২৯ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১২:১৭

গাসিক নির্বাচন ও চক্ষুষ্মানের অন্ধত্ব

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : সম্প্রতি গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন হয়ে গেল। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশন অনেকটা খনার বচন শোনালেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বরং গাসিক নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ‘বাপুরাম সাপুরে’র ভূমিকাই পালন করলো। যা আত্মসচেতন মানুুষকে বেশ হতবাকই করেছে। অনেক অনিয়ম ও প্রকাশ্য ভোট ডাকাতির পরেও নির্বাচন কমিশন খুসিক নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে দেশের মানুষকে প্রবোধ দিয়েছিল। পরে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বীকার করে নিয়েছেন যে, খুসিক নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছে। এখানেই শেষ। তার এই আত্মস্বীকৃতির পরেও নির্বাচনী ফলাফলে কোন প্রভাব পড়েনি বা নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করা হয়নি। বস্তুত খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারই একথা প্রমাণ করেছেন যে, দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এখন অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর নিয়ম তো শূন্যে মিলিয়ে গেছে।
মূলত এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ অন্তত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেই; নিকট অতীতেও ছিল না। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, চুরি, জালভোট, কেন্দ্র দখল ও নির্বাচনী আইন ভঙ্গসহ বিশেষ প্রার্থীকে আনুকূল্য দিতে সবকিছুই করা হবে। এসব অনিয়ম নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে বাচনিক স্বীকৃতি পাবে । কিন্তু অপরাধীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না বা তার প্রতিকার পাওয়া যাবে না। অনিয়মের মাধ্যমে গৃহীত নির্বাচনী ফলাফলও অক্ষুণœ থাকবে। এ নিয়ে কেউ কথা বললে তিনি বাচাল বা মানসিক ভারসাম্যহীন উপাধী পাবেন। প্রয়োজন হলে পাবনায় ভর্তি করিয়ে সনদ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি সিএমএইচ অথবা অস্ট্রেলিয়াও ভাগ্যে জুটে যেতে পারে। কিন্তু ঘোষিত ফলাফলে বিন্দুমাত্র হেরফের হবে না। সাম্প্রতিককালে এসবই নির্বাচনী সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আর অপসংস্কৃতি আখ্যা পেয়েছে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে এমন আত্মপ্রতারণা বিশ্বের আর কোন দেশে আছে বলে জানা যায় না।

এখন এসবও নির্বাচনী সংস্কৃতির অংশ যে, বিজয়ী প্রার্থী বলবেন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পরাজিতরা পরাজয়ের গ্লানি হালকা ও গণরায়কে বিতর্কিত করতেই যতসব বাজে ও অগ্রহণযোগ্য অভিযোগ করছে। অভিযোগের পক্ষে প্রমাণাদি প্রদর্শন করলেও তা বিজয়ীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাছে কোন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য না হচ্ছে, ততক্ষণ কোন অভিযোগকে অভিযোগ বলা যাবে না বরং এসব অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবেও গণ্য হতে পারে। পক্ষান্তরে পরাজিত প্রার্থী নির্বাচনে বিজয়ী দল ভোট ডাকাতি, জালজালিয়াতি, কেন্দ্র দখলসহ নির্বাচনে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ তুলবেন। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমগুলোও বেশ কয়েকদিন সরব থাকবে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই এসব ফুটা বেলুনের মত চুপসে যাবে। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও অনিয়ম অভিযোগ নিয়েই নির্বাচিতরা দায়িত্বগ্রহণ করবেন। চলবে পূর্ণ মেয়াদে। পরাজিতরা থাকবে আমজনতার কাতারে। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার কলঙ্কও তাদের বহন করতে হতে পারে।
ভোটারদের অবস্থা তো আরও বেহাল। ভোট কেন্দ্রে জটলা দেখে প্রাণ ভয়ে একেবারে ভোঁ দৌড় দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কে কার ভোট দিল, কে নির্বাচিত হলো বা পরাজিত হলো এটা নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায়? আগে তো জীবনটা বাঁচানো দরকার। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না গেলে ভোট কেন্দ্রে ভোটের কোন দুর্ভিক্ষ হবে না বরং কোন এক অশরীরি শক্তি এসে আমজনতার পক্ষে ভোট দিয়ে ভোটারদের প্রতি করুণাই দেখাবে। কালেভদ্রে কেউ কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ পেলে বা তিনি বুড়ো মানুষ হলে তাকে জানানো হয় ‘দাদু আপনার ভোট হয়ে গেছে। দাদিও ভোট দিয়ে গেছেন’। তখন বৃদ্ধের আক্ষেপ-আহাজারি করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকে না। কারণ, অকৃতজ্ঞ আসমানী বুড়ি পরপারের আসমান থেকে নেমে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলেও অর্ধশতাব্দীরও অধিককালের দাম্পত্যসঙ্গী বুড়োর সাথে দেখা করার সুযোগ পাবেন না। এটাই বুড়োর জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ। পানিপথ প্রান্তরের বৃদ্ধ বালানাথের ভাগ্যে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া আর কি-ই বা জুটতে পারে ? জায়া হারানো বৃদ্ধ বলে কথা!
এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থানটা বেশ চমকপ্রদ। মনে হয় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই আরও একটি ডকুমেন্ট তৈরি করে ফেলে। সেখানে পূর্ব থেকেই হয়তো লেখা থাকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পরাজিত প্রার্থীর অভিযোগের কোন সত্যতা মেলেনি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিজয়ী প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশন একেবারে একবৃত্তে একাকার। নির্বাচন নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর বক্তব্য শুনলে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শোনার আর কোন প্রয়োজন হবে না। কারণ, নির্বাচন কমিশন বিজয়ী প্রার্থীর বক্তব্যের ছায়াকপিটাই অনুসরণ করেন। এ বিষয়ে গাসিক নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর পক্ষে একটি অতি চমক বক্তব্যই উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা দাবি করেছেন যে, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে কোন অভিযোগ উত্থাপন করলে তার জবাব আসে সরকারি দলের নেতাদের মুখ থেকে’। আর বাস্তবতাও তাদের বক্তব্যেরই অনুকূলে। এসব আর যাইহোক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আওতায় পড়ে না।

