২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১০

উচ্চ আদালতের রায়ের খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ওয়াদা থেকে সরকারের ব্যাকআউট

কোটা সংস্কার নিয়ে এই সরকার অযথা পানি ঘোলা করছে। একটা সহজ সরল বিষয়কে অনাবশ্যক ভাবে জটিল করা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন যে, কোটা সংস্কার প্রশ্নে সরকার সম্পূর্ণ ইউটার্ন করেছে। গত বুধবার রাতে একটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল দেখছিলাম। তাদের রাত এগারোটার টক’শো তে দেখলাম, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কোটা সংস্কার ইস্যুকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। অপর একজন আলোচক যখন বলেন, কোটা আন্দোলন দিনের পর দিন গুরুতর রূপ ধারণ করছে তখন ঐ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভিসি অত্যন্ত দৃঢ়তার এবং আস্থার সাথে বলেন যে, কোটা আন্দোলনের কথা আর বলবেন না। ওটা ফিনিশ হয়ে গেছে। অপর ব্যক্তি বলেন যে দেখুন, এই আন্দোলনে এখন ভার্সিটি ও কলেজের শিক্ষক, বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও অনেক অভিভাবক শামিল হয়েছেন। আগামী দিনে এটি আরও জোরদার হবে। তিনি আগামী দিনের ঝড়ের পূর্বাভাস দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে তারা অনেকক্ষণ তর্ক করেন।

আমি তাদের তর্কের মধ্যে যাবো না। কোটা ইস্যু নিয়ে ঝড় আসবে কিনা সেটাও আমি জানি না। কিন্তু একটি কথা বলতে পারি যে, যতই দিন যাচ্ছে ততই ইস্যুটিকে জটিল করা হচ্ছে। নিত্য নতুন পার্টিকে এর মধ্যে জড়িত করা হচ্ছে। প্রথমে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তারপর সেটি সমস্ত পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ছড়িতে পড়লো। তারপর কিছু সংখ্যক অধ্যাপক এবং অভিভাবক এই ইস্যুতে জড়িতে হলেন। এখন সর্বশেষ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে যে, উচ্চ আদালতের রায়ও এর ভেতরে জড়িত হয়ে গেছে। এখন অনেকেই বলতে চাচ্ছেন যে, সরকার ক্ষোভের বশবর্তী হয়েই হোক আর রাগের বশবর্তী হয়েই হোক, গত ১১ এপ্রিল পার্লামেন্টে ঘোষণা করে যে কোটা ইস্যুর সংস্কার নয়, পুরো কোটাই বাতিল করা হলো।

এমন একটি ঘোষণা দিয়ে সরকার বিপদে পড়ে। অথচ, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করেন তারা এবং যারা হাজারে হাজারে লাখে লাখে এটিকে সমর্থন করেন তারা কিন্তু সমগ্র কোটা ব্যবস্থার বাতিল চাননি। তারা চেয়েছিলেন সংস্কার। কোটা ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাখা হয়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি ও আধা সরকারি যত চাকুরি আছে তার ৩০ শতাংশ পূরণ হবে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের দ্বারা। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর দেখা যাচ্ছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার একটা বড় অংশ খালি থেকে যাচ্ছে। ৪৭ বছর পর ৩০ শতাংশ পূরণ করতে যত জন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান প্রয়োজন হয় তত জন পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার এই সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শুধু মাত্র মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তাদেরকেই অন্তুর্ভূক্ত করেনি, তাদের নাতি পুতিদেরকেও অন্তুর্ভূক্ত করেছে। নাতি পুতিদেরকে ঐ কোটার অন্তর্ভূক্ত করা বেআইনি। এর ফলে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের লঙ্ঘন হয়েছে। তারপরেও কোটা পূরণ করা যাচ্ছে না। সরকার অনাবশ্যক ভাবে এই ইস্যুটির সমাধানে দীর্ঘ সূত্রতার আশ্রয় নিচ্ছে।
এমনিতেই প্রধানমন্ত্রীর ১১ই এপ্রিলের ঘোষণার পর কমিটি গঠন করতে আড়াই মাস সময় নেওয়া হয়েছে। শুধু মাত্র একটি কমিটি করতে এত লম্বা সময় কেন নেওয়া হয়েছে, সেটি কেউ জানেনা এবং সেটির কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবুও যাই হোক, অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে কমিটি করা হয়েছে এবং কমিটির রিপোর্ট দাখিলের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ জুলাই বুধবার ঐ ১৫ দিনের সময় পার হয়ে গেছে। ফলে কমিটিকে ঐ ১৫ দিন ছাড়াও আরো অতিরিক্ত ৯০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান ক্যাবিনেট সেক্রেটারি শফিউল আলম বলেছেন যে, বিষয়টি অনেক জটিল। তাই এসম্পর্কে সরকারের কাছে সুপারিশ করতে সময় লাগবে। একটি সরকার পন্থি পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, একটি বাস্তব সম্মত রিপোর্ট দাখিল করার জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোটা পদ্ধতির ধরণ এবং তাদের কার্য পদ্ধতি জানতে হবে। এসব জানা জানির পর বিদেশের কোটা পদ্ধতির সাথে বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতির যাচাই বাছাই করে একটি রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
॥দুই॥
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, কোটা সংস্কার কমিটি ইতো মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের কোটা পদ্ধতি স্টাডি করেছে। একাধিক পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট মোতাবেক ঐ সব কোনো দেশের সাথেই বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতি মেলে না। এত লম্বা সময় ধরে কোটা কোনো দেশেই চালু নেই। এমনকি যে ভারতের অন্ধ সমর্থক এই সরকার সেই ভারতেও এত বিচিত্র রকমের কোটা পদ্ধতি নাই, এত লম্বা সময়ের জন্য নেই এবং মাত্র একটি গোষ্ঠীর জন্য এত বিরাট পরিমাণ কোটা নেই। সুতরাং তারা কি সুপারিশ করবেন এই নিয়ে তারা চিন্তিত আছেন।
১১ ই এপ্রিল পার্লামেন্টে কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করার ঘোষণা দেওয়ার পর যখন সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছিলো তখনই অনেকে সন্দেহ করছিলেন যে, সরকার সম্ভবত তাদের মূল অবস্থান থেকে সরে গেছে। তারা এখন আর কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের অবস্থানে নাই। তারা কি করবে সেটি সম্ভবত তারা নিজেরাও জানে না। তাই এই অনাবশ্যক বিলম্ব। এই অবস্থান পরিবর্তনকেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার কোটা ইস্যুতে সম্পূর্ণ ইউটার্ন করেছে। এটিকেই বলা হয় ৩৬০ ডিগ্রি অবস্থান পরিবর্তন।

