১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৯

নদীর ড্রেজিং ও তীর রক্ষা ব্যয় হুহু করে বাড়ছে

পদ্মায় প্রস্তাবিত ড্রেজিং কিমি. ৪৬ কোটি টাকা, তীর রক্ষা ৬৯.৯৫ কোটি টাকা ; যমুনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং কিমি. ১০ কোটি টাকা ; গড়াইয়ে ড্রেজিং কিমি. ১৩.১০ কোটি টাকা, তীর রক্ষা ২৬.১২ কোটি টাকা

পানিসম্পদ খাতে বিশেষ করে নদী ড্রেজিং, তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হুহু করে বাড়ছে। বছরের ব্যবধানে এসব কাজে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ১০ কোটি টাকার বেশি হারে বাড়ছে। প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রী পানিসম্পদ সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে নদীসংক্রান্ত প্রকল্প ভালোভাবে যাচাই করেই অনুমোদনের জন্য পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেখানে গড়াইতে ড্রেজিং কিমি. ১৩.১০ কোটি টাকা ও তীর রক্ষা ২৬.১২ কোটি টাকা, যমুনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং কিমি ১০ কোটি টাকা, সেখানে দোহার উপজেলা সংলগ্ন পদ্মা নদীতে প্রস্তাবিত ড্রেজিং ব্যয় কিমি. ৪৬ কোটি টাকা এবং তীর রক্ষা ব্যয় কিলোমিটারে ৬৯.৯৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের আলোকে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণে এক হাজার ৫৭১ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই অর্থ ব্যয়ে ৬ হাজার মিটার বা ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ২৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। সাথে ৪২২ দশমিক ৫৫ মিটার এন্ডটার্মিনেশন করা হবে। এ ছাড়াও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেয়া প্রকল্প প্রস্তাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং বাবদ ৬৩ কোটি ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়, যা ছিল মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮ শতাংশ। কিন্তু পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সেটিকে বাড়িয়ে ২৪ কিলোমিটার করা হয়। তার জন্য ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১০৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এটি মোট ব্যয়ের ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এ দিকে দোহার এলাকাসংলগ্ন পদ্মায় ৬ হাজার মিটার বা ৬ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করতে হবে। তার জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৬৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর সমজাতীয় চলমান ও সমাপ্ত প্রকল্পে এ খাতে ব্যয় গড়াই নদীতে কিমি. তীর রক্ষা ২৬.১২ কোটি টাকা, উত্তরবঙ্গের দুই জেলা সংলগ্ন যমুনার প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এমনকি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলাসংলগ্ন বহ্মপুত্রে প্রতি কিলোমিটারে তীর রক্ষা খরচ চলমান প্রকল্পে ১০ কোটি ৪ লাখ টাকা।
অন্য দিকে প্রস্তাবিত প্রকল্পে নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম হবে ২৪ কিলোমিটার। আর এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৪৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। যেখানে গড়াই নদীতে ড্রেজিং কিমি. ১৩.১০ কোটি টাকা, যমুনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং কিমি. ১০ কোটি টাকা, সেখানে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলাসংলগ্ন ব্রহ্মপুত্রে প্রতি কিলোমিটারে ৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর তীর ভাঙন প্রতিরোধের লক্ষ্যে নদীর গভীরতম স্থান তীর থেকে দূরে সরানোর জন্য ড্রেজিং কাজ পরিচালনা করে থাকে। অন্য দিকে, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নৌ চলাচলের সুবিধার্থে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় একই পদ্মা নদীতে নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ড্রেজিং করলে অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক উদ্দেশ ও লক্ষ্য সাংঘর্ষিক হতে পারে। তাই একক প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই ড্রেজিং করা দরকার।

পরিকল্পনা কমিশন আপত্তির সুরে বলছে, পিইসি সভার পর নদীতে এমন কী পরিবর্তন হয়েছে যে যাতে ড্রেজিংয়ের পরিমাণ ৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশে প্রস্তাব করা হলো? সেটা জানা প্রয়োজন। ২০১৫ সালে একনেক সভায় নদীর তীর সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের আগে পানির প্রবাহ, চরের গতিবিধি, ডুবোচরের এরিয়াল ভিউ ইত্যাদিসহ হাইড্রোলজিক্যাল এবং মরফোলজিক্যাল স্টাডি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং কার্যক্রম নির্ধারণ করে প্রকল্প তৈরি করতে হবে মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পে সেটা হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিং ব্যয় অনধিক ১৫২ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া পদ্মায় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং চলমান থাকলে তাও বাদ দিতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/334102