কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাবি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
১৯ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:০৫

সব জেনেও চুপ কেন প্রশাসন

মানববন্ধনে ঢাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা-মামলার প্রতিবাদে পালিত কর্মসূচিতে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের হামলা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকালও মানববন্ধন করেছেন ইতিহাস বিভাগসহ বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। পাশপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে তাতে অংশ নিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকেরা।

গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় শদীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক দাবিতে সাধারণ শিার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিকদের ওপরও তারা হামলা করে। হামলার বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চুপ কেন? তারা কোনো জবাব দিচ্ছে না কেন?
এ সময় সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের চিহ্নিত নেতাকর্মীদের ফের হামলা চালানোর আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে পালন করব। এবার ছাত্রলীগ হামলা চালালেও আমরা দাঁড়াব।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, গত সমাবেশে শিক-শিার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর শিার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। অথচ এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদে বিভিন্ন আন্দোলন করত। তিনি আরো বলেন, আজকের এই মানববন্ধন প্রমাণ করে, শিার্থীরা ত্রাসের রাজত্ব ভেঙে প্রতিবাদ করতে শিখেছে। ভবিষ্যতে সাধারণ শিার্থীদের এই প্রতিবাদের ফলে আরো শিার্থীরা আসবে। তিনি মন্তব্য করেন, ছাত্রলীগের কথাবার্তা পোলাপানের (বাচ্চা) মতো। তাদের বিভিন্নভাবে ব্রেইনওয়াশ করা হয়। প্রথম বর্ষের শিার্থীদের গণরুমে যে টর্চার করা হয়, এর মধ্য দিয়ে তারা ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের বড় ক্যাডারে পরিণত হয়। এদের আশ্রয় দিচ্ছে কারা, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

মানববন্ধনে ছাত্রলীগের চলমান সহিংস কার্যকলাপ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ সরকারের ওপর মহলের কথায় শিক-শিার্থীদের ওপর হামলা করছে। এর বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিার্থীরা সমাবেশ করতে অনুমতি নেয়নি কেন? আমরা কার কাছে বিচারের দাবি জানাব? এর বিচার করার কেউ নেই। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানাব। আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এ মাসের গোড়ায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিার্থী মশিউর রহমানকে সূর্য সেন হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাদের তুলে নিয়ে যায়। এর দুই দিন পর ঢাবির ভিসির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায় শাহবাগ থানা পুলিশ। তারা বলেন, ‘মশিউর রহমানকে আইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন এতে নিশ্চুপ। আমরা প্রশাসনের কাছে তার গ্রেফতারের কারণ জানতে চাই।

মানববন্ধনে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন শিার্থীরা। দাবিগুলো হলোÑ ক্যাম্পাসে সাধারণ শিার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান, কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতারকৃতদের গ্রেফতারের কারণ দর্শানো ও তাদের মুক্তি এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মানববন্ধনে শিার্থীরা বিভিন্ন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। প্ল্যাকার্ডে ‘প্রক্টর, ভিসি, শিক-শিার্থীদের নিরাপত্তা চাই’, ‘আগে নিরাপত্তা পরে কাস’, ‘শিা ও হাতুড়ি, একসাথে চলতে পারে না’, ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর কত দিন’, ‘শিদের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও ছাত্রসমাজ’ ইত্যাদি লেখা ছিল।
এ দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের ছাত্র তানজির হোসেনকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন বিভাগটির শিার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই, বাকস্বাধীনতা চাই, শিকদের ওপর হামলা কেন? প্রশাসন চুপ কেন? ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন শিার্থীরা।

মানববন্ধনে বিভাগের শিক এম এ কাউসার বলেন, কোটা সংস্কার একটি যৌক্তিক আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে কোটা কমিয়ে আনা প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তারা তা না করে শিার্থীদের ওপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। এ সময় অবিলম্বে শিার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তানজির ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন তিনি।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগে কাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছেন বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারে অংশ নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের নেতারা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে কাস বর্জন করছেন বলে জানা যায়। গত মঙ্গলবার অন্তত ৩০টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাস বর্জন করেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। নীরব প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তারা এমন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/334086