২০ জুন ২০১৮, বুধবার, ১১:১০

রেকর্ডসংখ্যক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। ২০১৭ সালে তাদের সংখ্যা ৬ কোটি ৮৫ লাখ। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধ, অন্যান্য সহিংসতা ও নির্যাতনের মুখে পঞ্চম বছরের মতো নতুন রেকর্ড গড়েছে বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। এ সংকটের শীর্ষে আছে কঙ্গো, দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধ ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দলে দলে ছুটে আসা। ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নশীলের কাতারে উঠে আসা দেশগুলো।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন গ্লোবাল ট্রেন্ডস-এ এসব কথা বলেছে। এতে বলা হয়েছে ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ যেসব মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে তার মধ্যে এক কোটি ৬২ লাখ মানুষ হয়তো প্রথমবারের মতো না হয় পুনর্বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ থেকে ইঙ্গিত মেলে যে, বিপুল সংখ্যক মানুষকে তার আশ্রয়য়ের জন্য ছুটতে হচ্ছে। এর অর্থ হলো প্রতিদিন বিশ্বে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ। আরো পরিষ্কার করে বলা যায়। তা হলো, প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন করে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। নিজের দেশে যুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছেন এমন শরণার্থীর সংখ্যা ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫৪ লাখ। ২০১৬ সালের তুলনায় এই সংখ্যা ২৯ লাখ বেশি। পাশাপাশি একটি বছরে এটাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখে। নিজের দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি। ২০১৬ সালের তুলনায় এই সংখ্যা সামান্য কম। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩ লাখ। সংক্ষেপে বলতে গেলে ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে তার সংখ্যা থাইল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার সমান। বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্য গড়ে ১১০ জন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, আমরা একটি জলবিভাজিকায় অবস্থান করছি। যেখানে বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের ব্যবস্থাপনায় সফলতার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন ও সুদূরপ্রসারী ব্যাপক উদ্যোগ। যাতে কোনো দেশ বা সম্প্রদায় এ সমস্যা নিয়ে নিঃসঙ্গ অবস্থায় না থাকে। এক্ষেত্রে কিছুটা আশার কারণও রয়েছে। শরণার্থী পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়া নিয়ে নতুন একটি ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে ১৪টি দেশ। কয়েক মাসের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে নতুন একটি ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজিস’। সেটা উত্থাপন করা হবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য। বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রাক্কালে সদস্য দেশগুলোর কাছে আমার বার্তা হলো এই উদ্যোগকে সমর্থন দিন। কেউ ইচ্ছে করে শরণার্থী হন না। তবে কিভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি এ বিষয়ে আমাদের সবার সামনেই সুযোগ আছে। উল্লেখ্য, ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট এ বছর বিশ্ব শরণার্থী দিবসকে (২০শে জুন) সামনে রেখে সারাবিশ্বে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষকে ঠাঁই দেয়ার ক্ষেত্রে দেশের সংখ্যা খুব বেশি নয়। বিপুল আকারে বাস্তুচ্যুত বা শরণার্থীকে ঠাঁই দানকারী দেশের সংখ্যা খুবই কম। এমন দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে তুরস্ক। তারা ৩৫ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এর বেশির ভাগই সিরিয়ান, লেবাননের মানুষ। ইউএনএইচসিআরের দায়বদ্ধতায় আছেন এমন শরণার্থীর মধ্যে শতকরা ৬৩ ভাগের ঠাঁই হয়েছে মাত্র ১০টি দেশে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=122088