর ধরে স্বপন মালয়েশিয়ায় থাকে। সেখানে বসেই রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ করে। ঢাকায় তার রয়েছে অর্ধশত সহযোগী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভাগনে জাহাঙ্গীর, বিপ্লব, তোতা, বাবুল, জাকির, মোল্লা শাকিব ও সাগর। স্বপনের বিরুদ্ধে খুন, মাদক ও অস্ত্র আইনের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, স্বপনের আস্তানার চার দিক ঘিরে সিসি ক্যামেরা বসানো। মালয়েশিয়ায় বসে স্বপন ওই সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যেভাবে তার বাহিনীর লোকজনের কর্মকাণ্ড মনিটর করে, তেমনি তার আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছে কি না তাও মনিটর করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার যেসব সন্ত্রাসী দেশের বাইরে অবস্থান করছে তার মধ্যে ভারতেই অবস্থান করছে ৪৩ জন। এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন মুর্শিদাবাদে রয়েছে। আটটি হত্যাসহ ১৬ মামলার আসামি শাহাদাতের নামে মিরপুরসহ সারা ঢাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে। মগবাজার-রমনা এলাকায় চাঁদাবাজি হচ্ছে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ওরফে নয়াটোলার জিসানের নামে। তার বিরুদ্ধে আট হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। কিছু দিন আগে সে দুবাইয়ে ছিল। সেখানে তার নিজের ফ্ল্যাটও রয়েছে।

আশিক নামের আরেক সন্ত্রাসীর অবস্থান ভারতে। তার নামে চাঁদাবাজি চলছে ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজার এলাকায়। পাঁচটি হত্যাসহ ১৬টি মামলার আসামি আশিক ভারতে সৌমেন খান হিসেবে ছদ্মনামে পরিচিত বলে জানা গেছে। ভারতে তার সাথে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের আরেক সন্ত্রাসী সেলিম। সম্প্রতি একটি সূত্র বলেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়ের বর্তমান অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়। বাড়ি কিনে সেখানেই কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছে এ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ আটটি অভিযোগ রয়েছে। আটটি হত্যাসহ ২৪ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেন ভারতেই রয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় তার নামেই চাঁদাবাজি চলছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। ঢাকার বাইরেরও অনেক সন্ত্রাসী ভারতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন আনুর অবস্থান কলকাতার গোবিন্দপুরে। রাজবাড়ীর শীর্ষ সন্ত্রাসী অমল কৃষ্ণ মণ্ডলের অবস্থান কলকাতার বনগাঁওয়ে। হত্যাসহ ৩০টি মামলার আসামি সুব্রত বাইন কলকাতায় বন্দী রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১২ সালে নেপালের জেল ভেঙে পালানোর পর ওই বছরেরই ২৭ নভেম্বর কলকাতা পুলিশের হাতে সে গ্রেফতার হয়। আনিসুর রহমান ওরফে ফিঙ্গে লিটন, আমিনুল ইসলাম মুকুল, শাহীন সিকদার, তৌফিকুল আলম খান ওরফে পিয়াল, মামুনুর রশীদ মামুন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ ও শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীমসহ অনেকেই ভারতে অবস্থান করে এখনো রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত আসামি ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলের অবস্থান বর্তমানে আমেরিকায়। শীর্ষ সন্ত্রাসী কচি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে বসেই পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ, শ্যামপুর আশিরনগেট ও আশপাশ এলাকার চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/335005