৮ জুন ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১০

সুদ পরিশোধেই ব্যয় হবে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা

ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে জাতীয় বাজেট। বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে ঘাটতি বাজেট। আর এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ঋণের সুদ। আবার এ সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে ঋণ নিয়ে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের প্রায় বেশির ভাগ অর্থাৎ ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধের জন্য, যা অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। আর সামগ্রিক বাজেটের ১১ দশমিক ১ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে এ সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। অথচ নীতি পরিবর্তন করলে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন করা যেত। এটা অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সঙ্কোচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।
আগামী অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন বাজেটের মধ্যে শুধু ঋণের সুদ ও সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং পেনশন পরিশোধেই ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ঋণের সুদ পরিশোধ করা হবে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের বাজেটে ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় বাড়ছে প্রায় সাড়ে ২৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই সরকার বাজেটের আকার বাড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়াতে পাড়ছে না। এ কারণে ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদ ব্যয়। যেমন, গত ৫ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বেড়েছে প্রায় শতভাগের বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটে সুদ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা।

অস্বাভাবিক হারে ঋণের সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে প্রতি বছরই ঋণের সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, সরকার ইচ্ছে করলেই কম সুদে ঋণ নিতে পারে। কিন্তু সে পথে সরকার হাঁটছে না।
এ কারণে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে। আবার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও তুলনামূলকভাবে কম হারে ঋণ নিতে পারে। সরকার ইচ্ছে করলেই এখন সিঙ্গেল ডিজিটে অর্থাৎ স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। এতে ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যয় কমে যেত। কিন্তু সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। ঋণ নিচ্ছে ব্যাংকবহির্ভূত খাত অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের সুদ এখনো সাড়ে ১১ শতাংশ রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী সরকার এ খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে ব্যাংক থেকে আর ঋণ নিতে হচ্ছে না। বরং উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের কম সুদের ঋণ পরিশোধ করছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের এ ভুল নীতির কারণেই সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অভ্যন্তরীণ খাত থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়া। তিনি বলেন, ইদানীং ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে অধিক সুদ দিয়ে ঋণ নিচ্ছে। এতে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হলো সরকার কাক্সিক্ষত হারে বিদেশী ঋণ ব্যবহার করতে পারছে না। কেননা বিদেশী ঋণের সুদ অনেক কম। তিনি বলেন, বাজেটে সুদ ব্যয় কমাতে বিদেশী ঋণের ব্যবহার বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আয় বাড়িয়ে ঋণ নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। অন্যথায় ঋণপরিচর্চা করতেই বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে যাবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/323677