১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:২৭

চাঁদাবাজির পেছনেও এমপির পরিবার

সম্প্রতি যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে প্রেস ক্লাবে আসতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া দাবি করে ২০০ টাকা। চালক নিজেই বললেন, ১৫০ টাকায় আপনাকে নিতে পারতাম; কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। জানতে চাইলাম কেন? চালকের জবাব—স্যার, গাড়িটা ছাড়ার সময় দেখবেন একজন এসে হাজির হবে। আর তাকে বিনা বাক্যে দিতে হবে ৩৫ টাকা চাঁদা। এরপর ফ্লাইওভারে টোল ১৫ টাকা। এই দুই জায়গায় টাকা দিতে না হলে আপনাকে ৫০ টাকা কমে নিতে পারতাম। তাতে আমার লোকসান হতো না। অটোরিকশাটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে এক কিশোর এসে সামনে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করলাম কিসের টাকা? সে জানাল, এটা টোল। তোমার মালিক কে? কে তোমাকে টোল তোলার দায়িত্ব দিয়েছে? কিশোরটি বলল, বাচ্চু ভাই। কে এই বাচ্চু ভাই? সন্ধান করতেই জানা গেল, একসময় বাচ্চু ছিলেন ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার। তারপর জাতীয় পার্টি-বিএনপি হয়ে বর্তমানে এমপি পরিবারের ঘনিষ্ঠ। যাত্রাবাড়ী মোড়ের পরিবহন থেকে তোলা আদায়ের দায়িত্ব এই বাচ্চুর।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-৫ আসনের ডেমরা-যাত্রাবাড়ী-সারুলিয়ার ১০টি পয়েন্টে এভাবে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। চাঁদাবাজির স্পটগুলো হলো—ডেমরার মা ও শিশু হাসপাতাল, ডেমরা সাবরেজিস্ট্রার অফিস, ডেমরার পাইট গ্রামে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের স্থান, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী মোড়, স্টাফ কোয়ার্টার বাসস্ট্যান্ড, শনির আখড়া টেম্পোস্ট্যান্ড, যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া ফুটপাত। এসব স্পটে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক বিএনপি ও জাতীয় পার্টির লোকজন। এরাই এখন মোল্লা লীগের হর্তাকর্তা। আর নেপথ্যে রয়েছেন এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ভাই, ছেলে, মেয়েজামাই, নাতিনজামাই।

ঢাকা-৫ আসনের খুবই জনবহুল এলাকা যাত্রাবাড়ী মোড়। যাত্রাবাড়ীসহ মাতুয়াইলের একটি অংশের অধিবাসীরা এই মোড় দিয়ে গুলিস্তান, সদরঘাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। যাত্রাবাড়ী মোড়ে বেপরোয়া পরিবহন চাঁদাবাজির কাছে জিম্মি এলাকার সাধারণ মানুষ। এই স্পট থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা ছেড়ে যেতে চাঁদা দিতে হয় ৩৫ টাকা। লেগুনা ১৫ টাকা। বাসপ্রতি ৩০ টাকা। প্রতিদিন যাত্রাবাড়ী মোড়ে দাঁড়িয়ে কিংবা মোড় অতিক্রম করে চলাচল করে কয়েক হাজার বিভিন্ন ধরনের পরিবহন। এসব পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে সাবেক ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি করা বাচ্চু। এলাকাবাসী জানায়, প্রায় দেড় দশক ধরে এ স্পটের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে বাচ্চু।
বাচ্চুর সঙ্গে আছে বিএনপি থেকে আসা কাউয়া খালেক। অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চুর চাঁদাবাজির ভাগ যায় এমপি পরিবারের লোকদের কাছে। তবে বাচ্চু কালের কণ্ঠ’র কাছে চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। চাঁদাবাজি করি না, তাই এমপি পরিবারকে ভাগ দেওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না।’
যাত্রাবাড়ী মোড়ে যানবাহনে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একসময় ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার বাচ্চু এবং এলাকার সংসদ সদস্যের জামাতা বকুলের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী মোড়ে চাঁদাবাজি হয়। এমপি পরিবারের আশ্রয়ে বাচ্চু অপকর্ম করে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করছে।’
এ বিষয়ে এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার জামাতা বকুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি কেন পরিবহনের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করব? কেন চাঁদাবাজি করব? যারা বলেন আমি চাঁদাবাজি করি তারা কি প্রমাণ করতে পারবেন আমি চাঁদাবাজি করি?’

