২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৭

নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে হাওর অঞ্চল

নদী তীরবর্তী এলাকার বন্যা পরিস্থিতি এখন অনেকটা উন্নতির দিকে। কিন্তু নতুন করে বন্যা-দুর্ভোগে পড়েছেন হাওর পাড়ের মানুষ। ২-৩ দিন থেকে উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাত না থাকায় কমছে বানের পানি। বন্যাকবলিত গ্রাম ও শহরের বসতভিটা ও রাস্তাঘাট থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। বন্যাকবলিত হচ্ছে হাওর অঞ্চল। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি হাওরে গিয়ে পড়ায় এখন হাওর এলাকায় বন্যার ঘনঘটা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান মঙ্গলবার বিকেল থেকেই জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওরের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে পানি অল্প করে বাড়লেও এখন তা দ্রুত বাড়ছে। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি উজান বেয়ে হাওরে পড়ায় উপচে পড়া পানিতে হাওর এলাকায় নতুন করে বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া মঙ্গলবার কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কাউয়াদিঘি হাওর এলাকার ১০-১৫টি গ্রামে হঠাৎ করে বানের পানি প্রবেশ করায় সৃষ্টি হয় আকস্মিক বন্যা। হঠাৎ করে এই দুটি হাওরে বানের পানি অস্বাভিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হচ্ছে তীরবর্তী গ্রাম। বন্যার পানি উঠতে শুরু করেছে হাওর পাড়ের গ্রামের বাসিন্দাদের বসতবাড়ি ও চলাচলের রাস্তায়। ইতিমধ্যেই বসতভিটায় পানি উঠেছে হাওরের অতি সন্নিকটের অনেক গ্রামেই। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের বসতঘর ও ক্ষেত-কৃষি। ডুবতে শুরু করেছে হাওর অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলও। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাদের দুর্ভোগও। হাওর এলাকায় নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। গতকাল সরজমিনে হাকালুকি হাওর এলাকায় গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান সোনাই নদী, জুড়ী নদী, কণ্ঠিনালা ও ফানাই নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে ওই নদীগুলোতে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর উজান হচ্ছে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা। এসব নদী বেয়ে পানি হাকালুকিতেই আসে। আর সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে বের হয়। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী যখন হাকালুকির অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারে না তখনই হাওর তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। গেল কয়েকদিন থেকে বাড়ছে হাকালুকি হাওরের পানি। গেল ৩ দিন থেকে হাকালুকি হাওর পাড়ের দাসের বাজার ভায়া আজিমগঞ্জ ও বাছিরপুর এরজিইডির রাস্তার কয়েকটি স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জুড়ী উপজেলার সামন ও জুড়ী চৌমুহনার সড়ক ও জনপথের পাকা রাস্তায়ও পানি উঠেছে। এছাড়া হাওর পাড়ের কয়েকটি সড়কেও পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলেছেন আর ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেলে হাওর পাড়ের বসতবাড়ির সঙ্গে অনেক সড়কই পানিতে নিমজ্জিত হবে। হাকালুকি হাওর পাড়ের ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাসিন্দা কয়েছ আহমদ বটলাই, আহমদ আলী, আকুল মিয়া, নজমুল মিয়া, গুলজার মিয়া, ছয়ফর মিয়াসহ অনেকেই জানান গেল কয়েক দিন থেকে আমরা বন্যার ভয়ে আছি। হাওরে পানি দ্রুত বাড়ছে। তারা জানান হাওর তীরবর্তী সাদিপুর, কুরবানপুর, মিরশংকরপুর, গৌরিশংকরপুর ও মহিশঘরী এলাকায় বানের পানি বসতবাড়িতে উঠেছে। ডুবিয়ে দিয়েছে ক্ষেত-কৃষিও। মদনগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আবদুল কাদির বলেন, গত বছরের মতো এবারো আমাদের স্কুলটি বানের পানি ডুবিয়ে দিয়েছে। আমাদের স্কুলের মতো হাওর পাড়ের অনেক স্কুলই এখন বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা অংশের ২৫-৩০ টি গ্রাম এখন বন্যায় আক্রান্ত। একই অবস্থা কাউয়াদিঘি হাওরেরও। হাওর তীরবর্তী মৌলভীবাজার ও রাজনগর উপজেলার ৩৫-৪০টি গ্রাম বানের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। হাকালুকির কুলাউড়া অংশে ভূকশিমইল,কাদিপুর,জয়চন্ডি,ভাটেরা,বরমচাল ও ব্রাহ্মণ বাজার ইউনিয়ন। জুড়ীর পশ্চিম জুড়ী ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন। বড়লেখার সুজানগর,বর্ণি ও তালিমপুর ইউনিয়ন। আর কাউয়াদিঘি হাওরের তীরবর্তী রাজনগরের উত্তরভাগ, ফতেহপুর, মুন্সিবাজার ইউনিয়ন ও মৌলভীবাজার সদরের মনুমুখ, আখাইলকুড়া ও খলিলপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে এবং অন্যান্য গ্রামও চরম বন্যা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কাউয়াদিঘি হাওর তীরবর্তী রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুকুল চন্দ্র দাস গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানান কুশিয়ারা ও মনু নদীর পানি কাউয়াদিঘি হাওরে প্রবেশ করায় তার ইউনিয়নের জনগণ বন্যা আতঙ্কে ভুগছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রামও বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। গেল বছরের পর এ বছরও বন্যা আক্রান্ত হলে কীভাবে তারা খাবেন, বাঁচবেন এই দুশ্চিন্তায় তাদের রাত দিন একাকার। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে বলেন, গেল কয়দিন থেকে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়া দেখে সোমবার আমার ইউনিয়ন পরিষদের সব সদস্যকে নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। বন্যাকবলিত হলে তাদের দ্রুত উদ্ধার ও যাতে শুকনো খাবার দিয়ে নিরাপদে রাখা যায় এই ব্যবস্থা রেখেছি। তিনি গতবারের মতো ভয়াবহ বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে সবার দোয়া চান।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=122197