৬ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১২:০১

মুসলিম বিশ্বের সাম্প্রতিক নির্বাচন পর্যালোচনা

শাহ্ আব্দুল হান্নান

মুসলিম বিশ্বে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তুরস্কে গত ২৪ জুন। এ নির্বাচনে রজব তাইয়েব এরদোগান ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার দল একে পার্টি তাদের সহযোগীদের সাথে মিলে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একে পার্টি একটি ইসলামি দল এবং তারা সতর্কতার সাথে তুরস্কে ইসলামি আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এরদোগান একজন জ্ঞানী, যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তি। তিনি ইতোমধ্যে তার অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছেন। তার আমলে তুরস্কের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আশা করা যায়, তিনি ভবিষ্যতে মুসলিম বিশ্বের সর্বপ্রধান নেতা হবেন এবং মুসলিম উম্মাহর আশা-আকাক্সা পূরণে বড় ভূমিকা পালন করবেন।
তুরস্কের আগে মালয়েশিয়ায় নির্বাচন হয়েছে। সেখানেও আসলে ইসলামপন্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তবে ভবিষ্যতের মূল নেতা হচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম, তার স্ত্রী হিজাব পালনকারী তুন আজিজাহ ও কন্যা নূরুল ইজ্জাহ। উল্লেখ্য, তুন আজিজাহ এখন উপপ্রধানমন্ত্রী। মালয়েশিয়ার নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, মূল ইসলামি দলের পার্টি প্রধান ও ২ নম্বর পদে রয়েছেন দু’জন ইসলামপন্থী নারী, যাদের নাম ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামি আন্দোলনে নারীদের অগ্রগতির এটি প্রমাণ।

দু-তিন বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থী পার্টিগুলো পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্টও ইসলামের প।ে ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ৫০টিরও বেশি আধুনিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে দেশে দুই যুগ আগে সেকুলারিজম চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
আরব বিশ্বের যেসব জায়গায় রাজা-বাদশাহরা শাসন করেছেন বা একনায়কেরা শাসন করেছেন, সেখানে ইসলামপন্থীরা সামনে আসতে পারছেন না, তবে তারাই জনগণের সমর্থিত।
মিসরে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ইসলামি দল মতায় এসেছিল, কিন্তু পরে বৈদেশিক শক্তির সহায়তা ও উসকানিতে সেখানকার সামরিক বাহিনী ড. মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বাধীন ইসলামি সরকারকে উৎখাত করে। যেকোনো স্বাধীন নির্বাচনে সেখানে ইসলামপন্থীরা আবার মতায় আসবেন।
তিউনিসিয়া, মরক্কো ও মালয়েশিয়ায় নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা বিজয় লাভ করেছেন এবং এককভাবে বা কোয়ালিশনের মাধ্যমে মতায় আছেন।

নাইজেরিয়ায় নির্বাচনে ইসলামি শক্তিই আছে মতায়। পাকিস্তানে ২৫ জুলাই নির্বাচন হবে। সেখানে কেয়ারটেকার সরকার কেন্দ্রে ও প্রদেশে গঠিত হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে প্রধান চারটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মুসলিম লিগ, পিপলস পার্টি, পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ ও মুত্তাহিদা মজলিসে আমল। এরা কেউই ইসলামবিরোধী নন। শেষের দু’টি ইসলামপন্থী। তাদের মতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহরিকে ইনসাফের সভাপতি সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান এবং মুত্তাহিদা মজলিসের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তান।
ইরান ও আফগানিস্তানে ইসলামপন্থী দলই মতায় আছে। আশা করা যায়, আফগানিস্তানে তালেবান ও সরকারের মধ্যে সমঝোতা হবে। সৌদি আরবে সত্যিকার অর্থে নির্বাচন নেই। তবে এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচন হচ্ছে। সে দেশে নারীদের ভূমিকাও রয়েছে। নারীদের ভূমিকা বাড়াতে তারাও ইসলামের পইে কাজ করবেন। সৌদি নারীদের ৯৫ শতাংশই পাশ্চাত্যের বেহায়াপনা বা অশালীনতা পছন্দ করেন না।

বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। তবে নির্বাচন নিয়ে এখন জটিলতা চলছে। বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধন করে কেয়ারটেকার সরকার চালু করা হয়েছিল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য। পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে (৩ বনাম ৩) এটা বাতিল করতে বলা হয়েছিল। সরকার এর বিরুদ্ধে রিভিশনে যেতে পারত, কিন্তু তখনকার সরকার তা করেনি। সংবিধান সংশোধন করে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান বাতিল করা হয়েছে। ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচন বলতে গেলে হয়নি। এর পর যেসব নির্বাচন হয়েছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই কারচুপি হয়েছে। এখন প্রায় সবার দাবি, নির্বাচনের সময়ের জন্য কোনো-না-কোনো ধরনের কেয়ারটেকার বা নিরপে সরকারব্যবস্থা করা। তা হলেই বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচন হবে এবং এভাবে গণতন্ত্র আসবে।
উপসংহারে বলতে হয়, সত্যিকার জনমত সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প।ে জনগণ সুযোগ পেলে সার্বিকভাবে মুসলিম বিশ্বের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে এবং ইসলামের কল্যাণময় ব্যবস্থা ধীরে ধীরে হলেও প্রতিষ্ঠিত হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/330533