১১ জুন ২০১৮, সোমবার, ১০:১০

চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারেও জলাবদ্ধতা

চট্টগ্রামে শুধু নিচু এলাকার বাড়িঘর-দোকানপাট ও সড়কে জলাবদ্ধতা হয়েছে তা নয়। এবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নিচ থেকে অন্তত ১০০ ফুট উপরে নির্মিত উন্নয়নের মহাসড়কের সোপান আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও। শনিবার বিকাল থেকে রোববার দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে চট্টগ্রামে। আর এতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই সারা দেশের সঙ্গে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা দিয়ে রেখেছিল। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকত দেখাতে বলা হয়েছিল।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ হারুনুর রশিদ জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুসপষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে না থাকতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামে হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার বিকাল ৩টা থেকে কখনো গুঁড়িগুঁড়ি কখনো মাঝারি ধরনের বৃষ্টির কারণে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। বৃষ্টির পানিতে নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, সদরঘাট, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, হালিশহর ছোটপোল এলাকায় সড়কে পানি জমে বাড়িঘর ও দোকানপাট ডুবে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
কালুরঘাট-বিমানবন্দর সড়কের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সড়কের বাণিজ্যিক এলাকা মুরাদপুর, ষোলশহর ও অভিজাত এলাকা নাসিরাবাদ হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। যার ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে নগরীর মানুষ। বিশেষ করে ঈদ বাজারের কেনাকাটায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। এ সড়কের নাসিরাবাদে রয়েছে চট্টগ্রমের সবচেয়ে অভিজাত শপিংমল সানমার ওশান সিটি, আড়ং, অঞ্জনস, শৈল্পিকসহ অভিজাত পোশাকের শোরুম। যেখানে বৃষ্টির কারণে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতাও কমে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিক্রেতারা। অঞ্জনস শোরুমের বিক্রেতা খালেদ মাহমুদ জানান, চট্টগ্রামে শুধু নিচু এলাকার সড়কে নয়, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নিচু এলাকা থেকে অন্তত ১০০ ফুট উপরে নির্মিত উন্নয়নের মহাসড়কের সোপান আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও। এ ফ্লাইওভারের মুরাদপুর থেকে নাসিরাবাদ অংশে এক থেকে দেড়ফুট পানি জমে রয়েছে। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে ফ্লাইওভারে প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। কিছু যানবাহন বিকল হয়ে আটকে গেছে। ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে যানবাহন। অথচ যানজটের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা এড়াতে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ও আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ফ্লাইওভারে নালা থাকে না। রেইন ওয়াটার পাইপ থাকে। আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে প্রতি ১০০ গজ পরপর আমরা রেইন ওয়াটার পাইপ দিয়েছি। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় সেই পাইপগুলোতে পানি আটকে গেছে। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনের স্বার্থে নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ না করেই আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এ জন্য এই সমস্যাটা হয়েছে। নিয়মিত সংস্কার করলে এটা থাকবে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্ষা শুরুর পর বৃষ্টি আরো জোরালোভাবে শুরু হলে তখন ফ্লাইওভারের উপর জলাবদ্ধতা আরো বাড়বে। তখন বিটুমিন উঠে গিয়ে ফ্লাইওভারে খানাখন্দ সৃষ্টি হবে। গাড়ি চালানোর অযোগ্যও হয়ে পড়তে পারে ফ্লাইওভারটি। মাহফুজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্ষা শুরুর পর আমরা আরো বেশি সতর্ক থাকব। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। রেইন ওয়াটার পাইপগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করলে পানি চলে যাবে। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চউক মেগা প্রকল্প শুরু করেছে। এর মধ্যে প্রথম যে সমস্যাটি প্রকট খাল খনন কাজ করছে। প্রকল্পটি আরো দুই-তিন মাস আগে শুরু করা গেলে নিচু এলাকায়ও জলাবদ্ধতা কমে যেত। তবে আগামী বছর জলাবদ্ধতা নগরবাসী আর চোখে দেখবে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চউকের হাতে। তারপরও জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন নগরীর নালা-নর্দমা পরিষ্কার করে দিয়েছে। ভরাট হওয়া খাল খনন না করায় এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=121155