৬ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১২:০৭

কমে গেল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

কমে গেল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ৩০ জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এ পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছেন না বড় বড় ঋণগ্রহীতারা। এতে ব্যাংকে সামগ্রিকভাবে নগদ আদায় কমে গেছে, অপর দিকে কমছে আমানতের প্রবাহ। এর পরেও কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছে। অর্থের সংস্থান না করেই দেদার পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। এতে আমদানি প্রবাহ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ জুন শেষে ২৫ শতাংশ ছেড়ে যায়। এ অস্বাভাবিক আমদানি দায় মেটাতে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার পাশাপাশি ডলারের সঙ্কট বেড়ে গেছে। এ ডলারের সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২৩১ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এরই প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে ব্যাংকিং খাতে ডলারের সঙ্কট বেড়ে যায়। দীর্ঘ দিন যাবৎ দেশের স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। ডলারের চাহিদা না থাকায় এক সময় যেখানে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে, সেখানে আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে বিপরীতভাবে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়। গত নভেম্বর থেকে এ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। নিরুপায় বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ করতে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশে বিভিন্ন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে বাড়ে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়। কিন্তু সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। এর ফলে টাকার বিপরীতের ডলারের দাম হুহু করতে বাড়তে থাকে। আমদানি ব্যয়ে চাপ সামলে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে ডলার ছাড়তে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বাজারে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার বাজারে বিক্রি করা হয়; এটি গত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানিতে সামগ্রিক ব্যয় বেড়েছে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ। জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। চাল আমদানি বেড়েছে ১৯৬ শতাংশ। এর বাইরে আমদানি বাড়ায় এবার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে এশিয়ান কিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর আগে কখনোই বাংলাদেশের আমদানি বিল এত বেশি হয়নি। মে-জুন মেয়াদে ১২৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।

অন্য দিকে গত অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি আয়ও বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে। কিন্তু এর পরও আমদানি ব্যয় বেশি হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ বৃদ্ধির বদলে সামন্য কমে গেছে।
এ দিকে বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতির চাপ থাকায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি হয়েছে ৮৫১ কোটি ডলার। আগের পুরো অর্থবছরে ১৪৮ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল; তার আগের অর্থবছরে ৪২৬ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। গত বুধবার আন্তঃ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সায়। আর ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের জন্য তার চেয়েও দেড়-৩ টাকা বেশি নিয়েছে। আগের অর্থবছরে একই দিনে ডলার দাম ছিল ৮০ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ডলার প্রতি দাম বেড়েছে ৩ টাকারও বেশি। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানিতে খরচ পড়ছে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সামনে ব্যাংকিং খাতে এ চাপ অব্যাহত থাকবে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে সব ধরনের পণ্যের দাম। এদিকে কাক্সিত হারে রফতানি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ছে না। এর পাশাপাশি সামনে নির্বাচন। নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি আমাদানির চাপ থাকবে। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রার টানাটানি কমবে না বরং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে সতর্কভাবে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে হবে। একই সাথে যেসব পণ্যের বিপরীতে এলসি খোলা হচ্ছে ওইসব পণ্য দেশে আসছে কি না সে দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতা আরো বেড়ে যাবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/330595