১৩ জুন ২০১৮, বুধবার, ২:৩৩

ঈদে টিকিটের জন্য হাহাকার

অনেকের বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে গ্রামের বাড়ি যেতে চলছে যানবাহনের টিকিটের জন্য হাহাকার। ট্রেনের টিকিট তো ঘোষণা দিয়েই শেষ। লঞ্চ আর বাসের টিকিট ঘোষণা ছাড়াই লাপাত্তা। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিয়ে টিকিট মিলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কালোবাজারি চক্রের হাতে টিকেটপ্রত্যাশীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে মিলছে একটি টিকিট। পরিবহন কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে অনলাইনে টিকিট বিক্রির কারণে কোনো কোনো পরিবহনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে এক দিনেই।

আগামী ১৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। ঈদের তিন দিন ছুটির মধ্যে দু’দিন মিলে গেছে সাপ্তাহিক ছুটির সাথে। এ কারণে কেউ কেউ ঈদের আগের তিন দিন বা তার কম ছুটি নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ঈদের পরের তিন দিন ছুটি নিয়ে ওই সপ্তাহটি গ্রামে কাটানোর চিন্তা করছেন; কিন্তু এবার ঝামেলা হচ্ছে টিকিট নিয়ে। সংশ্লিøষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঈদের ছুটি আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের চাপ পড়বে একবারে। সে কারণে পরিবহনের ওপরও বাড়তি চাপ। কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়েছে, ১৩, ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাই ঘরমুখো মানুষের কাছে টিকিট এখন সোনার হরিণ। সাগর নামের এক যাত্রী জানান, তিনি গাবতলী ও সায়েদাবাদ ঘুরেছেন টিকিটের জন্য; কিন্তু পটুয়াখালী যাওয়ার কোনো টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। শাহরিয়ার নামের অপর এক যাত্রী বলেন, তিনি যাবেন যশোর; কিন্তু কোনো টিকিট গত এক সপ্তাহ ঘুরে মেলাতে সক্ষম হননি। কাউন্টারের বাইরে থেকে দু’টি টিকিট পেয়েছিলেন; কিন্তু তার টিকিট দরকার পাঁচটি। শাহরিয়ার বলেন, গাবতলী থেকে যে দিন অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় সে দিনই তিনি টার্মিনালে গিয়েছিলেন; কিন্তু টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। বিকেলের দিকে কাউন্টারগুলো থেকে জানিয়ে দেয়া হয় টিকিট বিক্রি শেষ। তবে দু-একটি পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার থেকে বলা হয়েছিল তাদের স্পেশাল সার্ভিস থাকবে। তাতে টিকিটের ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু সেই স্পেশাল সার্ভিসেও টিকিট মেলেনি শাহরিয়ারের। সায়েদাবাদ এলাকার এক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, এবারে যাত্রীর চাপ একটু বেশি। এ কারণে যাত্রীরা কিছুটা ভোগান্তির শিকার হবেন। তিনি বলেন, এই চাপ এড়ানো সম্ভব নয়। চাইলেই পরিবহন বাড়ানো যাবে না।

নৌপরিবহনে যাত্রীর চাপ আরো বেশি। একাধিক লঞ্চমালিক বলেছেন, এবারে হয়তো স্পেশাল সার্ভিস চালু করেও যাত্রী সামাল দেয়া যাবে না। সেন্টু নামের এক যাত্রী বলেন, গ্রিন লাইনের টিকিট সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন। ২ জুন কাউন্টারে গিয়েও তিনটি টিকিট তিনি সংগ্রহ করতে পারেননি। অপর এক যাত্রী বলেন, তার টিকিট দরকার তিনটি তিনি পেয়েছেন দু’টি। মোশাররফ নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ঈদের আগে কোনো কেবিন পাননি। একাধিক লঞ্চ কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ৯ জুন সব কেবিনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আর কোনো টিকিট নেই। তবে শাকিল নামের এক যাত্রী বলেছেন, তিনি ৭ জুন গিয়েও কোনো ¡ টিকিট পাননি। কোনো লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার টিকিট আছে বলে স্বীকার করেনি। তবে একাধিক সূত্র বলেছে, লঞ্চের বেশির ভাগ টিকিটই কালোবাজারে বিক্রি হয়ে গেছে। লঞ্চ শ্রমিকদের সাথে আঁতাত করে কালোবাজারিরা সব টিকিট হাতিয়ে নিয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা মতো তারা অতিরিক্ত দামে এই টিকিট বিক্রি করবে। সুমন নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ১১ জুন তিনটি টিকিট সংগ্রহ করেছেন প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে। সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকা ভাড়ার স্থলে তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে ১৮ শ’ টাকা।
এ দিকে টিকিট সংগ্রহ করতে না পারায় অনেকেই এবার বাড়ি যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মোবারক নামের এক যাত্রী বলেছেন, লঞ্চ ও বাসের কোনো টিকিট পাননি। ঈদের আগের রাতে সদরঘাট যাবেন। কেবিন পেলে লঞ্চে চড়বেন। না হলে ঈদের দিন সকালে চেষ্টা করবেন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/325212