২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৮

খাদ্যশস্য আমদানিতে রেকর্ড

দেশে খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছর ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি হলেও চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত তা কোটি টনে পৌঁছে গেছে। গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি বিনা শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দেয়ার কারণে আমদানি বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৩১ মে পর্যন্ত খাদ্যশস্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে এক কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার টনের। ১২ জুন পর্যন্ত খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ৯৯ লাখ ১২ হাজার টন। যদিও চলতি সপ্তাহে তা এক কোটি টন ছাড়িয়েছে। এর মধ্েয চাল আমদানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৯ হাজার টন, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ছিল মাত্র এক লাখ ৩৩ হাজার টন। অন্যদিকে গম আমদানি হয়েছে ৫৮ লাখ ৫২ হাজার টন। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে খাদ্যশস্যটি আমদানি হয়েছিল ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টন। অর্থাৎ গম আমদানি ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২ টন বাড়লেও চাল আমদানি বেড়েছে ৩৯ লাখ ২৬ হাজার টন।

গমের আমদানি কৃষকের খুব বেশি ক্ষতি না করলেও চাল আমদানি বৃদ্ধি কৃষকের ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করছেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক। তিনি বলেন, শুল্ক ছাড়ের কারণে বাছ-বিচারহীনভাবে চাল আমদানি করা হয়েছে। তা না হলে চালের চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যে গরমিল আছে। সাময়িক অসুবিধায় শুল্ক কমানো হলেও এটি যখন বাড়ানোর প্রয়োজন, তখন তা করা হয়নি। এতে বোরো মৌসুমে মিলারদের কাছে বাড়তি চাল থাকায় কৃষকের কাছ থেকে তারা ধান কেনায় আগ্রহী হয়নি। এতে স্বল্পমূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক।
আমদানির মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ মুনাফা দিয়ে ধান উৎপাদনে কীভাবে কৃষককে ধরে রাখা যায়, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। এর জন্য সারের পাশাপাশি যান্ত্রিকীকরণ ও সেচে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। সরকারি সংগ্রহ কার্যক্রমে চালের পরিবর্তে ন্যূনতম ৪০ লাখ টন ধান সংগ্রহ করতে হবে।
গত কয়েক বছর সরকারিভাবে চাল আমদানি না হলেও চলতি অর্থবছরে তা কয়েক গুণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ১৫ হাজার টন। এছাড়া গম আমদানি হয়েছে চার লাখ ৭৬ হাজার টন। সরকারিভাবে মোট খাদ্যশস্য আমদানি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টন দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে ২৯ লাখ ৪৩ হাজার টন। এ প্রক্রিয়ায় গম আমদানি হয়েছে ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। অর্থাৎ বেসরকারিভাবে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ৮৩ লাখ ১৯ হাজার টন। গত অর্থবছরে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, একদিকে চালের মজুদ কমে যাওয়া, অন্যদিকে সংগ্রহ কার্যক্রমে ব্যর্থতার কারণে অবাধে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সময়মতো সেটি তুলে নেয়া কিংবা আবার আরোপ করাটা সঠিকভাবে হয়নি। এতে ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি কৃষকরাও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর লাভবান হয়েছেন শুধুই মিলার ও চাল ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, এর আগে মাত্র দুটি অর্থবছরে ৫০ লাখ টনের ওপর খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে দেশে। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ৫২ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫৩ লাখ ১৩ হাজার টন। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চালের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুল্কহার ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর সঙ্গে তিন শতাংশ যোগ হয় নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক। সব মিলিয়ে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্কারোপ ছিল। কিন্ত গত অর্থবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলে আগাম বন্যা এবং সারা দেশেই কম-বেশি বøাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে চালের উৎপাদন কমে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চালের উৎপাদন কম হয় তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ টন। ফলে সরকার চাল আমদানিতে প্রায় সব ধরনের শুল্ক তুলে নেয়। এছাড়া বিনা মার্জিনে ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে উৎসাহিত করা হয়। যদিও আগামী অর্থবছরের বাজেটে তা ২৮ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/137454