১০ জুন ২০১৮, রবিবার, ১১:১৮

প্রস্তাবিত বাজেটে ধনী-দরিদ্রে বৈষম্য আরও প্রকট হবে

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের ধনী দরিদ্রে বৈষম্য আরও বাড়বে। বাজেটে রাজস্ব বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। এটা বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ থাকলেও তা আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৩৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সক্ষম মানুষকে করের আওতায় না এনে পরোক্ষ কর বেশি রাখার পদক্ষেপের কারণে প্রস্তাবিত বাজেট মানুষের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়াবে। ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমিয়ে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করা হয়েছে।

সাধারণ জনগণের করের টাকার সমষ্টি হলো জাতীয় বাজেট। কিন্তু সেই বাজেটের টাকায় সরকার সাধারণ জনগণের স্বার্থে ব্যয় কম করে দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় করছে। এতে করে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে ধনী-দরিদ্র বৈষম্যও বাড়ছে। দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন,একটি ঘাটতি বাজেট তৈরি করতে গিয়ে সরকার যেভাবে সাধারণ জনগণের ওপর চড়াও হয়েছেন তাতে বৈষম্য বাড়বে বৈ কমবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্য কিংবা সেবার ওপর করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে অথবা নতুন করে করারোপ করা হয়েছে তা সবই সাধারণ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। একইভাবে বাজেটে ধনীদের আরও বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। এতে করে ধনীরা আরও ধনী হবে আর গরিবরা আরও গরিব হবে। আর এ কারণেই দেশের রাজনীতিবিদরা বলছেন,এটি গরিব মারার বাজেট। এতে সাধারণ জনগণের কোন কল্যাণ নেই।

পাঠাও-উবারের মতো অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিসকে করের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং সেবায় মোটরযান সেবা প্রদানকারীদের রিটার্ন দাখিল এবং ১২ ডিজিটের এনআইএন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে এবার থেকে নতুন করের আওতায় আসল রাইড শেয়ারিং সেবা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ফোন অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনের রাইড শেয়ারিং সেবার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার কেনাবেচা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পণ্য বা সেবার পরিসরকে আরও বাড়াতে ভার্চুয়াল বিজনেস নামে একটি সেবার সংজ্ঞা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনভিত্তিক যেকেনো পণ্য বা সেবার কেনাবেচা বা হস্তান্তরকে এ সেবার আওতাভুক্ত করা সম্ভব হবে। তাই এটিকে ভার্চুয়াল বিজনেস সেবার আওতায় এনে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং কোম্পানি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিবহন মালিক বা চালকদের নিয়োগ করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে
যাত্রীপরিবহন সেবা দিচ্ছে। মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক এ সেবার বিপরীতে যাত্রী নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর চালককে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া পরিশোধ করে থাকে। এ সেবা মূল্যের বা ভাড়ার একটা অংশ মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পেয়ে থাকে।
জানা গেছে,পুরাতন গাড়িতে এবার নতুন করের আওতায় আনা হয়েছে। সিসি ভেদে ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু হাইব্রিড গাড়িতে কোন ধরনের করারোপ নেই। একজন মধ্য ভিত্তি ব্যক্তি সাধারণ পুরাতন গাড়ি ক্রয় করে চলাফেরা করেন। কিন্তু এই করারোপের ফলে গরিবরা গাড়ি ক্রয়ে উৎসাহ হারাবে।
প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ছোট ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এর ফলে ছোট ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি বাড়বে দশমিক ৫ শতাংশ। আর মাঝারি ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমবে দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে ছোট ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ১ দশমিক ৫ শতাংশ আর মাঝারি ফ্ল্যাট ভ্যাটের হার রয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

একই সঙ্গে যারা পুরনো ফ্ল্যাট কিনবেন তাদেরও খরচ বাড়তে পারে। কারণ নতুন অর্থবছরে পুরনো ফ্ল্যাট পুনঃনিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে ছোট ফ্ল্যাট (১ থেকে ১১০০ বর্গফুট) কেনায় খরচ বাড়তে পারে। আর মাঝারি (১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট) ফ্ল্যাট কেনার খরচ কমতে পারে। কেননা বর্তমানে ১ থেকে ১১০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আর ১১০১ থেকে ১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ভ্যাটের হার রয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে বড় ফ্ল্যাট (১৬০১ থেকে বেশি) নিবন্ধনের ভ্যাট হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে।
এখানেও মাঝারি ফ্লাটের করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এতে করে মধ্য শ্রেণির মানুষ ফ্ল্যাট ক্রয়ে ব্যয় বাড়বে। সরকার বড় ফ্ল্যাটে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে কেন ছোট ফ্ল্যাটের দাম বাড়লেন তা কারো বোধগম্য নয়। এতে করে ধনীদের আর বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে।
অনলাইনভিত্তিক পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর সেবার উপর ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয়ের পরিসর বাড়াতে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ নামে একটি নতুন সেবার সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এর ফলে অনলাইনভিত্তিক যেকোন পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এ সেবার আওতাভুক্ত করা সম্ভব হবে। তাই ভার্চুয়াল বিজনেস সেবার উপর ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করার প্রস্তাব করছি।
এছাড়া নতুন বাজেটে ফেইসবুক, গুগল ও ইউটিউবের মতো কোম্পানির বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের উপর করারোপের আইনি বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে অনেক বিদেশী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রচুর আয় করছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা তেমন একটা কর পাচ্ছিনা। ..এসব লেনদেনকে করের আওতায় আনার মতো পর্যাপ্ত বিধান এতদিন আমাদের কর আইনে ছিল না।
জানা গেছে,বিদেশে গিয়ে যারা প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার ঈদ বাজার করেন তাদের সরকার কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। কিন্তু দেশের বসে যারা পণ্য কয় করছেন তাদের ওপর কেন করারোপ করা হচ্ছে তা কেউ বলতে পারছে না। এতে বুঝতে কোন কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে তিনি ধনীদের জন্যই এই বাজেট করেছেন।

