৮ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৬

মাদকবিরোধী অভিযান

‘বিচারবহির্ভূত হত্যায়’ বৈশ্বিক উদ্বেগ বাড়ছে

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘দুই দল মাদক কারবারির মধ্যে সংঘাতে’ সন্দেহভাজনদের মৃত্যুকে বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার যায়ীদ রা’দ আল হোসেইন বুধবার বাংলাদেশকে সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা অনতি বিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। ১৫ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবরে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান গভীর উদ্বেগ জানান।
যায়ীদ রা’দ আল হোসেইন বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির বাঁচার অধিকার আছে। মাদক গ্রহণ বা বিক্রি করলেই কেউ তার মানবাধিকার হারায় না।’ তিনি বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যার পূর্ণ তদন্ত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকারীদের দায়মুক্তি না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি ইউএন নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে মাত্র কয়েক সপ্তাহে ১৩ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা নিয়েও মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের শঙ্কা রয়েছে।

রাভিনা সামদাসানি বলেন, ‘গত ১৪ মে জেনেভায় ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগগুলো তদন্তের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিল বাংলাদেশ। অথচ ১৫ মে থেকেই মাদকবিরোধী লড়াইয়ে একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’
এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি) বাংলাদেশকে মাদকবিরোধী অভিযানে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানায়।
অন্যদিকে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন গতকাল বৃহস্পতিবার জানায়, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের এশিয়া ও কমনওয়েলথবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে একের পর এক নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বুধবার এক টুইট বার্তায় মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে আমি উদ্বিগ্ন। আমি আশা করব, বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও সুরক্ষা ব্যবস্থা সমুন্নত রাখবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সম্প্রতি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার খবরে উদ্বেগ জানান। ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা মাদকবিরোধী অভিযানে হতাহতের প্রতিটি ঘটনার পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মাদকবিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে চলমান অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার তথ্য আসছে। গুরুত্ব বিবেচনা করেই জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-৭ নেতাদের আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে কানাডা সফর করছেন। জানা গেছে, এ সফরে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির ফাঁকে আলোচনায় মাদকবিরোধী লড়াইয়ে প্রাণহানির বিষয়টি উঠতে পারে। এ ছাড়া চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনেও এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
এদিকে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে ফিলিপিন্সের অনুকরণে বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে অনতি বিলম্বে এ অভিযান স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে গত ৩১ মে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের ১৮৪টি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) জোট ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) ও এর অন্যতম সদস্য ‘অধিকার’ এক বিবৃতিতে মাদকবিরোধী যুদ্ধে হত্যা বন্ধের আহ্বান জানায়।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/06/08/645505