১২ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১:৫৯

নতুন বাজেট মধ্যবিত্তের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে তিনি এই বাজেট ঘোষণা করেন। এই বাজেটে মোট ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪,৬৪,৫৭৩ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩,৩৯,২৮০ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ধরা হয়েছে ১,২৫,২৯৩ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে রয়েছে এনবিআর এর অধীনে প্রাপ্য ২,৯৬,২০১ কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত আয় ৪৩,০৭৯ কোটি টাকা। এতে আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ঋণ ধরা হয়েছে ১,২১,২৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণ বাবদ ৪২০২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণ বাবদ ৪২০২৯ কোটি টাকা, ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ ২৯১৯৭ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ বাবদ ৫০,০১৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এই বিশাল বাজেটে উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ খরচ হবে ১,৭৩,০০০ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বহির্ভূত খাতে ব্যয় হবে ২,৯১,৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেতন-ভাতা এবং মেরামত ও সংরক্ষণ খাতেই বাজেটের বৃহদাংশ ব্যয় হবে। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ তার অর্ধেকেরও অনেক কম, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের চেয়ে কিছু বেশি। অর্থায়নের উৎস অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ হচ্ছে ৬৩.৭%, বোর্ড বহির্ভূত কর ২.১%, কর বহির্ভূত প্রাপ্তি ৭.২%, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫.৩%, বৈদেশিক ঋণ ১০.৮% এবং বৈদেশিক অনুদান ০.৯%। ভর্তুকী, প্রণোদনা এবং পেনশনসহ সম্পদ বিভাজনে সবচচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্রশাসনকে ১৮%, এরপর শিক্ষা ও প্রযুক্তি ১৫.৬%, পরিবহন ও যোগাযোগ ১২.২%, ঋণের সুদ ১১.১%, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ৭%, প্রতিরক্ষা ৬.৩%, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ ৫.৮%, কৃষি ৫.৭%, জনশৃঙ্খলা ৫.৭%, স্বাস্থ্য ৫%, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ৫.৪%, গৃহায়ণ ১.১%, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম ০.৯%, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস ০.৭% এবং বিবিধ ব্যয় বাবদ ০.৫ শতাংশ।
সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থমন্ত্রীর এই বাজেটটি চলতি বাজেটের তুলনায় ১৬ শতাংশ বড় এবং বহু উচ্চাভিলাষী বলে মনে হয়। এতে ১০ লাখ নতুন লোককে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার প্রস্তাব রয়েছে। আবার বেসরকারি খাতে নতুন পেনশন কর্মসূচি চালুর প্রস্তাব থাকলেও এই খাতের বিকাশের কোনও রূপরেখা নেই। এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার গোটা জাতিকে ঋণের জালে আবদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছেন। চলতি বছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের খাতে সংশোধিত বরাদ্দ হচ্ছে ৩৭৯২০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে তার পরিমাণ হচ্ছে ৫১,৩৪০ কোটি টাকা। ১,২১,২৪২ কোটি টাকা ঋণ করে ১,২৫,২৯৩ কোটি টাকা ঘাটতি রেখে ৪,৬৪,৫৭৩ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণাকে জনগণের প্রতি সরকারের তামাশা বলে অনেকে মনে করেন। এই বাজেট অতীতের অন্যান্য বাজেটগুলোর ন্যায় বাস্তবায়নযোগ্য নয়। যারা বাস্তবায়ন করবেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির কোনও ব্যবস্থা এতে নেই। দুর্নীতি তো আছেই, প্রবৃদ্ধির যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও অবাস্তব। বর্তমান প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক এডিবিসহ বিশেষজ্ঞ মহলের আপত্তি রয়েছে। নির্বাচনী বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অস্বচ্ছল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা অথবা নাতি-নাতনীদের সহায়তার জন্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বয়স্ক ভাতাভোগীদের সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১৪ লাখে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি বার্ষিক দুই হাজার টাকা হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুকরণ, জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস উপলক্ষে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা করে বিশেষ সম্মানী ভাতা চালুরও প্রস্তাব করা হয়েছে। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১০ লাখে বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার জনে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তির হার বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যাও ৩৬ হাজার থেকে ৬৪ হাজারে উন্নীত এবং তাদের মধ্যে বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে ৪০ হাজারে এবং শিক্ষা উপবৃত্তির সংখ্যা ১১ হাজার থেকে ১৯ হাজারে উন্নীত করা হবে। অর্থমন্ত্রী আরো বলেছেন, ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইসড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির অধীনে উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারে বৃদ্ধি, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজারে বৃদ্ধি, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতার মেয়াদ ২ বছরের স্থলে তিন বছর নির্ধারণ, পাশাপাশি ভাতাভোগীর সংখ্যা ছয় লাখ থেকে ৭ লাখে বৃদ্ধি, কর্মজীবী ল্যাক্টেটিং মাদার সহায়তার আওতায় মাসিক ভাতা প্রদানের মেয়াদ ২ বছর থেকে তিন বছরে বৃদ্ধি এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজারে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার হিসেবে মোট ৪০ হাজার বৃদ্ধি করে ভিজিডি কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজারে বৃদ্ধি করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জনাব মুহিত ভাতা বণ্টনে প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কার তথা জিটুপি পদ্ধতির আওতায় ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল হিসাবে ভাতা দেয়ার কথাও বলেছেন।
২০১৮-১৯ নির্বাচনের বছর। এই বছর জন নিরাপত্তায় বরাদ্দ বৃদ্ধি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জন নিরাপত্তা মানে পুলিশী মারপিট ও হয়রানি। দেখা যাচ্ছে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৫.৭ শতাংশ যা কৃষি খাতের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দের সমান। আবার স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ তার চেয়ে কম। অর্থাৎ সরকারের কাছে ১৭ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির চেয়ে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে জনমতকে সরকারি দলমুখী করার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিচার বহির্ভুত হত্যাকা-ে, গুম, মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও নিরপরাধ মানুষের উপর নির্যাতন প্রভৃতির জন্য যখন নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে দিন দিন অভিযোগের পাল্লা ভারী হচ্ছে তখন তাদের জন্য বাড়তি সম্পদের সংস্থানের প্রস্তাব সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। এই খাতের বরাদ্দ হ্রাস করে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার।

সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য বাড়তি সুযোগ সুবিধার ঘোষণা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার কাজে আমলাদের ব্যবহারের একটি কৌশল মাত্র। জনগণের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অতীতে তারা কখনো যে সুযোগ সুবিধা পাননি তাদের এখন তাই দেয়া হচ্ছে। সিনিয়র সচিবের পদ সৃষ্টি করে পদায়ন হয়েছে। পদ যা আছে তার বহুগুণ বেশি পদে পদোন্নতি দিয়ে আমলাদের তুষ্ট করা হচ্ছে। সচিবরা এখন বাড়িতে বাবুর্চি ও প্রহরী রাখুন বা না রাখুন সেই বাবত তারা ভাতা পান। বাড়ি গাড়ির জন্যও সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারি কোষাগার থেকে নামমাত্র সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। আকাশচুম্বি মূল্যে মোবাইল ক্রয় ও মোবাইল বিল পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কল্পনাতীত বেতন স্কেল, নানা নামে ঈদ বহির্ভুত উৎসব বোনাস তো আছেই। বেসরকারি খাতের সাথে সরকারি কর্মচারিদের বেতনভাতার ব্যবধান এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছে তার নজির বিরল। এই বৈষম্যের সৃষ্টি ইচ্ছাকৃত। এই বৈষম্যের মাধ্যমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি এলিট আমলা শ্রেণি সৃষ্টি করে জনগণের প্রভু বানিয়ে শাসন শোষণ পাকাপোক্ত করাই সরকারের উদ্দেশ্য বলে মনে হয়।

