৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ৭:৫৯

ক্ষমতা নিজেকে নিরঙ্কুশই করতে চায়

অতি সম্প্রতি দুটি ঘটনা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। এর একটি হল শাহজাদপুরে শাসক দলের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহৃত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর আগে তেল-গ্যাস ও বন্দর রক্ষাকারী কমিটির হরতাল পালনকালে সমাবেশের চিত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে দু’জন ফটোসাংবাদিক পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার সম্মুখীন হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজ এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে এসব প্রতিবাদ যতটা কঠোর হতে পারত ততটা কঠোর হয়নি। এর একটি বড় কারণ সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন। রাজনৈতিক আনুগত্য সাংবাদিকদের মধ্যে অতীতেও ছিল। কিন্তু সেই বিভাজন তাদেরকে পেশার স্বার্থে বিভক্ত করতে পারেনি। এখন সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে একাধিক ইউনিয়ন বিদ্যমান। কঠোর প্রতিবাদ করলে রাজনৈতিক প্রভুরা বিব্রত হবেন, তাই প্রতিবাদকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে হয়েছে। দু’একজন পুলিশের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার কথা বললেও বাস্তবে তা সমাদৃত হয়নি। অতীতে পাকিস্তান আমলে, এমনকি এরশাদের আমলে কোনো সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাপের মুখে পড়লে সংবাদপত্রের কোনো কলাম শূন্য রাখা হতো। এর ফলে সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে সাংবাদিকরা নিজেদের বাঁচাতে পারতেন, আবার প্রতিবাদও প্রদর্শন করা যেত। বলা যেতে পারে, সেই সময়ে এটি ছিল প্রতিবাদের ভাষা। এখন দেশে সামরিক শাসক নেই। তদসত্ত্বেও যথোপযুক্ত প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না। এটা একদিকে যেমন সাংবাদিকদের দুর্বলতা, অন্যদিকে তেমনি যারা শাসন করেন তাদের কড়া শাসন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে দলই শাসন ক্ষমতায় থাকুক না কেন, এ রকম পরিস্থিতিকে গণতান্ত্রিক বলে ভাবা যায় না। আমরা আর কতকাল প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করব? যারা এ ধরনের বাড়াবাড়িকে লঘু হিসেবে দেখতে চান তারা হয় অতীতচারী হয়ে ওঠেন অথবা ভিনদেশের দৃষ্টান্ত হাজির করেন। সদ্য দায়িত্ব গ্রহণকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিডিয়ার ওপর প্রচণ্ড উষ্মা প্রকাশ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রমনা মানুষ ট্রাম্পের এই উষ্মাকে সহজভাবে মেনে নেয়নি। তারা প্রতিবাদ করছে। এ ছাড়া অতীতের মন্দ কাজের দৃষ্টান্তকে হাজির করে বর্তমানের মন্দ কাজকে জায়েজ করার চেষ্টা খুবই বিপজ্জনক। এমন ধারা চলতে থাকলে দেশের মানুষ অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাবে না।


দৈনিক যুগান্তর ‘শাসক দলে কেন এত খুনোখুনি’ শিরোনামে ৫ ফেব্রুয়ারি লিড নিউজ করেছে। যুগান্তরের প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘স্বার্থ আর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে বের হতে পারছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়াও খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। মাঝে মধ্যে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু থামছে না। খুন হচ্ছেন দলীয় লোকজন। এমনকি গুলি করে সাংবাদিক মেরে ফেলতেও কেউ কেউ দ্বিধা করছেন না।’ বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপ করে যুগান্তরের প্রতিবেদক এসব ঘটার কারণ হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন, শাস্তি না হওয়া, ভাগাভাগির দ্বন্দ্ব, মনোনয়ন ও পদ-পদবির লড়াই এবং এলাকায় কে বেশি ক্ষমতাবান- এমন প্রতিযোগিতা।