আরেক ভয়াবহ চাঁদাবাজির স্পট ডেমরা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়। ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন, জমির ক্রেতা-বিক্রেতাকে কিভাবে ফাঁদে ফেলে এখানে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। ওই সাবরেজিস্ট্রার অফিসে রয়েছে তথাকথিত একটি নির্বাচিত দলিল লেখক সমিতি। বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন স্পট থেকে বিএনপির লোকদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও ডেমরার দৃশ্যপট আলাদা। নানা কৌশলে উল্টো ডেমরা দলিল লেখক সমিতি থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ খোদ ডেমরার আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য শামসুদ্দিনের। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে ডেমরায় দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। নানা কৌশলে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে এমপির পরিবারের লোকজন। বর্তমানে ডেমরা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ডেমরা থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফায়জুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক মাতুয়াইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।
তবে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উভয়ই কালের কণ্ঠ’র কাছে চাঁদা আদায়ের কথা অস্বীকার করেছেন।

সভাপতি ফায়জুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে দলিল লেখক সমিতির একটি নির্বাচিত কমিটি রয়েছে। নির্বাচনে একটি গ্রুপ হেরে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। জমির দলিল করতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয় না।’
অন্যদিকে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য শামসুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি একসময় দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সে সময় কোনো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়নি। এখন হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এমপি পরিবারের লোকদের নেপথ্য ভূমিকার কারণেই আমাদের সরিয়ে বিএনপির লোকদের বসানো হয়েছে।’
ঢাকা-৫ আসনের সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের পর সবচেয়ে বড় পরিবহন চাঁদাবাজির স্পট স্টাফ কোয়ার্টার বাসস্ট্যান্ড। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল করে। এলাকাবাসী জানায়, প্রতিদিন গড়ে এ স্পটে ১০ লাখ টাকার পরিবহন চাঁদাবাজি হয়। এ স্পটের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে হাসিবুর রহমান হাসু। অভিযোগ রয়েছে, হাসিবুর রহমান হাসু ১৯৮৬ সালে ডেমরায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভামঞ্চে আগুন লাগিয়েছিলেন। এখানে হাসুর নেতৃত্বে প্রকাশ্যে যাদের চাঁদাবাজি করতে দেখা যায় তাদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির স্থানীয় ক্যাডার আবদুর রহমান, বাদল ও জুয়েল। অভিযোগ রয়েছে, এমপি পরিবারকে ভাগ দিয়েই হাসু এই চাঁদাবাজি জায়েজ করছেন।
হাসিবুর রহমান হাসু এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টির যুবফ্রন্ট যুবসংহতির ডেমরা আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এরশাদের পতনের পর বিএনপিতে যোগ দিলেও কোনো পদ পাননি। ২০১০ সালে হঠাৎ করে তাঁকে দেখা যায় আওয়ামী লীগের মিছিলে। তার পর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার বাসস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। জিজ্ঞেস করলে হাসিবুর রহমান হাসু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজি করি না। এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আওয়ামী লীগে কোনো পদে না থাকলেও আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। আর শেখ হাসিনার জনসভায় হামলার ঘটনাও আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’

ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করা একটি বাহিনীর হাতে জিম্মি ডেমরার পাইট গ্রামের মানুষ। বিএনপি থেকে রাতারাতি এমপি পরিবারের আশ্রয় পাওয়া ক্যাডার আশা, সুবেদ আলী ড্রেজার দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সাধারণ মানুষের জমিতে, এমনকি কৃষিজমিতে ফেলে জোর করে ভরাট করছেন। ভরাট করার পর একসময় অসহায় জমির মালিক কম দামে তাঁদের কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ ছাড়া এলাকায় কেউ যদি বাড়ি করতে চায় কিংবা জমি উঁচু করার প্রয়োজন হয়, তবে ওই চক্রটির বাইরে অন্য কারো কাছ থেকে কেউ বালু ক্রয় করতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় বাজারমূল্যের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে বালু ক্রয় করতে বাধ্য হয় এলাকাবাসী। আশা ও সুবেদ আলী ২০১৪ সালের আগে ছিলেন ডেমরা থানা যুবদলের সদস্য। হঠাৎ তাঁদের আওয়ামী লীগের মিছিলে যোগ দিতে দেখে এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও তাঁরা ডেমরায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী লোক।
সুবেদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বালু বিক্রি করি। তবে জোর করে কারো জমি ভরাট করি না। বর্তমানে আওয়ামী লীগ করি। আগে কোনো দল করিনি।’
সারুলিয়ায় বালু দস্যুতার সঙ্গে জড়িত বিএনপি সারুলিয়া ইউনিয়ন শাখার সহসভাপতি সাইদুল ইসলাম, সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজমত আলী, তাঁর ভাই সারুলিয়ার বালুরঘাট শাখা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম, বিএনপি থেকে আসা বজলু কসাই, সারুলিয়ার বক্সনগর বিএনপির সদস্য কোটিপতি হেলপার নামে পরিচিত বাবলু বর্তমানে আওয়ামী লীগ সেজে এলাকায় চাঁদাবাজি করছেন। আওয়ামী লীগের পরিচয়ে সারুলিয়ার বক্সনগরে মাদক ব্যবসা করছে বিএনপি ক্যাডার সালাউদ্দিন, সারুলিয়ায় চাঁদাবাজ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন পরিবহন শাজাহান।