তবে ভার্চুয়াল বাণিজ্যে মূসক আরোপের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন,অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা ই-কর্মাস ও এফ-কমার্সে এ ধরণের কর আরোপ করা হলে উদীয়মান এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।
একইভাবে ফেইসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে যে আয় করে তার ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের করের আওতা বাড়বে। এছাড়া অনলাইন কেনাকাটায় (ই-কমার্স/এফ-কমার্স) ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ করারোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের কারণে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের ধরণ এবং আকারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমি ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল খাত যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদির বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের ওপর করারোপের জন্য আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে প্রয়োজনীয় আইনি বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি। এর ফলে আমাদের করের আওতা বাড়বে।

অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো যখনই মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, তখনই তা জনগণের করের টাকায় পূরণ করে আসছে সরকার। এসব ব্যাংকের জন্য আগামী বাজেটেও বরাদ্দ থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র বলছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য গত ছয় বছরেই সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে দেওয়ার জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যদিও তা এখনো ছাড় হয়নি। ছাড় হবে ৭ জুন বাজেট ঘোষণার পর। আর আগামী বাজেটেও ব্যাংকগুলোর জন্য প্রায় একই পরিমাণ অর্থ রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ টাকা আত্মসাত হয়েছে, সেই পরিমাণ টাকাই সরকারকে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা হচ্ছে উল্লেখযোগ্য।

ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির বোঝাও এখন সরকারকে বইতে হচ্ছে। যেমন অনিয়মে ডুবতে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনতে হয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতার মতো ব্যাংকগুলোকে। অথচ এসব ব্যাংক নিজেরাই রয়েছে মূলধন ঘাটতিতে।
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ভুল সর্বস্ব, ফাঁপা ও অবাস্তবায়নযোগ্য। এই বাজেট আয় ও বৈষম্য ধন বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে। বিবৃতিতে সংগঠনটি দাবি করেছে, বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতি সুদৃঢ় করার কোনো পদক্ষেপ নেই। আয়করমুক্ত আয়ের সীমাটি আগের মতোই দুই লাখ ৫০ হাজারে রাখা ভীষণ অযৌক্তিক। সরকারি ব্যাংক থেকে বরাদ্দ দেয়া অর্থ হল জনগণের করের টাকা। সেটা বাজেটের মাধ্যমে বণ্টন করে কিছু মানুষকে লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রণোদনা পাওয়ার পরও তাদের কর্পোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা সমর্থন করা যায় না। পুঁজিবাজারে প্রায় অর্ধকোটি বিনিয়োগকারীর দুর্দশা কমাতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। সামাজিক সুরক্ষা খাতে দেয়া বরাদ্দে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যেহেতু ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে এবং সরকার জানে যে আরও অনিয়ম-দুর্নীতি হবে, তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে বাজেটেই টাকা রাখা হচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাতে এ রকম বার্তা রয়েছে যে মূলধন সংকট বা যেকোনো সংকটে পাশে আছে সরকার। এ কারণেই ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার উন্নতির পরিবর্তে উল্টো সরকারের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। সে কারণেই ঋণ দেওয়ায় অনিয়ম হচ্ছে, খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না, ঋণ অবলোপন হচ্ছে এবং সরকারি কোষাগার থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর টাকা দিতে হচ্ছে। এ খাতের সুশাসনের জন্য সরকারের চেষ্টার ঘাটতি রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, এভাবে টাকা বরাদ্দ রাখা উচিত নয়। যেহেতু পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছেই, ফলে দেশীয় বাস্তবতা বলে খারাপ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে টাকা রাখতেই হবে। অবশ্য তিনি খেলাপি ঋণ আদায়সহ শর্তপূরণ সাপেক্ষে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া এবং কঠোরভাবে তা নজরদারি করা উচিত বলে মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্বনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন,এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশাল একটি ঘাটতি নিয়ে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে সুদের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হবে সরকারের। বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে স্বল্প সুদের ঋণের জন্য অধিক তৎপরতা থাকা উচিত হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারের উচ্চঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কাটছে না। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে এর পেছনে বড় অঙ্কের সুদ ব্যয় না করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উচ্চ মুনাফা দেওয়া ভালো। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোটাকে আমি সমর্থন করি না। এখানে গরিব লোকজন বিনিয়োগ করে। তাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। তা ছাড়া ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নির্ভরতা বাড়লে ব্যাংক কর্মকর্তারা অলস হয়ে যাবে। তারা আর কাজ করতে চাইবে না। বেসরকারি উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পাবে না। এতে দেশের শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে বাজেট পাস হওয়ার আগেই বাহুল্য ব্যয় কাটছাঁট করা উচিত। এতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে সমতাভিত্তিক কর্মসংস্থানবান্ধব প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার সুযোগ থাকে।

http://www.dailysangram.com/post/333709