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় এবং জামালপুরে একই ধরনের দুটি ঘটনা ঘটেছে। বিগত ২৯ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায় নীলকমল ওসমানিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন পাটওয়ারী ছাত্রদের পিঠ দিয়ে সেতু বানিয়ে তার ওপর দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে যান। ওই একই দিনে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে একই ঘটনা ঘটে। দেশের দুই প্রান্তে একই ধরনের ঘটনা ঘটা নিছক কাকতালীয়, না অন্য কিছু তা নিয়ে হাজারও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। যারা এই জঘন্য কাজটি করেছেন তারা কি এটাকে এক ধরনের জিমন্যাস্টিক বলে মনে করেছিলেন? তারা মুহূর্তের জন্যও ভাবতে চাননি এমন কিছু করলে তা হবে মানবতার চরম অবমাননা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে হবে চরম পৈশাচিকতা। মানুষ কেন সুন্দরকে পরিহার করে চরম অসুন্দর এবং অভব্যতাকে ধারণ করে সেটা এক গভীর জিজ্ঞাসা। ক্ষমতার প্রতিপত্তি জাহির করার জন্য এই ধরনের কুৎসিত কাজে কেউ লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে এমন যুক্তি সবটুকু ব্যাখ্যা করে না। নিঃসন্দেহে এ ধরনের অবাঞ্ছিত কার্যকলাপের মধ্যে উরৎঃু ঢ়ড়বিৎ বীযরনরঃরড়হরংস-এর একটি উপাদান আছে। তবে আরও যে বেশকিছু কারণ আছে সেটা আমাদের ভাবতে হবে।

