৮ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১১

‘এমপিও’ ‘৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট’ ‘বৈশাখী ভাতা’ নিয়ে একটি শব্দও নেই বাজেট বক্তৃতায়

শিক্ষকদের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু গত আট বছর ধরে বন্ধ করে রাখা বেতনের সরকারি অংশ মান্থলি পে-অর্ডার (এমপিও), ‘৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট’ এবং ‘বৈশাখী ভাতার’ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাজেট বক্তৃতায় কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। দাবিগুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রী গত কয়েক বছরের মতো এবারের বাজেট বক্তৃতায়ও একটি শব্দ ব্যবহার করেননি। শিক্ষকদের অব্যাহত দাবি সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় তিনি কোনো কথা বলেননি।

এ ব্যাপারে একাধিক শিক্ষক নেতা জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর পর নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা দেশে শিকদের দাবিগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। এমপিওভুক্তি, বেতনের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা নিয়ে শিকদের মধ্যে ােভ সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় তার কোনো ইঙ্গিত নেই। বাজেট বক্তৃতায় এ ব্যাপারে কথা না থাকাটা স্বাভাবিক। খাত ওয়ারি বরাদ্দের সময় হয়তো এটি স্পষ্ট হতে পারে। তবে বিষয়গুলো যেহেতু এখন স্পষ্টকাতর হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সারা দেশে এ নিয়ে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হয়েছে, সে কারণে এ দাবি ও ইস্যুগুলোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর কোনো একটা ইঙ্গিত বা নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল। এটাই শিক্ষকদের আরও বেশি উৎকণ্ঠিত করবে। আমাদের দাবি হচ্ছে, এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে তার অবস্থান ও নির্দেশনা স্পষ্ট করতে হবে।
সারা দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার ৯৭ থেকে ৯৫ শতাংশই পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এখানে শিক্ষকদের একাংশকে সরকারি নীতিমালা ও নির্দেশনার ভিত্তিতে যোগ্যতার নিরিখে বেতনের শতভাগ প্রদান করা হয় সরকারিভাবে। একেই বলা হয়, বেতনের সরকারি অংশ হিসেবে পরিচিতি মান্থলি পে-অর্ডার বা সংক্ষেপে যার পরিচিতি হচ্ছে ‘এমপিও’। বর্তমান সরকারের লাগাতার দুই মেয়াদে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১০ সালে সরকারের প্রথম বছর মাত্র এক হাজার ৬২৪টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। তাও নানা বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর বিগত আটটি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে এক টাকার অর্থও বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে এ নিয়ে সারা দেশে এক ধরনের ক্ষোভ ও তীব্র দাবি উঠেছে। খোদ সরকারি দলের এমপিরা এ নিয়ে গত আট বছর প্রতিটি সংসদ অধিবেশনে সোচ্চার হয়েছেন, দলীয় বৈঠকে দাবি করেছেন এবং বারবারই শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছেন। গত ৮ বছরে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীতে অন্তত ২০ দফায় অনশন-অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। সর্বশেষ গত ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট এবং পরে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেস কাবের সামনে আমরণ অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসান শিক্ষা সচিবকে সাথে নিয়ে শিক্ষকদের আমরণ অনশনস্থলে এসে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির কথা জানানোর পর শিক্ষকেরা ঘরে ফিরে যান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে বলা হয়েছে, সারা দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাঁচ হ্জাার ২৪২টি। আরও দুই হাজারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি না থাকলেও পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউই বেতনভাতা পান না। তারা এখন এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) দাবি করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্য প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার। বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, ২৭ হাজার ৮১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংখ্যা চার লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। এদের বেতনভাতা বাবদ প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় প্রায় ৯৫০ কোটি টাকার মতো।

এমপিও ছাড়া শিক্ষকদের আরও যে দুইটি দাবি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট’ এবং ‘বৈশাখী ভাতা’। এ দু’টি দাবির ব্যাপারেও কোনো কথা বা নির্দেশনা নেই অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। এ যাবৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, তার প্রতিটিতেই শিক্ষকেরা যোগ্যতা অনুসারে দেয়া হয়েছে। এবারই প্রথম বেতনের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে গত দুই বছর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই ২০১৫ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলা নববর্ষ থেকে এ বাংলা নববর্ষের বৈশাখী উৎসব ভাতা চালু করা হয়। এ ভাতা একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তার মূল বেতনের ২০% হারে পেয়ে থাকেন। ‘৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট’ ও একই বছর চালু করা হয়। ‘৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট’ দেয়া হচ্ছে, দেশের আর কোনো পে-স্কেল ঘোষণা করা হবে না, তাই প্রতি বছরই মুদ্রাস্ফীতির সাথে সঙ্গতি ও সামঞ্জ্য রেখে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট’ দেয়া হবে।
সূত্রে জানা গেছে, এমপিভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ‘বৈশাখী ভাতা’ চালু করতে হলে বছরে মাত্র ১৬৭ কোটি টাকা এবং ‘৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট’-র জন্য প্রয়োজন মাত্র ৫২ কোটি টাকা। ওই ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট শিক্ষকদের অধিকার। তারা সরকারি বেতনভাতা পেয়ে থাকলে সরকার ঘোষিত বৈশাখী ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট পাবেন। না দেয়া হলে তা হবে অধিকার বঞ্চিত করা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/323697