তারা যে তাদের কমিটমেন্ট থেকে ব্যাকআউট করবে সেটা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো। কোনো কমিটি না করে এই বিষয়ে কোনো এ্যাকশন না নিয়ে প্রথমে নুরুল হক নুর এবং রাশেদ সহ কোটা আন্দোলনের ৩ শীর্ষ নেতাকে ডিবি পুলিশ একটি সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয় এবং ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে জেরা করে। তারপর ছাত্রলীগের নেতারা কোনো কারণ ছাড়া কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এভাবে তারা যখন আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভয় ভীতি ছড়াচ্ছিলো তখন কোটা আন্দোলনের নেতারা গত ৩০ জুন সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরির সামনে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য একটি সংবাদ সন্মেলন ডাকে। ঐ সংবাদ সন্মেলন শুরু হওয়ার আগেই সেই স্থানটি ছাত্রলীগের ঝটিকা বাহিনী দখল করে এবং কোটা আন্দোলনের নেতা এবং সমর্থকদের ওপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। এরপরের ঘটনাবলী আপনারা সবই জানেন।
ঢাকা, জাহাঙ্গীর নগর, রাজশাহী, শাহবাগ মোড়,শহীদ মিনার সহ যেখানেই কোটা আন্দোলনের নেতা কর্মীরা সমাবেশ করার চেষ্টা করে, এমনকি কোনো জায়গায় তারা মানব বন্ধন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের লাঠিয়াল বাহিনী সেখান সাড়াশি আক্রমণ চালায়। এসব হামলা ও আক্রমণে কোটা আন্দোলনের প্রায় সমস্ত্র শীর্ষ নেতা এবং তাদের সমর্থক গণ মারাত্মক ভাবে আহত হন। এমনকি কমিটির কেন্দ্রীয় আহবায়ক নুর, যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ, রাজশাহীর যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম সহ অনেককে অমানুষিক ভাবে প্রহার করে। নুর প্রহারের চোটে রক্ত বমি করে এবং তরিকুল ইসলামের পা ও মেরুদ- ভেঙে যায়। তরিকুল ইসলামকে প্রকাশ্য দিবালোকে অনেকের সামনে ছাত্রলীগের ছেলেরা হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। তখন থেকে ছাত্রলীগের নতুন নাম হয়েছে হাতুড়ি লীগ। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো এই যে, ছাত্রলীগ পিটিয়ে জখন করলো কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে । আর নেতারা মার খেয়েও গ্রেফতার হলো এবং গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশ রিমান্ডে গিয়ে আরেক দফা মার খেলো। অথচ, যারা মার দিলো তাদেরকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা তাদের কোনো সমালোচনাও করা হলো না। এমনকি সরকারি দলের নেতারা ছাত্রলীগের নামও মুখে আনছে না। এসব দেখে শুনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক শ্রেণির অধ্যাপক ছাত্রলীগকে গুন্ডা লীগ বলে নতুন নাম দিয়েছেন। সাধারণ ছাত্রদেরকে বিশেষ করে কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে ছাত্রলীগের ধারাবাহিক মারপিটের পর দেশের সচেতন শিক্ষিত মানুষ বুঝে যান যে, সরকার তার কমিটমেন্ট থেকে ব্যাক-আউট করেছে এবং এই ইস্যুতে যাতে আর তারা মাথা তুলতে না পারে তার জন্য তাদেরকে ধারাবাহিক ভাবে পেটানো হচ্ছে।
॥তিন॥
এমন একটি ত্রাসের রাজত্বের পটভূমিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক সর্ব প্রথম বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে হাইকোর্টের একটি রায় রয়েছে। ঐ রায় সুপ্রীম কোর্ট বহাল রেখেছে। এখন যদি এই অবস্থার হেরফের করা হয় তাহলে সেটি আদালতের অবমাননা হবে। তার একথার সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন যে, তিনি এর আগে এই পার্লামেন্টে সরকারি চাকুরির কোটা পদ্ধতি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, এ বিষয়ে হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের আদেশ রয়েছে। সুতরাং এব্যাপারে কিছু করা যাবে না।