ক্ষমতার মোহ ক্ষমতা ভোগ করার অভিজ্ঞতা থেকে বিশালভাবে বৃদ্ধি পায়। এটা কেবল বড় ক্ষমতাধরদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, ছোটখাটো ক্ষমতাবানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দার্শনিক রাসেল লিখেছেন, ১৯১৪ সালের আগে অর্থাৎ প্রথম মহাযুদ্ধের আগে অবস্থাপন্ন মহিলারা অনেক চাকর-বাকর সংগ্রহ করতে পারতেন। এসব গৃহকর্মীর ক্ষমতা প্রয়োগের অভ্যাস কালে কালে বৃদ্ধি পায়। একইভাবে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকার যতই ক্ষমতা ভোগ করতে থাকে ততই সেই সরকার অধিকতর নিপীড়ক হয়ে ওঠে। কারণ ক্ষমতার অভিজ্ঞতায় একটি মজা আছে। মানুষ যা করতে রাজি নয় তা করতে বাধ্য করার মধ্যে ক্ষমতাপ্রেমিকরা এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করেন। কারণ ক্ষমতাপ্রেম আনন্দদানের চেয়ে কষ্ট দেয়ার মধ্যে স্ফূর্তি খুঁজে পায়। আপনি যদি যথার্থ প্রয়োজনে আপনার ওপরওয়ালার কাছ থেকে ছুটি চান, তাহলে ছুটি অনুমোদন করার চেয়ে ছুটি অনুমোদন না করার মধ্যেই তিনি পরিতৃপ্তি খুঁজে পাবেন। আপনি যদি একটি বাড়ি তৈরি করার অনুমোদন চান তাহলে একজন ক্ষুদে কর্মকর্তা হ্যাঁ বলার চেয়ে না বলাতেই বেশি আনন্দ পাবেন। এভাবেই ক্ষমতাপ্রেম বিপজ্জনক প্রেরণায় পরিণত হয়। কিন্তু এর ভিন্ন একটি দিক রয়েছে, যা অনেক বেশি কাক্সিক্ষত। রাসেল মনে করেন, জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ ক্ষমতাপ্রেম দ্বারাই তাড়িত হয়। একইভাবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলেও ক্ষমতাপ্রেম কাজ করে। রাজনীতিতে একজন সংস্কারকের যতটা ক্ষমতাপ্রেম থাকতে পারে, একজন স্বৈরশাসকের ঠিক ততটাই ক্ষমতাপ্রেম থাকে। সুতরাং ক্ষমতাপ্রেমকে পুরোপুরি খারাপ মনোভাব হিসেবে নিন্দা করা সঠিক নয়। কে ক্ষমতাকে সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে এবং কে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে, সেটা পুরোপুরি সমাজব্যবস্থা এবং ক্ষমতাবানের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। যদি এ সক্ষমতা তাত্ত্বিক কিংবা প্রযুক্তিগত হয়, তাহলে এর ফলে জ্ঞানের অগ্রগতি ঘটবে। এ ধরনের কাজ মানুষের উপকারে আসবে। আপনি যদি রাজনীতিবিদ হন, তাহলে আপনার মধ্যে ক্ষমতাপ্রেম কাজ করতে পারে। এর ফলে আপনার দেশ ও সমাজে আপনি পরিবর্তন আনতে পারবেন। আপনার দৃষ্টিতে এই পরিবর্তন বিদ্যমান পরিস্থিতির তুলনায় উন্নততর। আলসিয়াবিয়াডেস-এর মতো একজন সেনাপতি কোন পক্ষে যুদ্ধ করছেন সে ব্যাপারে উদাসীন থাকতে পারেন। কিন্তু বেশিরভাগ সেনাপতিই নিজ দেশের পক্ষে যুদ্ধ করেন। এ ধরনের সেনাপতির ক্ষমতাপ্রেম ছাড়াও মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। রাজনীতিতে একদল লোক আছে যারা প্রায়ই দল পরিবর্তন করে এবং নিজেকে সংখ্যাগরিষ্ঠের দলে রাখে। কিন্তু অধিকাংশ রাজনীতিবিদ কোনো না কোনো দলের প্রতি অনুগত। তাদের কাছে ক্ষমতার চেয়ে দলীয় আনুগত্য অনেক বেশি মূল্যবান। বিভিন্ন মানুষের চরিত্রে ক্ষমতাপ্রেম প্রায় পুরোপুরি খাঁটি অবস্থায় থাকে। এদের একদল হচ্ছে সৌভাগ্যের যোদ্ধা। এদের মধ্যে নেপোলিয়ন বড় দৃষ্টান্ত। নেপোলিয়নের মধ্যে কর্সিকার তুলনায় ফ্রান্সের প্রতি আদর্শগত অগ্রাধিকার ছিল না। তিনি যদি কর্সিকার সম্রাট হতেন তাহলে একজন ফরাসি হিসেবে ভান করে যত বড় হতে পেরেছেন ততটা হতে পারতেন না। এ রকম মানুষের দৃষ্টান্ত খাঁটি দৃষ্টান্ত নয়। কারণ তারা গর্ব করে প্রচুর তৃপ্তি অনুভব করে। সবচেয়ে খাঁটি দৃষ্টান্ত হল সিংহাসনের পেছনের সেই ক্ষমতা যা কখনও জনসমক্ষে আসে না। তারা নিজের মধ্যে ভাবতে থাকেন, পুতুলগুলো কতটুকুই বা জানে, তাদের সুতাকে কে টানছে। ব্যারন হলস্টেইন ১৮৯০ সাল থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত জার্মান সাম্রাজ্যের পররাষ্ট্রনীতির ওপর যে কায়দায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন, সেটা হল এমন এক ক্ষমতার দৃষ্টান্ত যা মূর্তিমান না হয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ আড়াল রাখতে পেরেছে। তিনি বস্তিতে থাকতেন। সমাজজীবনে আবির্ভূত হতেন না। সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা থেকে তিনি বিরত থাকতেন। শুধু একবারই তিনি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যখন তিনি সম্রাটের নির্দেশের তীব্রতাকে অস্বীকার করতে পারেননি। তিনি রাজদরবারের সব অনুষ্ঠানে যোগদান করা থেকে বিরত থাকতেন। তার অজুহাত ছিল রাজদরবারের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার মতো পোশাক তার নেই। তিনি এমন সব গোপন তথ্য আয়ত্ত করেছিলেন যার মাধ্যমে তিনি চ্যান্সেলর এবং কাইজারের আত্মীয়দের ব্ল্যাকমেইল করতে পারতেন। তিনি ব্ল্যাকমেইল করার ক্ষমতা সম্পদ আহরণের জন্য অথবা সুনাম কুড়ানোর জন্য অথবা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার জন্য অর্জন করেননি। তিনি শুধু চেয়েছিলেন জার্মানি সেই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে যা তার পছন্দের।

