২৯ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১৫

গাজীপুরের নির্বাচনে ১৫৯টি অনিয়ম হয়েছে

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)। সংস্থাটি জানান, তাদের পর্যবেক্ষকরা যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন সেগুলোর ৪৬.৫ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সদ্য নির্বাচন হওয়া গাজিপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন ইডব্লিউজির পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলীম। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইডব্লিউজির সদস্য আব্দুল আওয়াল, ড.নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

ইডব্লিউজির পক্ষ থেকে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অননুমোদিত ব্যক্তির অবস্থান। এসব অনিয়মের বেশিরভাগই দুপুরের পর সংঘটিত হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ইডব্লিউজি ৫৭টি ওয়ার্ডের ১২৯টি (৩০ শতাংশ) ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে। নির্বাচনে ভোট প্রদানের গড় হার ৬১.৯ শতাংশ।
অনিয়মের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরে ইডব্লিউজি জানায়, ভোট গ্রহণ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের পর্যবেক্ষকরা ৪৫ শতাংশ (৬০টি ভোটকেন্দ্র) ভোটকেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের ভেতরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভিতরে অননুমোদিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি। অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষণকৃত ১২টি ভোট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৯টি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ পুনরায় চালু করা হয়। ইডব্লিউজি পর্যবেক্ষণকৃত ভোটকেন্দ্রে সর্বমোট ১৫৯টি নির্বাচনি অনিয়মের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন।

ইডব্লিউজির দাবি, তাদের লিপিবদ্ধ করা অনিয়মের ঘটনার মধ্যে ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা ৬টি কেন্দ্রে, ভোটারকে ভোট কক্ষে প্রবেশের পর আঙ্গুলে কালির ছাপ দিয়ে বলা হয়েছে আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে এমন ঘটনার সংখ্যা ৩টি, পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা ৩টি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ৬টি, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর ঘটনা ২৮ টি, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রার্থীর পক্ষ থেকে যানবাহন সরবরাহ করার ঘটনা ২৪টি, কেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা গেছে ৩০টি, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসতা ঘটেছে ৮টি এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে ৯টি, অবৈধভাবে ব্যালট সিল মারা হয়েছে ২১টি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন ঘটনা ৫টি, অন্যান্য ১৬টি।

আব্দুল আলীম বলেন, ইডব্লিউজির নিয়োগকৃত পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেশিরভাগ (৯৮ শতাংশ) ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত ছিল। নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়েছিল। ভোট গ্রহণ শুরুর সময় সব ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ৩৭.২ শতাংশ কেন্দ্রে ১ থেকে ২০ জন ভোটার, ২০.২ শতাংশ কেন্দ্রে ২০ থেকে ৪০ জন ভোটার এবং ৪০.৩ শতাংশ কেন্দ্রে ৪০ জনেরও বেশি ভোটারের লাইন দেখা গেছে। ভোট গ্রহণের সময়ে ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা ৯৬.৯ শতাংশ ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট এবং ৮১.৪ শতাংশ ভোট কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের দেখতে পেয়েছেন।

http://www.dailysangram.com/post/335839