গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে। আবার একটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। কেন্দ্র ছিল ৪২৫টি। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ কেন্দ্রের ফল মানবজমিনের হাতে এসেছে। রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৪টি কেন্দ্রে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে।
৪০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১৮টি কেন্দ্রে। সর্বোচ্চ ৯৪ দশমিক ৭ ভোট পড়েছে বসুরা মক্তব মাদরাসা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩,১১৯ জন। আর সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে গাজীপুর হলিসন কিন্ডার গার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার ছিল ৬,০৪৬ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজীপুর সিটিতে ভাসমান ভোটারের সংখ্যা বেশি। সেখানে ৯০ শতাংশের ওপর ভোট পড়া অস্বাভাবিক। আবার ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পড়াও অস্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাজীপুরে বাস্তবে ভোটের হার অনেক কম ছিল। জালভোটের কারণে ভোটের হার বাড়তে পারে। বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের হার বেশি হয়েছে বলেই কিছু কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়-১) ফরহাদ হোসেন জানান, ৯টি স্থগিত কেন্দ্রের প্রায় ২৩ হাজার ভোট রয়েছে। ওইসব কেন্দ্র বাদ দিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গাজীপুরে ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। গতবারের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট স্বাভাবিক। তবে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়াটাও অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেসব কেন্দ্রে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে সেগুলো হচ্ছে- কোনাবাড়ী এমএ কুদ্দুস উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-২ (দ্বিতীয় তলা) (৮৫%), গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮১%), ধুমকেতু প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল-১ (৮০.১৩%), শিলমুন আব্দুল হাকিম মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয়-১ (৮৩%), গোপালপুর কিশোর বিদ্যানিকেতন (৮১.২৭%), নন্দীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৬৭%), বিন্দান উচ্চ বিদ্যালয় (৮৯.৪৬%), বাড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮১%), উধুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৩.৮১%), পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় (৮৯.৫৩%), মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৬%), ইছালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৭.০৮%), শুকুন্দিবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৩.৮৫%), বসুরা মক্তব মাদরাসা (৯৪.০৭%), ইছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৬.৩৭%), খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ (৮১.৫৮%), খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (৮১.৭৪%), ল্যাঙ্গুয়েজ উচ্চ বিদ্যালয় (৮২.২৪%), হাতিমারা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ-২ (৮৩.২৮%), মজলিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৯৯%), মীরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৪৬%), খালিসাবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৮.৫৮%), বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯০.২০%), রোভার পল্লী উচ্চবিদ্যালয় (৮৫.৭৪%)। ৪০ শতাংশের ওপর ভোট যেসব কেন্দ্রে পড়েছে সেগুলো হলো- পাগাড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (৩২.৭৫%), টঙ্গী সানরাইজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩১.৯৬%), বিকাশ স্কুল (২৮.৩১%), সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-১ (৩০.৩১%), সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-২ (৩৯.৮৫%), আমানউল্লাহ একাডেমি (৩৬.৪৫%), কোনাবাড়ী এমএ কুদ্দুস উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-৪ (৩৮.৭৪%), কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ-১ (৩৮.৮৫%), পানিশাইল উচ্চ বিদ্যালয়-২ (৩৫.৫৯%), শহীদ বৃত্তি একাডেমি-২ (৩২.২৪%), ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (২৫.৮৪%), পশ্চিম জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (৩৬.৫১%), মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা-৪ (৩৪.০১%), গাজীপুর হলিসান কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল (১৪.১৪%), গাজীপুর হোসাইনিয়া মাদরাসা-২ (৩১.৯৫%), আব্দুর রহমান মেমোরিয়াল স্কুল (৩৩.৭৯%), অনন্ত মডেল কিন্ডারগার্টেন (৩৮.৬০%), হাজী আহমদ আলী পাবলিক স্কুল (৩৯.৮৯%)। প্রঙ্গত, গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। রিটার্নিং অফিসারের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলটির দাবি শতাধিক কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। গাজীপুরে জালভোটের ‘মহোৎসব’ হয়েছে।