বাজেটের আরেকটি দিক প্রণিধানযোগ্য। এতে বিত্তবানদের প্রতি পক্ষপাত করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের নৈরাজ্যকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে তাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে অভিনব পদ্ধতিতে অর্থ চুরি থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক সমূহের অর্থ কেলেঙ্কারী, ভুয়া নামে ঋণ লগ্নি এবং ঋণ খেলাপী ও অর্থ পাচারের সাথে যারা জড়িত তাদের প্রায় সকলেই সরকারি দল ও সরকারের সাথে জড়িত। সরকার বৈধ ও অবৈধভাবে সরকারি লোকদের অর্থ দিয়ে বিত্তবান করে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে ভোট বাগাতে চান। ব্যাংকিং খাতের নৈরাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা মানে সরকারি লোকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকার নিজের পায়ে নিজে কুঠারাঘাত করতে পারেন না। কাজেই এই খাতকে তারা কলুষিত করবেনই। আবার সমাজে দু’টি শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতাও সরকারের উদ্দেশ্য। বিত্তশালী ও বিত্তহীন। এদের উভয়েই সরকারের প্রতি নির্ভরশীল এবং অনুগত।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট-উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে দেশে সমৃদ্ধি এসেছে, এখন দারিদ্র্য নাই বললেই চলে। মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ধনী। দরিদ্রের বৈষম্য কমেছে। তার এই কথাটি বাস্তব অবস্থার পরিপন্থী। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী ২০১০ সালের তুলনায় এই বছর পারিবারিক পর্যায়ে ব্যক্তির আয় কমেছে ২ শতাংশ এবং ভোগের জন্য ব্যয়ও কমেছে ১ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তির যে ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সেই খাতে মজুরী কমেছে সাড়ে সাত শতাংশ। আবার দেশে জনপ্রতি পুষ্টি গ্রহণের হার ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে কমেছিল ৫% আর ২০১৬ সালে কমেছে আরো ৯ শতাংশ। মানুষের আয় যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে ক্যালরী গ্রহণ ও পুষ্টি গ্রহণের হার কমে কিভাবে? অর্থমন্ত্রীর কথাটি একটি ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। বৃটিশ আমলে হক-শ্যামা প্রসাদ মন্ত্রী সভায় একজন খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন। তখন বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। মন্ত্রী আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, আমি বুঝতে পারি না, বাংলার মানুষ কি এতই গরীব হয়ে গেছে যে দু’বেলা সাদা পোলাও খেতে পারে না? গণবিচ্ছিন্ন হলে মন্ত্রীরা এ ধরনের কথাই বলে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বা সেফটি নেট বৃদ্ধির ব্যাপারে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। গত প্রায় এক দশক ধরেই এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, অসুস্থ ভাতা প্রভৃতির নামে যে ভাতা দেয়া হচ্ছে তার শতকরা ৯০ ভাগই রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থ আত্মসাৎ এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সরকারি অর্থ এখানে দলীয় লোকেরা লুটেপুটে খায়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। নির্বাচনের বছর নতুন বাজেটে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব সরকারি অর্থের রাজনৈতিক অপব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।

এই বিশাল বাজেটের অর্থ সংস্থানের লক্ষ্যে কর বৃদ্ধির জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সাধারণ মানুষ চাপে পড়বে। এতে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা নিয়ে ৫টি মৌলিক চাহিদার তিনটির উপরই বিরূপ প্রভাব পড়বে। করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি না করা, ছোট ফ্ল্যাটে ভ্যাট আরোপ, আসবাবপত্রের উৎপাদন ও বিপণনের উপর করারোপ, পোশাকে ভ্যাট ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবায় কর আরোপ প্রভৃতি সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তদুপরি পুরো বাজেটে প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ করের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যা সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় সাংঘাতিকভাবে বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক একজন ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন এবারের বাজেটে উচ্চ বিত্তের লালন, মধ্যবিত্তের দমন এবং নি¤œবিত্তের জন্য ভর্তুকী দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই এর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ব্যাংকের টাকা লুট পাটকারীদের শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বর্ধিত অগ্রীম ট্রেড ভ্যাট প্রত্যাহার, কর্পোরেট কর হ্রাস, ব্যক্তি শ্রেণির আয় করসীমা বৃদ্ধি ও অ্যাপস ভিত্তিক সেবা পাঠাও উবারের উপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবী জানিয়েছেন।

সরকার কর্তৃক ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অধিক হারে ঋণ নেয়ার কারণে বেসরকারি খাতে পূঁজি সংকটের সৃষ্টি হবে বলেও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আসলে বাজেটটির লক্ষ্যমাত্রা সুউচ্চ ও চমৎকার তবে ভিত্তি হচ্ছে অনেকটাই তাসের ঘর। এই বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।

http://www.dailysangram.com/post/334047