১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৪

ঢাকার বাতাসে ধুলা স্বাস্থ্য ঝুঁকি

 

ধুলায় একাকার ঢাকা। দূষিত বাতাসের সঙ্গে মিশে এ ধুলায় রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে সর্বত্র। বিশেষ করে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রধান কারণ এ ধুলাবালি। এমনিতেই হাজারো সমস্যায় জর্জরিত রাজধানী ঢাকা। এর ওপর নতুন করে যোগ হয়েছে ধুলা। একদিকে চলছে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ। এর ফলে ধুলায় একাকার রাস্তায় চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে। আর আশপাশে বসবাসকারীরা রয়েছেন মহাসংকটে। ভুগছেন নানা স্বাস্থ্য সমস্যায়। মিরপুর, কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া, তালতলায় চলছে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। এসব এলাকা দিনের বেলায় দূর থেকে দেখলে মনে হবে কুয়াশায় ঢেকে আছে। আসলে কুয়াশা নয় ধুলার কুণ্ডলি। মিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ দুই মাস থেকে ঠাণ্ডা, জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। এর মধ্যে দু’বার চোখ উঠেছে তার। এন্টিবায়েটিক ওষুধ খাওয়ার পরও ঠাণ্ডা ভালো হচ্ছে না মাসুদের। ডাক্তার মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। মাসুদ বলেন, আমার ডাস্ট এলার্জি। এটা হয়েছে ধুলা বালির কারণে। প্রতিদিনই ধুলার মধ্য দিয়ে আমাকে অফিস যেতে হয় আবার বাড়ি ফিরতে হয়। এদিকে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলামটর-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। ২০১৫ সালের মধ্যে এ ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা পপি বলেন, দিনের পর দিন ফ্লাইওবার নির্মাণের জন্য ধুলাবালি আর যানজটে যে কষ্ট করছি জানি না কবে এ থেকে মুক্তি পাবো। আমার দুই মেয়ে ভিকারুননিসা-নুন স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন ওদের এই ধুলার মধ্য দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। প্রায় সর্দি জ্বরসহ শ্বাসকষ্টে ভুগছে ওরা। ক’দিন পরপরই বাচ্চাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ডাক্তার পরার্মশ দিয়েছেন এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বাসা নিতে। কিন্তু নিজের বাড়ি ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো। এছাড়াও রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবনের সামগ্রী রাস্তায় যত্রতত্র ফেলা রাখা হয়। এটিও ধুলার একটি বিশেষ কারণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ধুলাজনিত কারণে কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ব্রঙ্কাইটিস, ভাইরাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশুরা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি সংক্রমিত হয় এসব রোগে। শ্বাসনালী দিয়ে ধুলা প্রবেশ করায় খাবারে অরুচি সৃষ্টি করে, যা থেকে গ্যাস্টিক-আলসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীতে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকিও দিনদিন বাড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন এয়ার ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের সমীক্ষায় দেখা গেছে ঢাকা শহরের বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এ বিষয়ে বুয়েটের পুরোকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী বলেন, দুটি কারণে ঢাকার বাতাসে ক্ষুদ্র ধূলিকণা ওড়ে। একটি হচ্ছে বিভিন্ন নির্মাধীন স্থাপনার কাজের জন্য। আরেকটি ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে। সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুকনো মওসুমে বাতাসে ক্ষুদ্র ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। বৃষ্টি হলে কিছুটা কমে আসে। বাতাসে ক্ষুদ্র ধূলিকণার পরিমাণ যদি পিএম টু পয়েন্টে গড়ে ১ শোর নিচে থাকে তাহলে ধরা হয় বাতাসের অবস্থা ভালো। এর চেয়ে বেশি হলে ধরা হয় বাতাসের অবস্থা খারাপ। শুষ্ক মওসুমে রাজধানীতে ক্ষুদ্র ধূলিকণার পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। ঢাকার বাতাসকে নির্মল রাখতে হলে আমাদের সিএনজি চালিত যানবাহনকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইটভাটাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও স্থাপনা নির্মাণের সময় দ্রব্য সামগ্রী ঢেকে রাখা। আধুনিক পদ্ধতিতে পানি ছিটিয়ে ধুলা নিবারণ করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দীর্ঘমেয়াদি কোনো স্থাপনা যেমন ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলেও তার নির্মাণ সামগ্রী কিভাবে রাখা হচ্ছে তা তদরকি করার কেউ থাকে না। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য সৃষ্ট ধুলা নিবারণের জন্য সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে কিনা সেটাও দেখারও কেউ থাকে না। এতে যে এলাকায় এসব স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলে সেসব এলাকাবাসীকে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তেমনি সেই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারীদেরও কষ্টের সীমা থাকে না
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=53739&cat=2/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%9D%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BF