১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৩০

এখনো পৌঁছায়নি বিনামূল্যের ২১ লাখ বই

 

বিনামূল্যের বই দেয়ার সময় আরো দুই মাস আগে শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত ২১ লাখ বই দিতে পারেনি কাজ পাওয়া ১৭টি প্রতিষ্ঠান। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন বই না পাওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বাধ্য হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) অভিযোগ করেছেন তারা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জামানত কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানের নোটিশ দিয়েছে এনসিটিবি। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া আরো ৭২টি প্রতিষ্ঠান সময় মতো বই ও কাগজ না দেয়ায় তাদের বিল আটকে দিয়েছে এনসিটিবি। এরমধ্যে ৪টি পেপার মিল আছে, যারা টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী কাগজ সরবরাহ করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, এনসিটিবির একশ্রেণির কর্মকর্তা এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে কাজ দেন। এদের মধ্যে অনেকেই ভুয়া, আবার কারও কাজ করার সক্ষমতা নেই, কারও সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত কাজ দেয়া হয়। এ সিন্ডিকেটের কারণে প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটে। নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ না করার দায়িত্ব এনসিটিবি কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। তাদের প্রতিটি প্রেসে প্রতিদিন মনিটরিং করার কথা। এছাড়াও প্রতিটি প্রেসে এনসিবিটির নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রেসে অবস্থান করে বই ছাপা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য টেন্ডারের দেড় কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন এনসিটিবির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা নয়, এনসিটিবির কর্মকর্তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।
সূত্র আরো বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি এ ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, বিলম্ব হওয়ার একটা মাত্রা থাকা উচিত। প্রায় দুই মাস পরও যারা বই দিতে পারেনি তাদের ভবিষ্যতে কাজ পাওয়ার অধিকার নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যের প্রায় ২১ লাখ বই সরবরাহ করতে পারেনি। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে সময় নিচ্ছে। বাধ্য হয়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের জামানত বাজেয়াপ্ত করার জন্য গত সোমবার কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানগুলো মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ও এসএসসি ভোকেশনাল, এবতেদায়ি, দাখিল ও দাখিল ভোকেশনালের ২০ লাখ ৭ হাজার ৭৭৭টি বই সরবরাহ করেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, নূরকার্ড বোর্ড বক্স ফ্যাক্টরি ১ লাখ ১০ হাজার, মাদার প্রিন্টার্স ১ লাখ ২০ হাজার ২৫৫টি, প্লাসিড প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজেস ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪২৫, নিউ জাহিদ আর্ট প্রেস ৯০ হাজার ৮২৫, লিবার্টি প্রিন্টিং ওয়ার্কস ১ লাখ ৩৫ হাজার, খান প্রিন্টার্স ২ লাখ ৫০ হাজার ৭২৫, কোয়ালিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশার্স ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩০, গ্লোবাল প্রিন্টিং ইকুইপমেন্ট ৭০ হাজার ৫০০, দ্যি ক্যাপিটাল প্রেস অ্যান্ড পাব. বাইন্ডিং ও গ্রাফিক্স ৫০ হাজার, মনির প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ৮০ হাজার, নাজমুন নাহার প্রেস ৮৬ হাজার ৯৭০, কালচারাল প্রেস ১২ হাজার, কাজল প্রিন্টিং ওয়ার্কস ২ লাখ ৮৪৮, দিগন্ত অফসেট প্রিন্টার্স ১৬ হাজার ১২০, বর্ণ সংযোজন ৮০ হাজার ৫৭৯, আবু প্রিন্টার্স ৬০ হাজার, আনন্দ প্রিন্টার্স ৪০ হাজার বই সরবরাহ করেনি। এছাড়াও ৭২টি প্রতিষ্ঠান সঠিক সময়ে বই সরবরাহ করেনি।
এ ব্যাপারে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতি বছর হয়। এবার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, সমিতি থেকে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। আমরা বলেছি, ভুয়া ও কাজের সক্ষমতা না থাকার পরও এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হচ্ছে। এতে আমাদের সম্মান ও এনসিটিবি প্রশ্নের মুখে পড়ছে। তিনি বলেন, এনসিটিবি তাদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, সেটি দেখে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনের তাদের মেম্বারশিপ বাতিল করা হবে।
এনসিটিবির উৎপাদক নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ বলেন, টেন্ডার ও পিপিআরে সঠিক সময়ে বই সরবরাহ না করার জন্য শাস্তির সুস্পষ্ট বিধান আছে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী বই সরবরাহ না করলে প্রথমে জরিমানা, ২৮ দিন পার হয়ে গেলে ১০ শতাংশ জরিমানা, তারপরও বই সরবরাহ না করলে টেন্ডারের পারফরম্যান্স সিকিউরিটি নগদায়ন করার শাস্তির বিধান রয়েছে।
সূত্র জানায়, উল্লেখিত ১৭ প্রতিষ্ঠানকে গত সোমবার কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে এনসিটিবি। এতে বলা হয়েছে, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করা হয়নি। টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘন করায় কেন দরপত্রের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে না তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে হবে।
নির্ধারিত সময়ে বই দিয়েছেন দাবি করে আনন্দ প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী রাব্বানী জব্বার বলেন, আমাদের সঙ্গে ১৭ই মার্চ টেন্ডারের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি করার দুই মাস পড়েও বই ছাপার সিডি দিতে পারেনি। সঠিক সময়ে বই সরবরাহ করা সম্ভব হবে না ওই সময়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আনন্দ পাঠ্যবই ছাপা মাঝপথে বন্ধ করে পরবর্তীতে কার্যাদেশ দিয়েছে ১১ই ডিসেম্বর। এ হিসাবে শর্ত অনুযায়ী ৯৮ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করার সময় এখনো আছে। তিনি আরো বলেন, কী কারণে কারণ দর্শানো চিঠি দেয়া হয়েছে আমার বোধগম্য নয়। তবুও চিঠির জবাব দিয়েছি। তাতে বলেছি, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করছি। এটাকে ব্যবসা না, দায়িত্ব হিসেবে পালন করছি।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ২৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মনিটরিং করা হয়েছে। অধিকাংশ বই চলে যাওয়ায় তারপর আর মনিটরিং করা হয়নি। খুচরা কিছু বই সরবরাহ করা হয়নি। রিটেন্ডারের বই জানুয়ারির ২৪ তারিখ পর্যন্ত সরবরাহ করার তারিখ ছিল বলে তিনি দাবি জানান।
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=53858&cat=2/%E0%A6%8F%E0%A6%96%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%AA%E0%A7%8C%E0%A6%81%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A7%A8%E0%A7%A7-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%96-%E0%A6%AC%E0%A6%87