৬ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১২:৫৯

হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ, চার জনের মৃত্যু

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর বেড়েই চলেছে। ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১৫ জন। চলতি বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুজ্বর দেখা দিলেও গত জুন মাস থেকে এই সংখ্যা ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছে আড়াইশ’। ৫ই জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪৩২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই তথ্য জানা গেলেও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। আক্রান্তদের মধ্যে বাসায় থাকা নারী ও কিশোরীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে ৪ নারী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখনও ৬৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ৩৬ জন। বাকিরা মিটফোর্ড, হলিফ্যামিলি, ইসলামী ব্যাংক, ইব্নে সিনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত বহু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গুজ্বর আতঙ্ক। অভিযোগ রয়েছে, ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার প্রজনন বেশি হওয়ার কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৪০৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৪ জন। তারা হলেন, নার্গিস বেগম (৪৩), ফারজানা (৩৪), মিসেস রোজিলিন ও সেজুতি (২৬)। গত জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ২৫০ জন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। এই মৌসুমে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ এবং স্থির পানিতে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার প্রজনন ঘটে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে এডিশ মশা কামড় দিলে ওই মশা যদি আরেকজনকে কামড় দেয় তারও ডেঙ্গুজ্বর হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার জানান, থেমে থেমে বৃষ্টি ও সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঠিকমতো মশার ওষুধ না দেয়ায় প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। অনেক জ্বরে আক্রান্ত রোগী আসছে। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু বাড়ে। এরপর শীত এলে কমে যাবে।

এদিকে চলতি বছরে গত সাত মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় সোয়া ৩ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিরোধযোগ্য এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়। মোট আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রায় ৯০ হাজার ডায়রিয়া রোগী রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান’ বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে ভর্তি হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সারাদেশ থেকে নিয়মিত ডায়রিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা অধিদপ্তরের নির্ধারিত ছকে নিয়মিত তথ্য পাঠায়। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত রাজধানী ও দেশের ২৬টি জেলা ৮৫টি থানার মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ২৫১ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী হন। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় সারা দেশে ২ হাজার ৫৭১টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে নেত্রকোনা জেলায় সর্বোচ্চ ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। এছাড়া ফেনী, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ, যশোর, জামালপুর, শরীয়তপুরে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। আইসিডিডিআর,বি’র ডায়রিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রতি বছর ডায়রিয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গরমের কারণে পিপাসা মেটাতে নিম্নআয়ের মানুষ রাস্তাঘাটে খোলামেলা অবস্থায় বিক্রিত শরবত, ফলমূল ও খাবার গ্রহণ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এছাড়া পচাবাসি খাবার গ্রহণের কারণেও অনেকেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হন। তারা জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই কেউ ডায়রিয়া হলে তাকে দ্রুত ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। বেশি পানিশূন্যতা দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=124429