যাহোক আগেই বলেছি যে, গাসিক নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের খনার বচনের কোন বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। নির্বাচন পূর্ব সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনাররা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন ঘটেছে তার পুরোপুরি উল্টো ঘটনা। বলা হয়েছিল, গাসিক নির্বাচনে খুসিক নির্বাচনের মত কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। নির্বাচন শেষে নির্বাচন কমিশন সচীব হেলাল উদ্দীন আহমদ বেশ জোড়ালো ভাবেই বলেছেন, গাসিক নির্বাচনে কোন অনিয়মই বরদাস্ত করা হয়নি বিধায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আর তার কথায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে সরকারি দলের নেতাদের মুখেও। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার ভোটগ্রহণে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুললে নির্বাচন কমিশন তা আমলে নেয়নি। ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করে অভিযোগ জানালে তিনি নাকি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে বলেছেন। খুসিক নির্বাচনেও নাকি তিনি বিএনপি মহাসচিবকে দায়িত্বশীল আচরণ করার উপদেশ খয়রাত করেছিলেন। তার এই উপদেশ খয়রাতের কতখানি যৌক্তিক সে কথায় একটু পরে আসছি।

মূলত অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়েই সম্প্রতি গাসিক নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলো সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছিলেন সেগুলোর প্রায় বেশির ভাগেরই প্রতিফলন দেখা গেছে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে। আর এমন নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারদলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বিপুল ভোটের ব্যবধানে গাসিক মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। পরাজিত হয়েছে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি ভোট গ্রহণকালে মোট ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪০০টি কেন্দ্র দখল করে সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণহারে সিল মারার অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপির পুলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচীব রহুল কবির রিজভী পুলিশের বিরুদ্ধে সরকারের ক্যাডার বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালনের অভিযোগ করেছেন। অবশ্য নির্বাচনের আগের দিন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ অবাধ নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে পুলিশ’ এমন শিরোনামে একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। আর রিজভীর অভিযোগের সাথে সে অভিযোগের একটা সাদৃশ্যও পাওয়া যায়। যদিও সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ যুগপৎভাবে অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু কেউ অস্বীকার করলেই বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। কারণ, এসব অনিয়মের প্রত্যক্ষদর্শী খোদ ভোটাররাই।

সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন যুগপৎভাবে গাসিক নির্বাচনে অনিয়মের কথা অস্বীকার করলেও গণমাধ্যমে যেসব সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে সদ্য সমাপ্ত গাসিক নির্বাচনে যে বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সরেজমিনে নির্বাচনে অনেক অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। গাসিক নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদগুলো প্রায় এক ও অভিন্ন। একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিনিধির বর্ণনাতেই যেসব অভিযোগের কথা জানা গেছে সেসব নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ভোটগ্রহণ চলাকালে সরেজমীনে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে গণহারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, এসব কেন্দ্রে বিএনপির পক্ষে কোন পোলিং এজেন্ট চোখে পড়েনি। তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দিতেও দেখেছেন। আর এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সামনেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন যে, সরকারদলীয় প্রার্থীর কর্মীরা দলীয় প্রতীক ও ব্যাজসহ ভোট কেন্দ্রে তৎপর ছিল এবং তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে পোলিং বুথের মধ্যেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান ও পছন্দের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এমনকি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খাদ্য ও কোমল পানীয় সরবরাহ করেছে বলেও তিনি জানিয়ছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় ব্যালটের অভাবে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের স্থগিতের ঘটনাও নাকি ঘটেছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে একটি হচ্ছে কোনাবাড়ীর গ্রেটম্যান প্রাইমারী স্কুলের ৬২ নং ভোট কেন্দ্র। অভিযোগ উঠেছে সকালেই সরকারি দলের কর্মীরা কেন্দ্র দখল করে নিয়ে গণহারে সিল মারার পর ব্যালট শেষ হয়ে গেছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ‘যোগসাজশ করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের। কোনো কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টরা ঢুকতেই পারেনি। কেন্দ্রের গেট থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ মিলেছে। আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর নানকও ভোট চলাকালীন এক সংবাদ সম্মেলনে পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন বহু কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না। তবে তিনি এ জন্য বিএনপির দলীয় কোন্দলকে কারণ দেখিয়েছেন। অনেক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে’।

