১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১৩

রাশেদের মা কাঁদলেন, কাঁদালেন

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ

‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার:কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের অভিযান চলছে। গ্রেফতারের পর আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে এবং বার বার রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। গতকাল সিরডাপ মিলনায়নে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে নাগরিক সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দীন খান বলেছেন, আজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। কেন নেই এই প্রশ্নের উত্তর সরকারি দলের সমর্থক বন্ধুদের কাছেও পাই না। বাঙালির প্রতিবাদের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ’৫২, ’৬৬ তে আমরা প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এখন কোনো প্রতিবাদ হচ্ছে না। আমি এর জবাব কোথাও পাই না। তিনি বলেন, প্রতিবাদ করলেই স্টিম রোলার চলবে, চলতেই থাকবে– এই ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়— গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি।

মানবাধিকার কর্মী ও নিজেরা করি সমন্বয়কারী খুশি কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক লুবনা লোপা, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী রাশেদের মা সালেহা বেগম এবং স্ত্রী রাবেয়া আলো প্রমুখ।

খুশি কবির বলেন, কোটা সংস্কারের সঙ্গে জড়িতদের কারো কারো শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিত্সকরা। অনেককেই হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে এমন তথ্যও আমরা পাইনি। ফলে সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশে আইনের শাসন নিয়ে আমাদের প্রশ্ন উঠেছে।

বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদের মা সালেহা বেগম নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন উপস্থিত সবাইকে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা প্রতিদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করতো, মা কেমন আছ? আজ কতদিন আমার বাবার মুখ থেকে এই মা ডাক শুনি না। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। আমার বাবা তো শুধু একটা চাকরি চেয়েছিল। কেন তাকে আজ এতদিন ধরে রিমান্ডে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আমার ছেলেকে আপনারা ফিরিয়ে দিন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিন’।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই আবেদন, আমার সন্তানকে আমি ভিক্ষা চাই। তারে পেলে আমি দেশে চলে যাব। আমার মণির (রাশেদ) আর চাকরির দরকার নাই। আমার মণিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্ত করে। আমার সন্তানকে বাঁচান’।

রাশেদের মা জানান, এখনো পরের বাড়ি কাজ করে সংসার চলে তাদের। স্বামী রাজমিস্ত্রি কিডনির রোগে অসুস্থ। ভেবেছিলাম, মণি চাকরি করে সংসার চালাবে। আমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না। এখন আমার ছেলেকে কারাগারে মরতে হচ্ছে। রাশেদ খানের বিরুদ্ধে শিবিরের রাজনীতি করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, তার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার পরিবারও কোনো রাজনীতি করে না। সালেহা বেগম বলেন, আমার মণি সাধারণ ছাত্র। স্কুল, কলেজে ভালো রেজাল্ট করেছে। কত সুখ্যাতি তার। এত ভালো ছেলের নামে কেন এত বদনাম ছড়ানো হচ্ছে আজ?

রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, আন্দোলনে আসার পর তাকে শিবির বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। কিন্তু আমার স্বামী কখনই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ও সাধারণ ছাত্র। রাশেদ চেয়েছিল একটি সরকারি চাকরি। এটি কি তার অপরাধ? ১০ দিন রিমান্ডের কথা বলে আবার রিমান্ডের সময় বাড়ানো হয়েছে।

রাবেয়া আলো বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি এরকম আর কেউ কখনোই প্রতিবাদী হবে না। দাবি আদায়ে রাস্তায় নামার সাহস পাবে না। আমি কোনোদিন আমার স্বামী-সন্তানকে রাস্তায় নামতে দেব না’।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2018/07/15/289041