রাজধানীতে গতকাল সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ছবিটি বনানী এলাকা থেকে তোলা -ইনকিলাব
২৪ জুন ২০১৮, রবিবার, ২:৩২

বৃষ্টিতে ভোগান্তি রাজধানীবাসীর

রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতা আর যানজটের ভোগান্তি নতুন নয়। স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই রাজপথ ও অলি-গলিতে পানি জমে যায়। এ পানিতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকা বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। এতে নাগরিকদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায়। পানি জমতে যে সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় লাগে পানি সরতে। এ জন্য নগরবাসী দুষছেন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে। তাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না।

দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খানাখন্দক ও খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে আছে। কোথয় সমতল আর কোথায় খানাখন্দ বুঝার উপায় নেই। এ সব সড়কে প্রতিদিন অহরহ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গতকালের বৃষ্টিতে এ সড়কগুলোদিয়ে চলাচলকারীদের পড়তে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বারবার জানানোর পরও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছে না। দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা অফিসে বহু অভিযোগপত্র জমা পড়লেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রাজধানী ঢাকাকে শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে ঢাকা ওয়াসা যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তাও মুখ থুবড়ে বড়েছে বলে জানা গেছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। একদিকে বর্ষা অন্যদিকে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে নগরবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত। ঈদের পর গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিহীন ভ্যাপসা গরম থেকে সবাই একটু শস্তির আশায় অপেক্ষা ছিলেন, কখন নামবে স্বস্তির বৃষ্টি। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ১০টার পর সে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তির শুরু রাজধানীতে। ঈদুল ফিতরের ছুটির পর গতকাল মানুষের কর্মব্যস্ততায় রাজধানীতে ফেরে চাঞ্চল্যতা, সঙ্গে যানজটের ভোগান্তিও। যানজটের কবলে অফিসগামী চাকরিজীবী, স্কুল, মাদরাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়ে বিপাকে। বিশেষ করে বয়ষ্ক ও রোগী নিয়ে স্বজনদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে যানজট।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সরেজমিনে, রাজধানীর আগারগাঁও বিজয় সরণি, সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের এলাকায় পানিজট দেখা গেছে। পানি জটের কারণে রাস্তায় স্থবির হয়ে পড়ে যান চলাচল। সঙ্গত কারণে সড়কে যানজট দেখা দেয়। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে যানা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের যথাসম্ভব চেষ্টা সত্তে¡ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় যানজট আরো বেড়ে যায়।
রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট থেকে কাওরান বাজার, পান্থপথ সিগন্যাল থেকে ৩২ নম্বর ও ধানমন্ডি ২৭ থেকে সায়েন্সল্যাবের রাস্তায় মাঝারি যানজট তৈরি হলেও অন্যান্য রাস্তা বৃষ্টিতে ফাঁকা দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে রাজধানীর গুলিস্তান, সিদ্দিক বাজার, বাবুবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্নি এলাকায় সড়কে পানি থৈ থৈ করছে। পুরাতন ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি দ্রæত নিষ্কাশন হতে না পেরে মুল সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। এছাড়াও মুগদা, মানিকনগর, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, টাউন হল, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কাওরান বাজার, গুলশান, বনানী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বিজয় সরণি ঢোকার মুখের উভয় পাশের সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণি ও মহাখালী থেকে ফার্মগেট যাওয়ার সড়কেও যান চলাচলে স্থবির অবস্থায় লক্ষ্য করা যায়। কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনে সড়কেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অনেক পথচারীকে হাঁটুর ওপরে প্যান্ট গুটিয়ে জুতা হাতে হাঁটতে দেখা গেছে।
বৃষ্টি কমার পরপরই রাজধানীর গুলিস্তান, বঙ্গভবন, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রাপা প্লাজা সংলগ্ন সড়ক, গ্রিন রোড, বাড্ডা, মিরপুরের কাজীপাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পের পাশের সড়ক, মিরপুর ১০ নম্বর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। সেসব সড়কে গণপরিবহন ও রিকশা না থাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি পেরিয়ে পায়ে হেঁটে অনেককে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। পানিবদ্ধতার কারণে রাজধানীর মিরপুর রোড, শ্যামলী, মিরপুর ১০ নম্বর, ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকায় যানজট দেখা গেছে। এসব সড়কের সিগন্যাল পার হতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/137891/