৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১০:০৪

ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে সিইসি রকিবের বিদায়

আজ বুধবার দুপুর আড়াইটায় শেষ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিদায় নিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নির্বাচন কমিশন। দেশের ইতিহাসে ১১তম এই ইসি মেয়াদ পূর্ণ করেই বিদায় নিচ্ছে। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থাকা এ কমিশন নিয়ে মিশ্র মূল্যায়ন নির্বাচন বিশ্লেষকদের। তবে তার আমলের গোটা ৫ বছরই শুধু ব্যর্থতাই ছিলো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। প্রকাশ্যে সিল মারা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভোট ডাকাতির মহোৎসবের চিত্র দেশের মানুষ দেখতে পেয়েছে তাদের আমলেই। এ কমিশনের আমলে সবচেয়ে বড় ঘটনা বিনা ভোটে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪জন সংসদ সদস্য উপহার দিয়েছে জাতিকে। আর ইউপি নির্বাচনে ১৩২জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা থাকবে এ কমিশনের। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতা, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় অতীতের যে কোনো কমিশনের চেয়ে বেশি সমালোচনা কুড়িয়েছে রকিব কমিশন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে নাকি দায়িত্ব পালন করেনি সেই প্রশ্ন এখন সামনে। আজ বুধবার বিদায়ী অফিস করবেন রকিব কমিশনের তিন কমিশনার। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকছেন একজন। এর মধ্যেই কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান করে নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করা হয়েছে।
বিদায়ী কমিশনের মূল্যায়নে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন দলীয় সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান কমিশন তাদের মেয়াদপূর্ণ করতে যাচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করে এর আগে কোনো কমিশন তাদের মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। এ কমিশনই প্রথম যারা মেয়াদ শেষ করতে পারছে। বর্তমান কমিশন ভালো করেছে কি খারাপ করেছে এটা পরে দেখার বিষয়। তবে এ কমিশনকে জনগণ মনে রাখবে। মানুষ যেমন ভালোটা হলেও মনে রাখে তেমনি খারাপ হলেও মনে রাখে। সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বর্তমান কমিশন ব্যর্থ কমিশন হিসেবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে নাকি দায়িত্ব পালন করেনি এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে তাদের এত ব্যর্থতার মধ্য দিয়েও তারা মেয়াদ শেষ করতে পেরেছে এটাই তাদের সফলতা।
তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের কাছ থেকে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ এবং তিন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী। আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জাতীয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ প্রায় ৮ হাজার নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন এ কমিশন। ইউনিয়ন নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় ১৩২ জনের প্রাণহানি এবং দশ হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা দেশের নির্বাচনী ইসিহাসে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এ ছাড়াও উপজেলা এবং পৌরসভা নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গত ৩১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন ছিল বর্তমান কমিশনের শেষ নির্বাচন। এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করে কমিশন। শেষ সময়ে এসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে কিছুটা হলেও বদনাম ঘুচানোর চেষ্টা করেছে ইসি। এ ছাড়াও জনগণের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেয়া এবং ছিটমহলবাসী ভোটার করতে পারাকে এ কমিশন সাফল্য হিসেবে দেখছে। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে আসা এ পর্যন্ত ১১ জনের মধ্যে সাতজন ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বা সাবেক বিচারক, চারজন ছিলেন সাবেক আমলা। আর তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন ২৩ জন। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতিরা। এরপর ইসিতে সাবেক আমলারা দায়িত্বে আসেন। মাঝখানে ২০০৫ সাল থেকে এক বছর সাত মাস একজন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া গত প্রায় ২০ বছর সাবেক আমলারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সিইসির দায়িত্বে বিচারপতিদের মধ্যে মো. ইদ্রিস ও এটিএম মসউদ এবং সাবেক আমলাদের মধ্যে এমএ সাঈদ ও এটিএম শামসুল হুদা পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন। বর্তমান সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। দেশের সপ্তম সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজ ২০০৫ সালের ২৩ মে থেকে ২০০৭ সালের ২১শে জানুয়ারি পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। আন্দোলনের মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওই কমিশনকে বিদায় নিতে হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি মো. ইদ্রিস। ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ নির্বাচন হয় এ কমিশনের হাতে। বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলাম দ্বিতীয় সিইসি হিসেবে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
http://www.dailysangram.com/post/270867-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A7%9F