১১ জুন ২০১৮, সোমবার, ১০:১২

শুল্ক্ক বাড়ানোর প্রভাব চালের বাজারে

বাজেটে চাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে আগের শুল্ক্ক পুনর্বহালের প্রভাব পড়েছে বাজারে। বাজেট ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে পাইকারি বাজারে আমদানি করা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা। তবে দেশে উৎপাদিত চালের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। দেশি চালের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অটো-মেজর ও হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতি।

গত বছর বন্যায় ফসলহানির কারণে আমদানি উৎসাহিত করতে সরকার ২৮ থেকে দুই ধাপে শুল্ক্ক কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনে। এ সুযোগে বেসরকারি আমদানিকারকরা ব্যাপক চাল আমদানি করেন। এবার বোরো উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পান, তার জন্য বাজেটে ২৮ শতাংশ শুল্ক্ক পুনর্বহালের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে মিল মালিক সমিতি।

বাংলাদেশ অটো-মেজর ও হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও রশিদ অ্যাগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ সমকালকে বলেন, শুল্ক্ক আরোপের পর দেশি চালের দামে পরিবর্তন করা হয়নি। আগামী দিনেও বাড়বে না। কোনো মিল কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রির চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, এবার দেশে চালের উৎপাদন ভালো আছে। কোনো ঘাটতি নেই। শুল্ক্ক বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে চালের বাজারে কারসাজি করতে দেওয়া হবে না।

আবদুর রশিদ বলেন, দেশের কৃষক ও মিল মালিকদের বিনিয়োগে স্থাপন করা চালকলগুলো বাঁচাতে হবে। রশিদ মিনিকেট সারাদেশে জনপ্রিয়। যদি ২৫ পয়সা লাভ থাকে, তারপরও দাম বাড়াবেন না। তিনি আরও বলেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াননি। মিলে চালের দাম স্থিতিশীল আছে। ট্রেডিং ব্যবসায়ীরা কম শুল্ক্কে আমদানি করে আগে মজুদ করা চাল এখন বাজারে ছাড়ছেন। নতুন শুল্ক্কে আমদানি করা চাল আরও পরে আসবে। ফলে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

রাজধানীর খুচরা বাজারে চালের দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। তবে পাইকারিতে আমদানি করা চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট চালের বড় পাইকারি বাজার। এ বাজারে কয়েক দিন আগে আমদানি করা মোটা চালের কেজিপ্রতি দর ছিল ৩৭ টাকা, যা এখন ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের বিআর-২৮ জাতের আমদানি করা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে দেশি বিআর-২৮ চাল কেজিপ্রতি ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এ দামেই বেচাকেনা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের জাহান রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী শাহ আলম স্বপন সমকালকে বলেন, আমদানি করা সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা নাজির ৪৬ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হতো। এখন তা ৫১ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি চালের দাম এখনও পরিবর্তন হয়নি। এবার নতুন চাল আসার পর কিছু মিল বস্তায় ২০ থেকে ৫০ টাকা দাম কমিয়েছিল। বাজেটে শুল্ক্ক বৃদ্ধির পর ওই কমানো দাম আবার বাড়িয়ে দিয়েছে। তবু এখনও পাইকারিতে আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক্ক আরোপ না হলে চালের দাম কেজিতে আরও ৪ থেকে ৫ টাকা কমে আসত।

কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, আমদানি করা চালের দাম পাইকারিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরায় ঈদের পর বাড়তে পারে। এ ছাড়া মিল মালিকরা ঈদের পর দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এখন তাদের ওপর বাজারদর নির্ভর করবে। এখন পর্যন্ত বাজারে দেশি চালের দাম বাড়েনি। অতি উৎসাহী হয়ে খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারেন।

হিলি স্থলবন্দর কেন্দ্রিক আমদানিকারক ললিত কেশরা সমকালকে বলেন, দেশি চালের দাম এখন কম। ২৮ শতাংশ শুল্ক্ক আরোপের কারণে ভারত থেকে চাল আমদানি কমে গেছে। এখন অল্প পরিমাণে চিকন চাল আসছে। তবে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় বাজার দামে তেমন পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশে চাল আমদানিতে শুল্ক্ক বাড়ানোর কারণে ভারতে রফতানি করা চালের দাম কমেছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চালের ঊর্ধ্বমুখী দরও স্থির হয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশ ছিল বড় আমদানিকারক। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বর্তমানে ভারতে প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য ৩৫ টাকা, থাইল্যান্ডে ৪০ ও ভিয়েতনামে ৪১ টাকা। সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৩৮ লাখ টন চাল আমদানি করেছে। আরও ৪৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ টনের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে।

গত বছর দেশে তিন দফা বন্যায় চাল উৎপাদন কমে যায়। এতে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে মোটা চালের কেজি আগস্টে ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওই পরিস্থিতিতে সরকার চালের ওপর আমদানি শুল্ক্ক কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো চাল আমদানির জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়। এর ফলে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা প্রচুর চাল আমদানি করে মজুদ করেন। শুধু বেসরকারি খাতে নয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদামে ১০ লাখ টনের বেশি চাল মজুদ রয়েছে। চলতি বছর বোরো ফসল থেকে এক কোটি ৯২ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

 

http://samakal.com/economics/article/1806643