২৪ জুন ২০১৮, রবিবার, ২:৩৭

লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি আর অদক্ষ শ্রমিকের কারণেই রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে

লাইসেন্সবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি আর অদক্ষ চালকদের কারণেই সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার শিকার গাড়িগুলোর বেশির ভাগ চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। তাদের বেপরোয়া গতিতে প্রাণ যাচ্ছে পথচারীদের। এসব দেখার দায়িত্বে যারা রয়েছেন সেই বিআরটিএও নির্বিকার। সড়ক-মহাসড়কে তাদের মনিটরিং নেই বললেই চলে; যে কারণে একের পর এক দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে অগণিত মানুষ।

গতকাল দেশের সাত জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নিহতের ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে। সেখানে বাস উল্টে ১৮ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নাটোর, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও সাভারের আমিনবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। দুই দিন আগে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে পাঁচজন নিহত হন। আহত হয়েছেন আরো ৩০ জন। গতকাল একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরব হয়ে উঠেছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে অনেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি তুলেছেন।
একাধিক পরিবহন শ্রমিক বলেছেন, সড়ক-মহাসড়কে এখন প্রচণ্ড ভিড়। ঈদের ছুটি শেষে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। সে কারণে পরিবহনের ওপর চাপ বেড়েছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন পরিবহন শ্রমিকেরাও। ঈদের আগে যেসব চালক দিন-রাত গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই এখন বিশ্রামে আছেন; যে কারণে অনেক যানবাহন চালাচ্ছেন অদক্ষ শ্রমিকেরা। যাদের অনেকের লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। ফলে রাস্তায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে। একাধিক সূত্র বলেছে, যে পরিমাণ গাড়ি রয়েছে তার চেয়ে চালকের সংখ্যা অনেক কম। ফলে আনাড়ি চালকদের দিয়ে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকেরা। তরুণ শিকদার নামের এক গাড়ি মালিক বলেছেন, প্রশিক্ষিত চালকের অভাব রয়েছে। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদেরও অনেকের অ্যাকাডেমিক কোনো জ্ঞান নেই। ওস্তাদের কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখে তারাই এখন পাকা ড্রাইভার। তিনি বলেন, কোনো মালিকই চায় না তার গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হোক। কোনো মালিকই চান না একজন অদক্ষ চালকের হাতে কোটি টাকা দামের গাড়িটি ছেড়ে দিতে। কিন্তু কোনো উপায় থাকে না। আবার অনেক সময় দেখা যায় একজন চালক গাড়ি নিয়ে বের হন; আর দিনভর গাড়ি চালান অন্য চালক।
এ দিকে রাস্তায় একের পর এক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিলের জন্য বিশেষজ্ঞরা অদক্ষ শ্রমিকদেরই দায়ী করলেন। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। যাদের দায়িত্ব শ্রমিক তৈরি করা তারা তা করছেন না। সরকারের দক্ষ চালক তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। এ সুযোগে অদক্ষ শ্রমিকেরা গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান বলেন, রাস্তায় ৩২ লাখ গাড়ি রয়েছে। চালক রয়েছেন ২১ লাখ। বাকি গাড়ি চালানোর কোনো লোক নেই; যে কারণে লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ শ্রমিকেরা গাড়ি চালাচ্ছেন। দক্ষ চালক তৈরি না করে একের পর এক গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। দক্ষ চালক তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালালে সেখানেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী গতকাল বলেছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫২ জন। রাস্তায় যাদের মনিটরিং করার কথা তারা ঘুমিয়ে আছেন; যে কারণে চালকেরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। তিনি বলেন, চলছে লক্করঝক্কর গাড়ি। কিন্তু দেখার কেউ নেই। ঈদের আগে মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তারা বিভিন্ন স্থানে দৌড়িয়েছেন। কিন্তু এসব লোক ঈদ শেষে যে কর্মস্থলে ফিরবেন তা ভুলে গেছে কর্তৃপক্ষ; যে কারণে কোনো মনিটরিং নেই। মোজাম্মেল চৌধুরী বলেন, গাইবান্ধায় যে গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তার তো ফিটনেসই নেই। গাড়িটি গাছের সাথে লেগে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
এ দিকে মৃত্যুর মিছিল নিয়ে অনেকেই দোষ দিয়েছেন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের ওপর। এ ব্যাপারে জানার জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/327346/