৬ জুন ২০১৮, বুধবার, ৯:৫২

ঢাকার আশপাশে মাদক আস্তানা

কেরানীগঞ্জে ৯ শতাধিক ইয়াবা স্পট

ঢাকার কেরানীগঞ্জের দুই থানায় শতাধিক মাদক কারবারি ৯ শতাধিক ইয়াবা স্পট চালাচ্ছে। এই ইয়াবার পাশাপাশি তারা অন্যান্য মাদকের কেনাবেচাও করছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। অভিযোগ রয়েছে, এসব কারবারিকে সহায়তা করছে কিছু পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে দু-একজন রয়েছেন যারা কনস্টেবল থেকে পর্যায়ক্রমে ইন্সপেক্টর পদোন্নতি পেয়েও ওই কেরানীগঞ্জেই চাকরি করছেন। সাংবাদিক পরিচয় দেন এমনও দু-একজনের নাম শোনা যাচ্ছে এ মাদক কারবারিদের সহায়তায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জে মাদকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান নেই। মাদক ডিলাররা কাউকে তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে কারবার। খোলামোড়া জিয়ানগর এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের ডিলার আলি হোসেন ও নুর হোসেন নামে দুই সহোদর। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের ৩৫টি মামলা রয়েছে। এক ইন্সপেক্টর তাদের শেল্টার দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ আছে।
জিনজিরার রাশিয়ান পাপ্পু, টিটু, জাবেদ হোসেন বাবু, আরিফ হোসেন জয় ও সোহাগ ইয়াবার ডিলার। তাদের ইয়াবা এলাকা ছাড়াও রাজধানীর দক্ষিণে সাপ্লাই দেয়া হয়। দৈনিক ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকায় শতাধিক নারী পুরুষ তাদের বহনকারী হিসেবে কাজ করছে। যারা বিভিন্ন স্পটে মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া রয়েছে ইমামবাড়ি এলাকায় বুলু, শিবলু, নাসিম, নাজিম ও মুকুল। মডেল টাউনে সুমন দেওয়ান ও শিবলু। মনু বেপারীর ঢালে আশ্রাব উদ্দিন, সাম্মা ও কসাই মামুন। মান্দাইলে আনিস, মিন্টু, তারেক, রুবেল, জুম্মন, আলাউদ্দিন ও কাদের। হাসনাবাদে ইয়াসিন, রোহিতপুরে আরিফ, চুনকুটিয়ায় শাহিন, সোনাকান্দায় আয়নাল, বেগুন বাড়ির ইয়াসিন, ভিরুলিয়ায় গোবিন্দ, ভারালিয়ায় হজরত, পটকা জোড়ে সাকিল, জনি, রামা ও আনন্দ। মাদবপুরে রবিন, কলাতিয়ায় রুবেল, রামের কান্দায় সজিব, ঘাটারচরে জসিম, ধর্মশুড়ে শাকিব, আঁটি বাজারে জামাই আনোয়ার ও শাহআলম।

জানা গেছে, মাদকের বড় চালান আসে এখন নৌপথে। বাদামতলী ও জিনজিরার বুড়িগঙ্গার আশপাশে বাল্কহেড, ট্রলার ও নৌকায় আনা হয় মাদক। তার মধ্যে ইয়াবার চালান বেশি। আর এ উপজেলার মাদক সম্রাটরা দিব্বি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছেন এক পুলিশ পরিদর্শক ও কথিত এক সাংবাদিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এএসআই নয়া দিগন্তকে জানান, তিন মাস আগে মডেল থানায় যোগ দেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও বিয়ার ছাড়াও হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার করেন তিনি। এ ধারাবাহিকতায় কিছু দিন আগে এক কথিত সাংবাদিকের ভাগিনাকে গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে এক পরিদর্শক এবং ওই সাংবাদিকের রোষানলে পড়েন ওই এএসআই। দুই দিন পরে অন্য এক এসআই গাঁজাসহ আটক করে বেলাল নামে এক মাদক কারবারিকে। তবে বেলাল জেলে থাকলেও তার স্ত্রী সুমি এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, থানা এলাকার বিভিন্ন স্পটে মাদক ছাড়াও নকল ওষুধ, জুস, ভেজাল পানীয়, সেমাই ও বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরী করা হয়। এসব স্পটে যাওয়া মাত্র ওই পরিদর্শকের নির্দেশনা আসে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়। তারপরও আটক করা হলে কথিত ওই সাংবাদিক ও পরিদর্শক নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে তাকে। একপর্যায়ে মিথ্যা অভিযোগ লিখে বদলি করে দেয় ওই এএসআইকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জে যারা মাদক ডিলার তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে। কেউ কেউ আবার সরকারদলীয় নেতাকর্মীর পরিচয় দেয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই মাদক কারবারিদের সহায়তাকারী ওই ইন্সপেক্টর একটি ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৫ বছর ধরে ঘুরেফিরে তিনি এই একই এলাকায়। কখনও থানায়, কখনও ডিবিতে, আবার কখনও ফাঁড়িতে। নামে বেনামে এ এলাকায় তার জমি, ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে একাধিক। তার মধ্যে উপজেলার বাংলা নগরে এক বিঘা জমি, আতাসুর জহিরের প্রজেক্টে আরও কয়েকটি প্লট, মডেল টাউন আবাসিকে ফ্ল্যাট ও রাজধানীর মিটফোর্ড রোড আরমানিটোলায় দ্বিতল একটি বাড়ির খবর মিলেছে।
এ দিকে গত ২৪ মে ওই পুলিশ পরিদর্শকের অনুসারী এসআই আলা উদ্দিনের বিরুদ্ধে নিরীহ একটি ছেলের পকেটে পাঁচ পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে আটক করার অভিযোগ উঠেছে। পরে স্থানীয়রা তার সোর্স জুম্মন ও তাকে আটকে রাখে। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। ঠিক পরের দিন কয়েক শ’ লোক থানা ঘেরাও করে সোর্স জুম্মনকে আটক ও ওই এসআইয়ের অপসারণ দাবি করে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/323138