২১ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৭

আকাশ ছুঁয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি

রফতানি-রেমিট্যান্স বাড়লেও এক বছরে ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণ

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে তৈরী পোশাক রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলানায় প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রফতানি বেড়েছে ৭ শতাংশের মতো। আর রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ শতাংশ। কিন্তু অর্থনীতির এসব শুভ সংবাদ হারিয়ে গেছে আমদানির চাপে। মাত্রাতিরিক্ত আমদানির ফলে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। স্বাভাবিক কারণেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডলারের মূল্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি। আর সাধারণ মানুষ হারাচ্ছেন ক্রয়ক্ষমতা।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশ থেকে মোট তিন হাজার ৩৭২ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রফতানি হয়েছিল তিন হাজার ১৬২ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) কেবল তৈরী পোশাক রফতানি দুই হাজার ৮১২ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলারের। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিল শেষে রফতানি থেকে দেশের আয় হয়েছে তিন হাজার এক কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৫৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ এ সময়ে আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এর ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ঘাটতি পৌঁছেছে এক হাজার ৫৩৩ কোটি ডলারে। ঘাটতির এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৮১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৭১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বাবদ খরচ বেড়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের আমদানিও। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
অর্থনীতির প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু বাংলাদেশের চলতি হিসাবে গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এপ্রিল শেষে ঋণাত্মক হয়েছে ৮৫১ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ১৭৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

তবে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মোট ২৩৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগও সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের আলোচিত মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে তৈরী পোশাকে ৩ হাজার ১৬ কোটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৩৮ কোটি, পাট ও পাটজাত পণ্যে ১০৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির ল্যমাত্রা আছে। অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পোশাক ছাড়াও পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/326599