কুমিল্লার ঝাগুড়ঝুলি এলাকায় খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক
২ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:৪৮

কমছে গতি বাড়ছে ভোগান্তি

দুই বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কোথাও দেবে গেছে, কোথাও ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক বিভাগ মহাসড়কটি প্রায়ই সংস্কার করলেও একের পর এক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি বাড়ছেই। প্রায়ই সংস্কার করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। মহাসড়ক থেকে বৃষ্টির পানি সরে যেতে ড্রেন নির্মাণ করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। এতে বৃষ্টির সময় দূরপাল্লার যানবাহন চালকদের গাড়ি চালানোয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধীরগতির কারনে সময় বেশি লাগায় যাত্রীদেরকেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হয়। নির্মাণকালীন সময়ে নানা জটিলতা দেখা দেয় চার লেন নিয়ে। সড়ক ও জনপদ সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভারবহন ক্ষমতা ২০২৩ পর্যন্ত ধরা আছে। তবে ২০১৬ সালেই তা আংশিকভাবে পেরিয়ে গেছে। আর অত্যধিক ওভারলোডিংয়ের কারণে এখনই ঝুঁকিতে পড়েছে চার লেন। দুই বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর বিভিন্ন অংশ। এছাড়া বৃষ্টিতেও মহাসড়কটির কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য চার লেন রক্ষায় নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদনে (পিসিআর) এ সুপারিশ করা হয়।

প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরে পিসিআর জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারতের কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ও বাংলাদেশের ডেভ কনসালট্যান্ট লিমিটেড।
এতে বলা হয়, মহাসড়কটির নকশা প্রণয়নে সম্মিলিত আদর্শ এক্সেল (ভারবহন ক্ষমতা) বা ইএসএ ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ। যা ২০২৩ সালে অতিক্রম করার কথা রয়েছে। তবে ২০১৬ সালে চার লেনটিতে ট্রাফিক সমীক্ষা ও এক্সেল লোড সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালেই আংশিকভাবে সম্মিলিত আদর্শ এক্সেল অতিক্রম করেছে। এতে পুরোনো দুই লেনে দৈনিক ৫২ হাজার যান চলাচল ঝুঁকি তৈরি করছে।

এদিকে বৃষ্টিতেও মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বর্ষায় এর পেভমেন্ট কয়েক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কটিতে গড়ে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে, যার ৮-১২ হাজারই ট্রাক। এগুলোর অধিকাংশই থাকে অত্যধিক ওভারলোডেড। গত দুই বছরের বর্ষায় সড়কটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এখনও বহু স্থানে ছোট-বড় খানাখন্দ আছে। এতে প্রায়ই মহাসড়কের খানাখন্দ ভরাটে কাজ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এছাড়া কুমিল্লা অংশের পদুয়ারবাজার, বেলতলী, ঝাগুড়ঝুলি, দুর্গাপুর, আলেখারচর, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কালাকচুয়া, নিমসার, কোরপাই, চান্দিনা, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় প্রতিনিয়ত মহাসড়কের উপরের অংশের পাথর তুলে পুনরায় বিটুমিনের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোও দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় কোথাও না কোথাও খানা-খন্দক সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত।

এদিকে, মহাসড়ক থেকে বৃষ্টির পানি সরে যেতে পদুয়ারবাজার, কোটবাড়ি, আলেখারচর, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, ময়নামতি সেনানিবাস, নাজিরাবাজার এলাকায় ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মহাসড়কের পাশে যত্রতত্র হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব দোকানের উচ্ছিষ্ট খাবারসহ সব বর্জ্য মহাসড়কের ওপর কিংবা ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। এতে ড্রেন বন্ধ থাকায় পানি জমে থাকছে মহাসড়কে। বৃষ্টির সময় মহাসড়কে চালকদের অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহনের গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
মহাসড়কে চলাচলরত একাধিক বিলাসবহুল পরিবহনের চালক জানান, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্ন স্থানে পাথর উঠে গেছে। কোনো কোনো স্থানে ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টির সময় সড়কে পানি জমে থাকায় গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হন তারা। এতে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মহাসড়ক সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মেরামতের স্বল্পসময়ের ব্যবধানে ব্যয়বহুল সড়কটির বারবার সংস্কারের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

এদিকে কুমিল্লা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঠিকাদাররা প্রতিদিনই সংস্কার কাজ করছেন। সড়কের পাশে জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানান, এটা সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা সওজের সেই জনবল নেই, রাস্তার পাশের ড্রেন পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক রাখার।

https://www.dailyinqilab.com/article/139273