প্রায় সকল গণমাধ্যমের খবরেই এসব নির্বাচনী অভিযোগের প্রায় ক্ষেত্রেই সত্যতা মিলেছে। এমনকি বিবিসি বাংলাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসব অভিযোগের সত্যতার খবর মিলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও গাসিক নির্বাচন নিয়ে খুবই সক্রিয় ছিল। এসব মাধ্যমে নির্বাচনে অনিয়মের সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কেন্দ্র দখল করে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে গণহারে সিল মারার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অথচ ভোটগ্রহণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ চেয়েছেন। গাসিক নির্বাচনের অনিয়ম গোটা দেশ ও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করলে সরকারি দলের কর্তারা কেন দেখতে পেলেন না তা মোটেই বোধগম্য নয়। এমন চক্ষুষ্মানদের এমন খাম-খেয়ালীপনায় আর যাইহোক দেশ ও জাতির কল্যাণ হতে পারে না।

নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বক্তব্যগুলোও বেশ হাস্যকর। কেন্দ্রে জালভোট প্রমাণ হওয়ার পর প্রিজাইডিং অফিসার সেসব ভোট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কোন পন্থায় কিভাবে কাদের উপস্থিতিতে সেসব ভোট বাতিল করা হলো সে বিষয়ে তার কোন বক্তব্য নেই। বিএনপি’র এজেন্ট না থাকার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেছেন। দাবি করা হয়েছে, বৈধ কাগজপত্রের অভাবে বিএনপি এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আবার বলা হয়েছে বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্রে আসেনি। কোন কোন কেন্দ্রে দাবি করা হয়েছে যে, তারা এসেছিলেন আবার চলেও গেছেন। কেন চলে গেছেন তা তারা জানাতে পারেননি। কেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশ ও গণহারে সিল মারার প্রশ্নে তারা জানিয়েছেন যে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের দেয়া ভাল ভোটগুলোর ভাগ্যে কি হয়ে এসব নিয়ে তাদের কোন সুষ্পষ্ট বক্তব্য নেই। বিএনপির এজেন্ট সংক্রান্ত বক্তব্যে স্ববিরোধিতায় প্রমাণ করে তাদের বক্তব্য শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় বরং রীতিমত হাস্যকর।

মূলত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো খেলোয়ার। আর নির্বাচন কমিশন ভূমিকা হচ্ছে রেফারির। তাই খেলা পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হতে হয় নিরপেক্ষ। তাদের কোন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করার সুযোগ নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে ক্ষেত্রে মোটেই সফল হয়নি বরং প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়; সকল নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বেশ রহস্যজনক। খুসিক নির্বাচনে যখন চরদখলের আদলে কেন্দ্র দখলের মহোৎসব চলছিল, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপি মহাসচিবকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। গাসিক নির্বাচনে যখন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো তখন তিনি সরকারি দলের প্রার্থীর বিজয়কে বৈধতা দেয়ার জন্যই বিএনপি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার পরামর্শ দিলেন। তিনি নিজেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান মনে করলেও দেশের মানুষ যে একেবারে গ-মুর্খ নয় তা অন্তত তার বোঝা উচিত।

যাহোক নির্বাচন কমিশনই যে দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ধ্বংস করেছে এতে আর কেউ সন্দেহ পোষণ করেন না। কমিশনের তেলেসমাতির কারণেই আসমানীরা পরপার থেকে এসে ভোট দেন; ভোটার ছাড়াই ভোটের বাক্স ভর্তি করেন একশ্রেণির স্বেচ্ছাসেবীরা। কিন্তু চক্ষুষ্মান দৃষ্টিহীনরা কিছুই দেখতে পান না। বিজয়ী হন পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীরা। এ অবস্থাকে অন্তত গণতন্ত্র বা নির্বাচন বলার সুযোগ নেই বরং আত্মপ্রতারণা বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত। এ কাজের প্রধান সহযোগী বর্তমান হুদা কমিশন। আর কোন আত্মপ্রতারিত জাতি কোনভাবেই আত্মমর্যাদাশীল জাতি হতে পারে না।

http://www.dailysangram.com/post/335827