৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:০০

৭ মাসে কমেছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা: রফতানি আয় কমছেই

দেশের রফতানি আয় শুধু কমছেই। অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৪৩ ভাগ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ আয় বেশি হয়েছে, যা বছরের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই স্বল্প প্রবৃদ্ধি নিয়ে ‘ভিশন-২১’ বাস্তবায়ন কিংবা পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রূপকল্প বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন খোদ রফতানিকারকরাই। তারা বলছেন, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে- এটিই এখন আশংকার বড় কারণ। এটি ভালো লক্ষণ নয়।


রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) পর্যন্ত মাসওয়ারি আয় কমার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবর) সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার ছিল ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এটি ৬ মাসের হিসাবে অর্থাৎ (জুলাই-ডিসেম্বর) কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অর্থবছরের সাত মাসের হিসাবে (জুলাই-জানুয়ারি) তা আরও কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সাল নাগাদ সার্বিক রফতানি খাত থেকে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এককভাবে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের রূপকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অর্জন করতে হলে প্রতিমাসেই রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে ১১ থেকে ১২ শতাংশ হারে। কিন্তু বর্তমান গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হচ্ছে না। এই ধারাবহিকতায় নিন্ম মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো কঠিন হবে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, বৈশ্বিক এবং আর্থিক নানা প্রতিকূলতায় রফতানি আয়ে এই ধাক্কা লেগেছে, যা চলতি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে রফতানিকারকদের আত্মবিশ্বাসেও চিড় ধরেছে। এ পরিস্থিতিতে তারা শংকা প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির চলমান অস্থিরতার কারণে আগামীতে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই তার প্রভাব রফতানিতে পড়তে শুরু করেছে।

এ প্রসঙ্গে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরূহা সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববাজারে রফতানি পরিস্থিতি, ভোক্তার চাহিদা এবং রফতানিকারকদের সরবরাহ সক্ষমতা সব সময় এক তালে চলে না। ফলে বিভিন্ন খাতে রফতানি আয়ে বিভিন্ন সময়ে কম-বেশি বিচ্যুতি ঘটতে পারে। কিন্তু সেটি আবার পূরণ করাও সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে একটা অস্থিরতা চলে আসছে। এর প্রভাব আমদানিকারক দেশগুলোর ভোগ-ব্যয় ও চাহিদাতেও পড়েছে। কিন্তু আমাদের রফতানি খাতে আশার খবর হচ্ছে কয়েকটি খাত ছাড়া বাকি সব রফতানি খাত এবং পণ্যেই ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধিই সামনে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ওদিকে মাসওয়ারি আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ হাজার ১০৪ কোটি ডলার। কিন্তু এ সময়ে আয় হয়েছে ২ হাজার ১১ কোটি ডলার। এ হিসাবে রফতানি আয় কম হয়েছে ৯৩ কোটি ডলারের বেশি। দেশীয় মুদ্রার এর পরিমাণ ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে একক মাস হিসাবে জানুয়ারিতেও কমেছে আয়। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম পাওয়া গেছে ২ দশমিক ৭৬ ভাগ। খাতভিত্তিক আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পোশাক খাতে (নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে শতকরা ৫ ভাগ। এ খাতে ১২ মাসে আয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩৭ কোটি ডলার। সাত মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭২৭ কোটি ডলার। কিন্তু জানুয়ারি শেষে তা অর্জিত হয় মাত্র ১ হাজার ৬৪১ কোটি ডলার। তবে সার্বিক পোশাক খাত এ কম আয় নিয়েই প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ খাতে আশংকার বড় কারণ হচ্ছে ওভেন গার্মেন্টে হতাশাজনক রফতানি আয়।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশে ও বিদেশে আমরা বৈশ্বিক এবং আর্থিক দ্বিমুখী চাপে রয়েছি। ফলে পণ্যের রফতানির পরিমাণ বাড়িয়েও আমরা কাক্সিক্ষত আয় করতে পারছি না। এর দুটো কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমত দেশে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত রফতানি পণ্যের কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়া।

বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে জানান, রফতানি পরিস্থিতি একটা স্থবির অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। যেসব খাতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা খুব কম। ডলারের বিপরীতে টাকার অবস্থান শক্তিশালী হওয়াসহ অভ্যন্তরীণ নানা কারণে আমাদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে আয়ও কম হচ্ছে। যে কোনোভাবে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার বাড়াতে হবে। এটা না পারলে বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়ব। অন্যরা বাজার দখল করবে। এর জন্য দেশীয় রফতানিকারকদের যেসব পদক্ষেপ নিলে সক্ষমতা বাড়ে সে ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পার হলেও বছর শেষে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
http://www.jugantor.com/industry-trade/2017/02/07/99155/%E0%A6%B0%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%87