৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:০১

জানুয়ারি জুড়েই ফারাক্কায় পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ: তিনটি কিস্তিতে কম ২৮,২৮৭ কিউসেক

ফারাক্কা পয়েন্টে পুরো জানুয়ারিতেই কম পানি পেল বাংলাদেশ। জানুয়ারি মাসে তিন কিস্তিতে ২৮,২৮৭ কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী ভারত এই পরিমাণ পানি কম দিয়েছে বাংলাদেশকে।
১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পানি বণ্টন কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে। চুক্তির আওতায় এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত যৌথ নদী কমিশন কর্তৃক বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন সম্পর্কিত পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এসব জানা গেছে।
যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মো: মোফাজ্জল হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ১০ দিনে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ ফারাক্কা পয়েন্টে পাওয়ার কথা রয়েছে ৬৭,৫১৬ কিউসেক পানি। কিন্তু বাংলাদেশ পেয়েছে ৫৭,৭৬৬ কিউসেক পানি। হিসাব মতে, এই দশ দিনে ভারত ৯৭৫০ কিউসেক পানি কম দিয়েছে বাংলাদেশকে। দেশটি চুক্তির সংলগ্নি-১-এর বণ্টন ফর্মুলা মেনেছে। সে অনুয়ায়ী এবার ৫৭,৭৬৬ কিউসিকে পানি দিয়েছে বাংলাদেশকে।
অপর দিকে দ্বিতীয় দশ দিনে পানি আরো কমে গেছে। জানুয়ারির দ্বিতীয় দশ দিনে বাংলাদেশ পাওয়ার কথা ৫৭,৬৭৩ কিউসেক পানি। কিন্তু বাংলাদেশ এই দশ দিনে আরো কম পানি পেয়েছে। এই দশ দিনে দেশটি ১২,৩৭৬ কিউসেক পরিমাণ পানি কম পেয়েছে। চুক্তির সংলগ্নি-১-এর বণ্টন ফর্মুলা অনুয়ায়ী বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৫,২৯৭ কিউসেক পানি।
আর জানুয়ারির শেষ দশ দিনে অর্থাৎ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত পাওয়ার কথা ছিল ৫০,১৫৪ কিউসেক পানি। কিন্তু পেয়েছে ৪৩,৯৯০ কিউসেক।
গেল মাসটির পুরো হিসাব মেলালে দেখা যায় যে, ফারাক্কা পয়েন্টে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ পাওয়ার কথা ছিল ১৭,৫৩৪৩ কিউসেক পানি। কিন্তু পেয়েছে ১৪৭,০৫৬ কিউসেক পানি। ওই মাসে তিন কিস্তিতে ২৮,২৮৭ কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, গত বছর ছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। ২০১৫ সালের চেয়েও ২০১৬-তে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা খুবই উদ্বিগ্ন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবারে শুষ্ক মওসুমে গঙ্গায় পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ আরো বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। আমেরিকার হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্যাসিফিক ইএনএসও এপ্লিকেশন ক্লাইমেট চেঞ্জ সেন্টারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রাশেদ চৌধুরী টেলিফোনে নয়া দিগন্তকে বলেছেন, আগামীতে আবহাওয়ায় ঘন ঘন এল-নিনো সক্রিয় থাকবে। তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাস আবহাওয়ায় লা-নিনার প্রভাব থাকতে পারে। এতে আবহাওয়া কিছুটা ঠাণ্ডা এবং স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হতে পারে। তবে এর আগে যদি এভাবে বাংলাদশে গঙ্গা অববাহিকায় পানি কমতে থাকে তাহলে এসব এলাকায় কৃষি ও সেচের জন্য ভূগর্ভের পানির ওপর ভরসা করতে হবে বাংলাদেশকে। এতে করে বাংলাদেশে গঙ্গা অববাহিকায় কৃষিকাজে ব্যয় বেড়ে যাবে।
গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী ভারত প্রথম দশ দিনে ফারাক্কায় মোট পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার কথা ১০৭,৫১৬ কিউসেক পানি। গঙ্গা চুক্তির ঐতিহাসিক প্রবাহ অনুযায়ী এই চুক্তির ধারা অনুযায়ী প্রতি কিস্তিতে কী পরিমাণ পানি নিশ্চিত করবে তার একটি হিসাব রয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারির এই সময়ে ১০৭,৫১৬ কিউসেক পানি নিশ্চিতের কথা থাকলেও দেশটি তা করেনি। এবার এই দশ দিনে ছিল ৯৭,৭৬৬ কিউসেক পানি। এবারে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি এসেছে ৬৬,২৬১ কিউসেক পানি। অপর দিকে দ্বিতীয় দশ দিনেও চুক্তি অনুযায়ী মোট পানিপ্রবাহ নিশ্চিত না করে করেছে ৮৫,২৯৭ কিউসেক পানি। চুক্তি অনুযায়ী ভারত গঙ্গায় এই সময়ে ৯০,১৫৪ কিউসেক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার কথা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর এই গঙ্গা চুক্তি সম্পাদিত হয়। দেখা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি সংলগ্নি-১-এর বণ্টন ফর্মূলা অনুযায়ী পানি নিশ্চিত করলেও ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। পানি বণ্টনের বেশির ভাগ সময়ই ভারত ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী পানি নিশ্চিত করেনি।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/193854