রেনেসাঁর যুগে ইতালিতে একজন রাজপুত্র ছিলেন যার মৃত্যুশয্যায় যাজক তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কোনো কিছু নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা আছে কিনা। রাজপুত্র হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, একটা বিষয় আছে। একদা আমার বাড়িতে সম্রাট এবং পোপ একসঙ্গে এসেছিলেন। আমি তাদেরকে আমার টাওয়ারের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যাই যাতে তারা আশপাশের দৃশ্য দেখতে পান। আমি তাদের দু’জনকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়ার সুযোগ অবহেলা করেছি। তাদের ফেলে দিলে আমি অমরত্বের গৌরব অর্জন করতে পারতাম। ইতিহাস থেকে জানা যায় না, যাজক তাকে ক্ষমা করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন কিনা। যারা গর্ব করে তারা গর্বের উৎসের শক্তি দিয়ে তাকে টিকিয়ে রাখে। একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে যদি সংবাদপত্রে তার বিচারের খবর পড়তে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সে ওইসব পত্রিকার ওপর গোস্বা প্রকাশ করবে যেগুলো তার বিচার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। যত বেশি পত্রিকায় সে রিপোর্টটি পড়বে ততই সে রিপোর্ট সংক্ষিপ্তকারী পত্রিকার ওপর রাগান্বিত হবে। রাজনীতিবিদ কিংবা লেখকদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। যতই তারা বিখ্যাত হয়ে ওঠেন, ততই প্রেস কাটিং এজেন্সিগুলো তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হন না। সব মানুষের মধ্যেই আত্মগর্বের প্রভাব থাকে। সেই মানুষটি ৩ বছরের শিশু হতে পারে অথবা ট্রাম্পের মতো ক্ষমতাবান ব্যক্তিও হতে পারেন, যার অঙ্গুলি হেলনে বিশ্ব কম্পমান হয়।

ক্ষমতা সম্পর্কে দার্শনিক রাসেলের এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর এ দেশে যারা হাইমচর ও জামালপুরের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের মনোজগৎ সম্পর্কে ধারণা করা মুশকিল। তারা কি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম হতে চেয়েছে? তারা কি আত্মগর্বে উন্মাদ? তারা কি চমক দেখিয়ে নিজেদেরকে আরও ক্ষমতাবান প্রমাণ করতে চেয়েছে? তারা কি এমন কোনো গোপন তথ্যের অধিকারী যা দিয়ে তারা অন্যদের ব্ল্যাকমেইল করতে চায়? ক্ষমতা ভালো কাজের জন্য যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি খারাপ কাজের জন্যও করা যায়। ইংল্যান্ডের রাজা কিংবা রানীর গৌরব প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি ক্ষমতাভোগ করেন। অনেক মানুষের কাছে ক্ষমতার তুলনায় গৌরবই কাম্য। কিন্তু ইতিহাসের গতিপথ যারা প্রভাবিত করেছেন, তারা গৌরবের চেয়ে ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়েই তা করতে পেরেছেন। আমাদের দেশে ক্ষমতার সংযোগে মহৎ কিছু অর্জনের তুলনায় কুৎসিত ও নোংরা কাজেরই ঢের বেশি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে যদি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো, তাহলে সাধারণ মানুষ রাজনীতি নিয়ে এখনকার মতো উদাসীন থাকত না। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ভালো কাজের জন্য ব্যবহারের অনেক সুযোগ থাকলেও মন্দ কাজের প্রবণতাই অনেক বেশি প্রবল। এর জন্য এখনকার আর্থসামাজিক অবস্থাই দায়ী। লুণ্ঠন ও তস্করবৃত্তির মাধ্যমে যে সমাজে ধন-সম্পদের ক্ষমতা অর্জন করা যায়, সেই সমাজে বিকাররূপে হাইমচর ও জামালপুরের মতো ঘটনা ঘটে। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন তীব্র হয়। কারণ ছোট-বড় সবারই চাই বাড়তি ক্ষমতা।

ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
http://www.jugantor.com/sub-editorial/2017/02/07/99082/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B6%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A7%9F