সড়কের চাপ সামলাতে হচ্ছে রেলওয়েকে। ট্রেনেও ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই। দৃশ্যটি বিমানবন্দর স্টেশনের
১৪ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৬

ট্রেনের শিডিউল লন্ডভন্ড, চরম দুর্ভোগে যাত্রী,

স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িরর পথে লোকজনদের ছুটে চলা শেষ পর্যায়ে। রাজধানী ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের যাত্রীরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। গতকাল বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের পথে ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। সড়কের খারাপ অবস্থা এবং যানজটের ভয়ে আগে থেকেই লোকজন ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ফলে সড়কের চাপ পড়েছে ট্রেনের ওপর। এতে করে ট্রেনের প্রতিটি বগির ভিতর থেকে শুরু করে ছাদ বোঝাই যাত্রী।

মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীর জন্য যারা টিকিট কেটেছেন তারা ট্রেনের ভিতরে সিটে বসলেও ছিলেন না স্বস্তিতে। প্রতিটি বগি ছিল যাত্রীতে ঠাসা। এ ছাড়া ট্রেনের ছাদেও ছিল না ঠাঁই। আর এতে টিকিট হাতে নিয়ে যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের কথা, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন। সেই টিকিট নিয়ে ট্রেনে রীতিমত যুদ্ধ করে চড়তে হয়েছে। বগির ভিতর শুধু করিডর নয়, সিটের হাতলেও অনেক যাত্রীকে বসতে হয়েছে। ফলে কোন ধরনের নড়াচড়া ছাড়াই সিটে বসে তাদের ঘরে ফিরতে হচ্ছে।

গতকাল সড়কপথের যাত্রীদের তেমন কোন দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। বাস যাত্রীদের মাঝে দুর্ভোগের যে আশঙ্কা ছিল সেটি তেমন পরিলক্ষিত হয়নি বলে গিয়ে জানা গেছে। তবে রাজধানী থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পয়েন্ট গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান হাঁটু সমান পানিতে ডুবে যায়। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটে বাসগুলোর গন্তব্যে পৌঁছাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বাড়তি সময় লেগেছে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার আরেকটি পথ গাবতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত যানজট থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় স্বস্তি নিয়ে বাসগুলো চলাচল করেছে। গাবতলী বাস টার্মিনাল ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময় ও নিয়মে দূরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে গেছে। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলমুখী বাসের কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা জানান, গতকাল দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কে বড় ধরনের কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে যানজট হলেও তা ছিল কিছু সময়ের জন্য।

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
গতকাল ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন ৪ জুন অগ্রিম টিকেট কেনা যাত্রীরা। সকালে রাজশাহী, দেওয়ানগঞ্জ, পার্বতীপুর, লালমনিরহাট ও খুলনার উদ্দেশে পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ছেড়ে যায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ৫৯টি ট্রেন ছেড়ে যায়। আর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটের ১০টি লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গতকাল সকালে কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পর কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে। এরমধ্যে তিনটি বিশেষ ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়। দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ছাড়ার সময় ছিল সকাল পৌনে ৯টায়। কিন্তু ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের পৌনে এক ঘণ্টা পর। লালমনিরহাটের লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেন সকাল সোয়া ৯টার স্থলে সকাল ১১টায় ছেড়ে যায়। দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেনও নির্ধারিত সময়ে ২ ঘণ্টা পর ছেড়েছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস কমিউটার ট্রেন সকাল সাড়ে ৯টার পরিবর্তে ২০ মিনিট দেরি করে বেলা ৯টা ৫০ মিনিটে ছেড়েছে। জামালপুরের তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আধাঘণ্টা দেরি করে সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়েছে। দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস ২০ মিনিট দেরি করে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ছেড়েছে। নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাড়ার সময় সকাল ৮টায়। ট্রেনটি আধাঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যায়।
অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলীমুজ্জামান বলেন, ট্রেনের বগির ভেতরের অবস্থা ভালো না। প্রথম শ্রেণীর এসি চেয়ার কোচের টিকেট কিনেছি। কিন্তু সিট ভাঙা। আবার কয়েকটি সিট পেছনে কাত হয়ে যায়। সোজা হয়ে বসা যায় না। আবার প্রথম শ্রেণী এসি বগিতে বিনা টিকিটে অর্ধশত যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমন করছেন। এত ভিড়ের মধ্যে আসলে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীর কোন মর্যাদাই থাকে না।
ট্রেনের সেবা উন্নত করার কথা বললেও আসলে তার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই বলে উল্লেখ করেন অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেক যাত্রী আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, টিকেট কেনার জন্য মানুষকে কি ভোগান্তিটা পোহাতে হয়। আর ট্রেনে চড়ে দেখি ফ্যান নেই, সিট ভাঙা, টয়লেট নোংরা ও আরো কত কি।

গতকাল আগের চেয়ে ভিড় বেশি হয়েছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, কয়েকটি ট্রেন সামান্য দেরি করেছে। তবে ঈদের সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরি করে যাওয়া বড় কিছু নয়। এটা ঠিক হয় যাবে। সকাল ৯টার দিকে রংপুর এক্সপ্রেস স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। ট্রেনটি থামতে না থামতেই অপেক্ষমান যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে শুরু করেন। নিমিষেই ভরে যায় পুরো ট্রেন। যাত্রীদের ভিড়ে যারা মালামাল ও শিশুদের নিয়ে নিজ নিজ আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি, তাদেরকে দাঁড়িয়েই যেতে হয়।
বেলা আড়াইটায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যান রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। তিনি চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ৩০টির মতো ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে ৪৫ মিনিট দেরি করেছে। বাকি ট্রেনগুলো সঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে।
ট্রেনের ছাদে যাত্রীরা উঠছে সাংবাদিকদের এমন তথ্যের ব্যাপারে রেলমন্ত্রী জানান, ‘ছাদে ওঠা আইনে নেই। আমরাও সমর্থন করি না। যারা ওঠেন, তারা নিজ দায়িত্বে উঠছেন। যারা উঠছেন, তাদের নিবৃত্ত করা হচ্ছে।

বাস যাত্রায় স্বস্থি : সড়কপথে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ সহনীয় রাখতে গত ৮ জুন থেকে উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কের ভাঙাচোরাও মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ‘সংস্কার’ কাজ অনেকে এলাকাতেই ধুয়ে মুছে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ অংশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গতকাল যানবাহন দিনভর ধীরগতিতে চলেছে। কোথাও কোথাও যানজটও সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা অংশ সেই তুলনায় নির্বিঘœ ছিল। চাপ বাড়লে অনেকটা স্বস্তিতেই যানবাহন চলেছে। রংপুরের আগমনী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে রংপুর যেতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। গতকাল লেগেছে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা। ঈদযাত্রায় এক দুই ঘণ্টার বিলম্বকে সহনীয় মনে করছেন তিনি। যাত্রীরাও একই কথা বলেছেন। আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরস্তা পর্যন্ত দিনভর যানজট ছিল।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/136586