২৯ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১২:১৮

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি জবরদখলের ইতিহাস

শাহ্ আব্দুল হান্নান

হজরত ইয়াকুব আ: ও তার অনুসারীদের বংশধরকে বনি ইসরাইল বলে। তারা হজরত ইউসুফ আ:-এর সময় মিসর চলে যান। সেখানে তারা বিপুল জনসংখ্যায় পরিণত হন। পরে হজরত মুসা আ:-এর সময় তারা মিসর ত্যাগ করে সিনাই ও ফিলিস্তিনে চলে আসেন।
কুরআনে সূরা বনি ইসরাইলে তাদেরকে বলা হয়েছে, তারা তাদের অবাধ্যতার জন্য দু’টি বড় বিপদের সম্মুখীন হবেন। এসব যখন ঘটে তখন আরো শক্তিশালী জাতি তাদের ফিলিস্তিন থেকে বহিষ্কার করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা সূরা বনি ইসরাইলে উল্লেখ করেছেন, ‘তারা অবাধ্য হলে পরে আরো বিপদ আসবে।’
যা হোক, এভাবে তারা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েন; আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ইউরোপে তাদের বেশিমাত্রায় সুদ খাওয়ার জন্য বদনাম হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ‘A pound of fles’-এর গল্প আছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইহুদিদের একটি অংশ জায়নবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের দাবি ছিলÑ ফিলিস্তিনে তাদের রাষ্ট্র গড়া। একপর্যায়ে ব্রিটেন তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়। ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে তারা ঘোষণা করেন, ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনকে সঠিক মনে করে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর ব্রিটেন ফিলিস্তিনের শাসনক্ষমতায় ছিল। তখন ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসা-যাওয়া শুরু করে। ১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিনের এক অংশে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রস্তাব করে। জাতিসঙ্ঘে মুসলিম রাষ্ট্র মাত্র দু-তিনটি ছিল। তারা ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।

অন্য দিকে, ইহুদি আগ্রাসী গোষ্ঠীগুলো জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক তাদের দেয়া এলাকার চার গুণ বেশি এলাকা দখল করে নেয় এবং সেখানকার স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে।
১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সাথে পাশের আরব রাষ্ট্রগুলোয় যুদ্ধ দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সামরিক সহায়তায় ইসরাইল ফিলিস্তিনের বাকি এলাকা (পশ্চিম তীর, জেরুসালেম) ও সিরিয়ায় গোলান মালভূমি এবং মিসরের সিনাই দখল করে নেয়। পরে তারা মিসরের সিনাই ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া আর কোনো এলাকা ছাড়েনি, অবৈধভাবে দখল করে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধভাবে ভেটো প্রদানের (VETO) কারণে জাতিসঙ্ঘ কিছু করতে পারে না। এই ভেটোর কারণে জাতিসঙ্ঘ কেবল ফিলিস্তিন নয়, কোনো সমস্যাই সমাধান করতে পারে না; যুক্তরাষ্ট্র বা চীন বা রাশিয়ার ভেটো দেয়ার কারণে।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছিল, তা সংক্ষেপে আলোচনা করব। ১৯৪৮-এর যুদ্ধে ইসরাইল ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছিল। ১৯৬৭-এর যুদ্ধে তারা পুরো ফিলিস্তিনই দখল করে। তারপর তারা ৭৭০ বছর ধরে বিদ্যমান মরোক্কান কোয়ার্টার পুরাপুরি ধ্বংস করে দেয়। সেখানে সব অধিবাসীকে বের করে দেয়। পশ্চিম তীরের (West Bank) কালকিলিয়া (Qalqilia) এবং তুল কারেম শহর ধ্বংস করে ১২ হাজার ফিলিস্তিনিকে বহিষ্কার করে ইসরাইল।
এর ফলেই ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়; যেমনÑ ফাতাহ, হামাস ইত্যাদি। ইসরাইলের জবরদখল প্রমাণ করে, ইসরাইল একটি উপনিবেশবাদী শক্তি (Colonial Power)। তারা ৫০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের এলাকা দখল করে রেখেছে। ইসরাইল এসব এলাকায় প্রতিদিনই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে তাদের দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তর করায় সমস্যা আরো জটিল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সমর্থন দেয় অস্ত্রের মাধ্যমে এবং জাতিসঙ্ঘে ভেটো প্রয়োগ করেÑ তাতে এ সমস্যা অচিরে সমাধান হবে বলে মনে হয় না। কবে হবে তা কেউ বলতে পারবে না।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

 

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/328662