এলাকায় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত আজমত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, এমপি আমাকে ঘনিষ্ঠ লোক মনে করে দলে নিয়েছেন আমাদের দান-অবদানের জন্য। আমি বালু বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই।’
ঢাকা-৫ আসনে টাকার খনি বলে পরিচিত সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এমপি পরিবারের হয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন আবুল কালাম, আলমগীর, খোকন ও তৈয়ব। সম্প্রতি সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ এমপি পরিবারের হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমানে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড আওয়ামী লীগেরই আলোচিত এক পরিবহন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। অভিযোগ আছে—এমপিপুত্র মশিউর রহমান সজলের ছত্রচ্ছায়ায় একসময় আবুল কালাম নিয়ন্ত্রণ করতেন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি। জিজ্ঞেস করলে আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি পরিবহন ব্যবসায়ী। কখনো কারো হয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ কিরিনি।’

অভিযোগ আছে ডেমরার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতালের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ থেকে শুরু করে সব ধরনের টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার জামাতা জসিমউদ্দিন রিপন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।’ এ বিষয়ে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাসপাতালের ব্যবসা-বাণিজ্য রিপনই নিয়ন্ত্রণ করে।’
সারুলিয়া এলাকার জেলা পরিষদের টেন্ডার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক একসময়কার দৌড় সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা সাইদুল ইসলাম ভুইয়া। তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বিএনপি থেকে আসা সবুজ ও লিটন মেম্বার। এ তিনজনই আওয়ামী লীগে পদহীন। ডেমরার থানা যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমপি পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এদের কারণে কেউ জেলা পরিষদে টেন্ডার জমা দিলেও এলাকায় কাজ করতে পারে না। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নানাভাবে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে সাইদুল ইসলাম ভুইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি কোনো টেন্ডারবাজি করি না। কাজও নিয়ন্ত্রণ করি না। নিজে ব্যবসা করে খাই।’
ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকায় ‘জলকর’ বলে একটি শব্দ সবার জানা। ডেমরা-সারুলিয়ার পাশ ঘেঁষে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে বালুবাহী ট্রলারসহ যত ধরনের নৌযান চলাচল করে সেসব থেকে ‘জলকর’ আদায় করা হয়। এই ‘জলকর’ আদায়ের অন্যতম হোতা জাতীয় পার্টির নেতা আবদুল লতিফের ছেলে পলিন, ডেমরার হাসিবুর রহমান হাসু, সাবেক যুবসংহতি নেতা সান্দিরা বালুর ঘাটের আবদুর রশিদ, জয়নাল, আজমত, দুলাল খান ও নুরুল ইসলাম। তাঁরা সবাই এমপি পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় এই ‘জলকর’ আদায় করছেন।
সারুলিয়া এলাকার মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত সাইদ ইকবাল যুবদল থেকে রাতারাতি যুবলীগের নেতা বনে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
এ বিষয়ে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘চাঁদাবাজি হয় না তা অস্বীকার করছি না, হয়। তবে এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা জড়িত নয়।’
চাঁদাবাজি ও এমপি পরিবারের নেপথ্য ভূমিকা সম্পর্কে এমপি হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এলাকায় বিছিন্নভাবে কিছু চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা হতে পারে। তবে সেখানে এমপি পরিবারের কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় নেই।’
যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ মুন্না কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছু বহিরাগত লোক দলে এসে চাঁদাবাজি করে দলের দুর্নাম করছে।’ তিনি বলেন,‘বাস্তবতা হলো—এমপি পরিবারের আশীর্বাদ ছাড়া কারো পক্ষে এলাকায় চাঁদাবাজি করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’


 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/07/19/659585