বালুখালী আশ্রয়শিবিরে বৃষ্টির পানিতে আটকে পড়া এক রোহিঙ্গা পরিবার
৬ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১২:০৯

টানা বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কষ্টের শেষ নেই, ধসে পড়েছে ৫ শতাধিক বসতঘর

প্রচণ্ড বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের তুমবরু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি আবারো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে সেখানকার প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গা চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। পাশাপাশি উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও থাইংখালীর সমতল এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের পাঁচ শতাধিক ঝুপড়িঘর ধসে পড়েছে। পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর দিনযাপন করছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুর জানান, মঙ্গলবার সকালে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে শুরু করে। রাত যতই গভীর হয়েছে ততই বেড়েছে বৃষ্টি ও বাতাসের গতিবেগ। ভোররাতের দিকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়ায় অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক য়তি হয়েছে। তার মতে, কুতুপালং ক্যাম্পে শতাধিক ঝুপড়িঘর ধসে পড়ে বেশ কিছু পরিবার গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ অন্যদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। বালুখালী ক্যাম্পের লালু মাঝি জানান, তার ক্যাম্পে পাহাড় কেটে বসবাসের উপযোগী করে বেশির ভাগ ঘর তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগে প্রশাসন কিছু পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে গেলেও দুই শতাধিক পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থেকে যায়। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের খাদে ও ওপরে বসবাসরত এসব বসতবাড়ি ধসে পড়েছে। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, তাজনিমারখোলা, বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্প, ময়নারঘোনা, শফিউল্লাহকাটা, লম্বাশিয়াসহ ছোট বড় ২০ ক্যাম্পে ৫ শতাধিক বসতঘর ধসে পড়েছে। ওই সব ঘরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। এদের অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে। উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক জানান, তিনি সকালে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প ঘুরে দেখেছেন। তেমন কোনো বড় ধরনের য়তি তার নজরে আসেনি। সেখানে কিছু বসতবাড়ি ধসে পড়তে দেখেছেন। এসব পরিবারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া ১০ লাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে কমপে এক লাখ ঝড়-বন্যা ও ভূমিধসের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়া ব্যাপক প্রাণহানিসহ মানবিক বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি পাহাড়ের খাদে বসবাসকারী প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার পাহাড় ধসে বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা গুরুতর ভাবনার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কক্সবাজার, বালুখালী ও কুতুপালংয়ের বিস্তীর্ণ বনভূমি এবং টেকনাফের লেদা ও মোছনী ক্যাম্পে নতুন-পুরান প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। এর মধ্যে কমপে এক লাখ চলতি বর্ষা মওসুমে ভূমিধস ও বন্যার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে সতর্ক করেছে ইউএনএইচসিআর।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/330590