২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৪

পদ্মা বহুমুখী সেতু

ব্যয় ১৪ শ’ কোটি টাকা বাড়ছে

বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণ ১১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর

পদ্মাবহুমুখী সেতু প্রকল্পের ব্যয় আরো এক হাজার চার শ’ কোটি টাকা বাড়ছে। অতিরিক্ত এক হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য এই ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিমাণ অর্থ অনুমোদন দেয়া হলে এই ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় পৌঁছাবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (্একনেক) আজ এই বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণ ও অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে বলে একনেক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, তাদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত প্রকল্প দলিল অনুযায়ী পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্পে এক হাজার ৫৬০ কোটি ৫৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বা হুকুম দখলের জন্য এক হাজার ২৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সংস্থান আছে। বর্তমানে সেতু বিভাগ ১৪ শ’ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে আরো এক হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে জমির পরিমাণ ও ব্যয় পরিবর্তনের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) চেয়ে ১৪ শ’ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা অনুমোদিত মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে জারিকৃত পরিপত্রের ১৬.১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য সীমিত আকারে মোট প্রকল্প ব্যয়ের অনূর্ধ্ব ৫ শতাংশ অনুমোদিত অঙ্গব্যয় বা পরিমাণের কোনো পরিবর্তন জরুরি প্রয়োজন হলে এবং প্রকল্প সংশোধন সময়সাপেক্ষ হলে পরিকল্পনা কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ওয়েবসাইটে দেয়া ব্যয়ের বিভাজনে দেখা যায়, মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, অ্যাপ্রোচ রোড, টোল প্লাজায় এক হাজার ৯০৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ১৩.৮ কিলোমিটার নদীশাসনে ৯ হাজার ৪ শ’ কোটি টাকা, পুনর্বাসনে এক হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, এক হাজার ৫৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে এক হাজার ২৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, পরিবেশ খাতে ১২৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, পরামর্শক খাতে ৬৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাতে এক হাজার ৭৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ফলে মোট ব্যয় এখানে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট এই প্রকল্প ব্যয় অনুমোদন দিয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার টাকায়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারিতে প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। তারপর পদ্মা সেতুর ব্যয় আরো আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

বাড়তি জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ডিজাইন পর্যায় হতে বাস্তবায়ন পর্যায় পর্যন্ত সময়ে নদীর গতি-প্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে মূল ডিজাইনের চিহ্নিত স্থানগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জমির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। জমির মালিকগণ ভরাট জমিতে বসতি স্থাপন এবং চাষাবাদ শুরু করে। এ জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মূল ডিজাইনে চিহ্নিত জায়গায় কাজ করতে পারছে না। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসকে ওই কাজের দায়িত্ব দেয়া হলে তারা ২১টি ব্লক চিহ্নিত করে রিপোর্ট প্রদান করে। অন্য দিকে, জাজিরা প্রান্তে মূল নদীশাসন কাজের সীমানার কিছু অংশ পানির নিচে অবস্থিত হওয়ায় ইতঃপূর্বে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। এখন নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের কারণে নদীশাসন ও ড্রেজিং ভরাট হয়ে যাওয়াতে অতিরিক্ত এক হাজার ১৬২.৬৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জে এই অধিগ্রহণ করতে হবে। ফলে এখন মোট জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ হবে ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর। যার জন্য ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
সেতু বিভাগ বলছে, ডিপিপি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে এটি প্রণয়ন ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমির দখল হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করার সুযোগ এবং প্রকল্প তথা সরকারের বড় অঙ্কের আর্থিক ঝুঁকি থাকে।

প্রকল্পের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা জানান, মিডিয়ার সাথে কথা বলা আমাদের জন্য নিষেধ আছে। প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো কিছু জানতে চাইলে সচিব ও প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো: শফিকুল ইসলামের সাথে দুই দফা মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরে কথা বলতে হবে। পরে অবশ্য তাকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/326598