২৯ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১৯

ঈদের চাঁদাবাজি এখনো থামেনি

ঈদ শেষ হলেও ঈদ বখশিশের নামে চাঁদাবাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পরিবহন সেক্টর এখনো অস্থির চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে। ঘাটে ঘাটে তাদেরকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না।

ঈদের আগে বখশিশের নামে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরিবহন সেক্টর ও ফুটপাথ ছিল চাঁদাবাজদের অন্যতম টার্গেট। রাজধানীতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে ফুটপাথের হকার থেকে। পরিবহন সেক্টরেও চাঁদাবাজি হয়েছে ব্যাপকহারে। এ চাঁদাবাজির হাত থেকে সাধারণ যাত্রীরাও রেহাই পাননি। এক দিকে পরিবহন মালিকেরা চাঁদাবাজদের খুশি করেছেন; অন্য দিকে গলা কেটেছেন যাত্রীদের।
ঈদ শেষে এখনো মানুষ ঢাকায় আসছেন। আর এ সুযোগটি নিচ্ছে চাঁদাবাজরা। তারা এই ঈদফেরত যাত্রীদের জিম্মি করেও হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। একাধিক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক বলেছেন, চাঁদাবাজদের কারণে তারা অস্থির। শুধু শহরকেন্দ্রিকই যে চাঁদাবাজি হচ্ছে, তা নয়। চাঁদাবাজি হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। বরিশালের এক বাস মালিক জানান, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েকটি জেলার সঙ্গে বাস যোগাযোগ প্রায়ই সমস্যায় পড়ছে। বরিশাল টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠি, রাজাপুর, ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও খুলনার বাস চলাচল নিয়ে এ সমস্যা। মূল টার্মিনাল থেকে কয়েক মাইল দূরে গিয়ে ওই সব এলাকার বাস ছাড়তে হয়। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাউকে তোয়াক্কা করছে না এই এলাকার পরিবহন মাস্তানরা। পরিবহন সূত্র জানায়, বরিশাল থেকে একটি বাস ঢাকায় আসতে তিনটি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। এরপর ফেরিঘাটেও বাড়তি টাকা না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

পরিবহন মালিক সূত্র জানায়, সৈয়দপুরে মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নামে চাঁদাবাজি চলছে। অথচ এ নামে রেজিস্ট্রিকৃত কোনো সংগঠনই নেই। জলডাঙ্গা, ডিমলা, নিলগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে প্রকাশ্যে মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নামে চাঁদাবাজি চলছে। দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও থেকে গাড়ি আসতেও বিভিন্ন স্পটে চাঁদা দিতে হচ্ছে।
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে এখনো চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। বিপ্লব নামের এক গাড়িচালক বলেন, ফেরিঘাটে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। এরা যে চাঁদা তোলে তা বিভিন্ন দফতরে ভাগাভাগি হয়। এ চক্রকে যে যত বেশি টাকা চাঁদা দিতে পারবে তার গাড়ি তত আগে ফেরিতে উঠবে। এখানে গাড়ির সিরিয়াল নির্ভর করে টাকার ওপর। কিসমত নামের এক ট্রাকচালক জানান, তিনি টাকা দিতে পারেননি বলে তার ট্রাকটি এক দিন আটকে রাখা হয়। পরে মালিকের কাছ থেকে বিকাশে টাকা নিয়ে তা দিয়ে চাঁদার টাকা শোধ করলে গাড়ি ফেরিতে ওঠে।

রাজধানীতে নতুন করে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। বিশেষ করে ফুটপাথের হকারদের নতুন করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। মতিঝিলের একাধিক হকার বলেন, ঈদে ফুটপাথে ব্যবসা শেষে তারা গ্রামে যান। এখন আবার তারা ফিরে আসছেন। এখন মালামাল নিয়ে ফুটপাথে বসতে গেলেই নতুন করে টাকা দাবি করছে চাঁদাবাজরা। টাকা দিতে না পারলে বসতে দিচ্ছে না। একাধিক হকার বলেছেন, আগে যারা চাঁদাবাজি করেছে এখনো তারাই চাঁদার টাকা নিচ্ছে। কোনো কোনো স্পটে পুলিশের কিছু সদস্য সরাসরি চাঁদার টাকা নিচ্ছে।
পরিবহনে চাঁদাবাজি সম্পর্কে বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, চাঁদাবাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাদের কাছে তথ্য রয়েছে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। নামসর্বস্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/328721