২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:২৫

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে আবারো ২০ ভাগ কোটা পাচ্ছেন

এবারই শেষ সুযোগ

টানা সপ্তমবারের মতো পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সুবিধা পাচ্ছেন; অর্থাৎ তারা আরো এক বছর এই কোটা সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাবেন। তবে এরপর এ সুবিধার মেয়াদ কোনোক্রমে আর বাড়ানো হবে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এবারই শেষ, এরপর আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না। অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণার ফলে শেষবারের মতো আগামী ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) ২০ শতাংশ কোটা সুবিধা পাবেন। এর ফলে মার্জিন ঋণ হিসাব ও নন-মার্জিন হিসাবের (বিও) ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা সব পাবলিক ইস্যুতে কোটা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আবেদনের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আগামী বছর পর্যন্ত এ সময়সীমা বাড়িয়েছেন। বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ ধসের কারণে ১৭ লাখেরও বেশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র মতে, পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিকতা রোধ, স্থিতিশীলতা আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্কিম গঠনের নির্দেশ দেন। স্কিম গঠনে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ব্যবস্থাপনার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রণোদনা স্কিমের সুপারিশ করে। সুপারিশের আলোকে সরকার স্কিম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। প্রণোদনা স্কিমে অন্যান্য সুপারিশের সাথে চিহ্নিত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইস্যুকৃত সব পাবলিক ইস্যুতে ২০ শতাংশ কোটা সুবিধা রাখা হয়। এর পর থেকে টালমাটাল পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে এর সময়সীমা সর্বমোট ছয়বার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে এর সময়সীমা শেষ হলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আবারো এটি বাড়ানোর আবেদন করে। বিএসইসি অর্থমন্ত্রীর কাছে লেখা আবেদনে জানিয়েছে, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এর মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আরো একবার সময় বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি মাসের ১২ তারিখ তিনি বিষয়টি অনুমোদন করেন। তবে ১২ তারিখে অনুমোদন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য এ সুবিধা ১ জুলাই থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে অর্থমন্ত্রী এ সুবিধা আর বহাল রাখতে চাচ্ছেন না। তিনি চাচ্ছেন, এবারই যেন শেষবারের মতো এ সুবিধা দেয়া হয়। এক নোটে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এর পরে এ সময়সীমা আর বাড়াব না’। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এর আগে ২০১৬ সালেও তিনি বিএসইসির আবেদনের প্রেক্ষিতে লিখেছিলেন, ‘এবারেই শেষ সময় বৃদ্ধি হবে।’ তার পরও তিনি এর সময়সীমা বৃদ্ধি করেছিলেন।

এর আগে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দেয়ার জন্য ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে একটি স্কিম কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অর্থমন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া স্কিম কমিটির একটি খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলÑ শেয়ারবাজারে যেসব ব্যক্তির নিজস্ব বিনিয়োগ সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ছিল তারাই ছিল ুদ্র বিনিয়োগকারী। এসব বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৮৪ হাজার। এরাই মূলত শেয়ারবাজার ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এ সময়কালে এসব বিনিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। শেয়ারবাজার ধসের কারণে তাদের ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর ঋণ করার কারণে তাদের ঋণের সুদই হয়েছে ২ হাজার ৬২৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/335011