২২ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১১:৩৫

অদক্ষ ড্রাইভাররা চালকের আসনে

কান্ত ও অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন মালিকেরা। আর সে কারণেই ঈদ-পরবর্তী সময়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে মালিকদের কেউ কেউ বলেছেন, টানা গাড়ি চালানোর পরে দক্ষ চালকেরা কান্ত হয়ে পড়ায় অদক্ষদের হাতে গাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এ দিকে অনেকেরই অভিযোগ হলোÑ রাস্তাঘাটে মনিটরিং না থাকায় চালকেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন; যে কারণে একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে পথচারীদের।

গতকালও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় খুলনা-সাতীরা মহাসড়কে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৩০ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যদর্শীরা জানান, কয়রা থেকে খুলনাগামী একটি বাস গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা-সাতীরা মহাসড়কের বরাতিয়া এলাকায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। ঈদ উপলে খুলনা থেকে কয়রায় গ্রামের বাড়ি যাওয়া অনেক দিনমজুর এ বাসে করে খুলনা ফিরছিলেন। বাসের ছাদে অন্তত ৩০ জন যাত্রী ছিলেন। ঘটনাস্থলেই এদের পাঁচজন নিহত হন।
বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ঈদ-পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ বিভিন্ন কর্মস্থলে আবার যোগদান করবে। সাধারণ মানুষ যাতে নিরাপত্তার সাথে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারে তার জন্য সড়ক পরিবহনের মালিকেরা ঈদ-পূর্ববর্তী যেসব শ্রমিক গাড়িতে নিয়োজিত ছিলেন তারা লাগাতারভাবে গাড়ি চালানোর ফলে অবশ্যই শরীর কান্ত হয়ে ও চোখে ঘুম নিয়ে এখন আর গাড়ি চালানো উচিত নয়। গাড়িতে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য গাড়ি মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আলী রেজা বলেন, এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছে মালিক পক্ষ। তিনি বলেন, ঈদের আগে টানা গাড়ি চালিয়ে চালকেরা ছিলেন কান্ত। অনেকে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চালকের আসনে থাকেন। তাদের ঘুম নেই, খাওয়া নেই। কখনো কখনো ফেরিঘাটে একটু সময় পেলে তারা ঘুমিয়ে নেন। তাতে তাদের কান্তি দূর হয় না। এসব চালকের দিয়ে গাড়ি চালালে অবশ্যই দুর্ঘটনা ঘটবে।
ঈদ-পরবর্তী সময় বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অদক্ষ ও কান্ত শ্রমিকদের দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে। দক্ষ শ্রমিকেরা যখন টানা গাড়ি চালানোর পর কান্ত হয়ে পড়েছেন, তখন মালিকেরা বাধ্য হয়ে বদলি দিয়েছেন। কিন্তু বদলিতে যাদেরকে দেয়া হয়েছে তারা দক্ষ চালক নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সায়েদাবাদের এক পরিবহন মালিক বলেছেন, দক্ষ চালক তো ইচ্ছা করলেই পাওয়া যাবে না। যারা দক্ষ তারা নিয়মিত গাড়ি চালান। তারা যখন কান্ত তখন বাধ্য হয়েই তাদেরকে অদক্ষ শ্রমিকদের ওপর গাড়ি ছাড়তে হয়েছে।
নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, চালকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণের দাবি বহু পুরনো। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, দক্ষ চালকের অভাব রয়েছে। দক্ষ চালক তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, এ দায়িত্ব সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর। সরকার সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। এ সুযোগে অদক্ষ শ্রমিকেরা গাড়ি চালাচ্ছেন। আর দুর্ঘটনা ঘটছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমানও দুষলেন সরকারকে। তিনি বলেন, রাস্তায় ৩২ লাখ গাড়ি রয়েছে। চালক রয়েছেন ২১ লাখ। বাকি গাড়ি চালানোর কোনো লোক নেই। উল্টো সরকার প্রতিদিনই নতুন গাড়ির লাইসেন্স দিচ্ছে। সাইদুর রহমান বলেন, দক্ষ চালক তৈরি না করে একের পর এক গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। দক্ষ চালক তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই। সাইদুর রহমান বলেন, চালকেরা গাড়ি চালাতে চালাতে কান্ত হয়ে পড়লে অবশ্যই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। তেমনিভাবে অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালালে সেখানেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/326841