প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তির পর শুধু ছাত্র ও অধ্যাপকই নয়, শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ হতভম্ব ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাদের মনে প্রশ্ন আসে যে, যদি উচ্চ আদালতের এই রকম একটি রায় থাকে , তাহলে কোন ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী সমগ্র কোটা পদ্ধতি বাতিল করার ঘোষণা দেন? কারণ এর আগে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের এই ধরনের রায় সম্পর্কে কেউ কিছু বলেন নি এবং কারো কিছু জানাও ছিলো না। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং আগ্রহী বুদ্ধিজীবিরা উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট রায়টির খোঁজ খবর নেন। খোঁজ খবর নেওয়ার পর যে ঘটনাটি বের হয়ে আসে সেটি নি¤œরূপঃ
২০১০ সালে সরকার অ-মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কর্মচারিদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ বছর থেকে বৃদ্ধিকরে ৫৯ বছর করে। এই সরকারি আদেশে মুক্তিযোদ্ধা সরকারি অফিসার ও কর্মচারীদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। তখন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার জামাল ২০১২ সালের শুরুর দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। এই আদেশ দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে কার্যকর হবে বলে সরকারি গেজেটে বলা হয়। জামালের রিট মামলার রায়ে তাদের অবসরের বয়সও বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়। এরপর অ-মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের অবসর গ্রহণের বয়স সীমা আরো এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হলে মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের অবসরের বয়স সীমা ৬০ বছর করার জন্য আবেদন জানায় এবং সরকার সেই আবেদনটি গ্রহণ করেন। কিন্তু অ-মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ক্ষেত্রে এই অর্ডার ২০১০ সাল থেকে কার্যকরী করা হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে সেটি তখন করা হয়নি। তখন মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা পেছনের তারিখ থেকে অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে এই অর্ডার কার্যকর করার আবেদন জানান। এর মধ্যে সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সাথে সাথে তাদের নাতি পুতিদেরকেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা অর্থাৎ ৩০ শতাংশ কোটার অন্তর্ভূক্ত করেন।
হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা যদি পূরণ নাও হয় তাহলে যতটুকু পূরণ হলো না, ততটুকু খালি থাকবে। এব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে অর্থাৎ আপীল বিভাগে আপীল করা হলে তারা এই মর্মে পর্যবেক্ষণ দেন যে কোটার যে অংশ খালি থাকবে সেটি মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে।
॥চার॥
প্রকৃত বিষয় হচ্ছে এই যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ৩০ শতাংশ থাকবে নাকি তার কম বেশি হবে এটি মামলার মূল বিষয় ছিল না। মূল বিষয় ছিল তাদের অবসরের বয়স সীমা। ৩০ শতাংশ কোটা থাকার বিষয়টি ছিল অবজারভেশন বা পর্যবেক্ষণ। এখন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদিন মালিক থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত আইনজীবী বলছেন যে, পর্যবেক্ষণ রায়ের অংশ নয়। এটা মাননীয় বিচারকদের এক ধরণের মন্তব্য। এই মন্তব্য ম্যান্ডেটরি বা বাধ্যতামূলক নয়। সংশ্লিষ্ট পার্টি এটি মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। কিন্তু সরকার পক্ষ বলছেন যে, এটি ম্যান্ডেটরি বা বাধ্যতামূলক। যদি তাই হবে তাহলে বিচারপতি খায়রুল হক তত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করার সময় যে রায় দিয়েছিলেন সেখানে পরবর্তী দুইটি বা তিনটি নির্বাচন তত্বাবধায়কের অধীনে হতে পারে বলে বলেছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ বলেছিল যে, ওটা ছিলো খায়রুল হক সাহেবের পর্যবেক্ষণ। তারাই বলেছিলো যে পর্যবেক্ষণ রায়ের অংশ নয়। তাই তারা রায়ের এই পর্যবেক্ষণের অংশটি মানতে বাধ্য নন। এই যুক্তিতে তারা তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেন এবং বাতিল করে সেটি পঞ্চম সংশোধনীর অন্তর্ভূক্ত করে।
সুতরাং ৩০ শতাংশ কোটা সম্পর্কে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে এই যুক্তিতে প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করা যাবে না সেই কথা কোনো দিক দিয়ে ধোপে টেকে না। আসলে সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের পক্ষে এটি একটি খোঁড়া যুক্তি হিসাবে পেশ করা হচ্ছে।
Email: asifarsalan15@gmail.com

http://www.dailysangram.com/post/338818