৫ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৪৬

ঈদের অগ্রিম টিকিট পেতে নাকাল যাত্রীরা

সীমিত টিকিট প্রত্যাশা বেশি

ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে গিয়ে নাকাল যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও সহজে টিকিট মিলছে না। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন অনেকেই। সেহরি, ইফতার দুটোই সারছেন লাইনে। তারপর কারও ভাগ্যে সাধারণ টিকিট মিললেও এসি টিকিট যেন সোনার হরিণ। সোমবার ছিল ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার তৃতীয় দিন। কাউন্টারে আগের যে কোনো দিনের চেয়ে ভিড় দ্বিগুণ। বৃষ্টিতে ভিজেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। যারা পেয়েছেন তাদের আনন্দের শেষ নেই। যারা পাননি, তারা রইলেন পরবর্তী দিনের অপেক্ষায়।

এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাফ বক্তব্য, ৬৫ শতাংশ টিকিট সরাসরি কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে। এসি, চেয়ার ও কেবিনের টিকিটও কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে। সীমিত টিকিটের বিপরীতে ২/৩ গুণ লোক লাইনে দাঁড়াচ্ছে। ফলে টিকিট না পেয়ে নানান প্রশ্ন, অভিযোগ করছে।
রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে জানান, টিকিট বিক্রয়ে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কালোবাজারি হচ্ছে না। সীমিত টিকিট, সীমিত এসি টিকিট থাকায় সবাই হয়তো টিকিট পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ভিআইপি টিকিটের বিপরীতে ডিওলেটার কিংবা যে কোনো চাহিদাপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ১০ শতাংশ কোটার টিকিট বিক্রয়েও যথাযথ নিয়ম মানা হবে। যাত্রীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে কর্মকর্তারা শতভাগ স্বচ্ছতায় টিকিট বিক্রি করছেন।

টিকিটপ্রত্যাশী নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোর থেকে অনেকে লাইন দাঁড়িয়েছেন, কেউবা রোববার দুপুর থেকে। ইফতার সেহরি লাইনে বসেই সেরেছেন অনেকে। ধীরে ধীরে লাইন লম্বা হতে থাকে।
চট্টগ্রামগামী যাত্রী শারমিন চৌধুরী জানান, তিনি তার স্বামীকে নিয়ে ভোররাত ৪টায় স্টেশনে এসে নারীদের লাইনে দাঁড়ান। পুরো পরিবারের জন্য ৮ টিকিট দরকার। তাই দু’জন দুই কাউন্টারে দাঁড়ান। তিনি তূর্ণা নিশিথার এসি চেয়ার চেয়েছিলেন, পাননি। পেয়েছেন শোভন চেয়ার, তাও ৪টির জায়গায় ২টি। তার স্বামী টিকিট পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, এটা কোন নিয়ম, নারীদের জন্য কেন মাত্র ২টি কাউন্টার। এসি টিকিট কোথায়, কার তত্ত্বাবধানে এসি টিকিট থাকে। ভিআইপিদের জন্য সব এসি টিকিট রেখে দেয়া হচ্ছে।

সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী জহিরুল ইসলাম রোববার বিকালে লাইনে দাঁড়ান। জানালেন, রোববার ইফতার ও সেহরি করেছেন কাউন্টারের সামনে লাইনে বসে। তিনি ৯ জনের পেছনে ছিলেন। সোমবার সকালে টিকিট ছাড়ার পর তিনি এসি টিকিট পাননি, তবে নন-এসি টিকিট পেয়েছেন। তিনি বলেন, কাউন্টার থেকে কয়েকটি মাত্র এসি টিকিট দিয়ে আর দেয়া হচ্ছে না। এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে ১ জুন। চলবে ৬ জুন পর্যন্ত। মঙ্গলবার ৫ জুনে পাওয়া যাবে ১৪ জুনের টিকিট। ৬ জুন দেয়া হবে ১৫ জুনের টিকিট। ফিরতি টিকিট ১০ জুন ছাড়া হবে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রতিবছরের মতো ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে। মঙ্গলবার দেয়া হবে ১৪ জুনের টিকিট। সোমবার ২৭ হাজার ৪৬১টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, কমলাপুর রেলস্টেশনে ২৬টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি চলছে। এর মধ্যে দুটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত। একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট দেয়া হচ্ছে। এই টিকিটও ফেরত নেয়া হবে না। টিকিটের ৬৫ শতাংশ কাউন্টারে, ১০ শতাংশ কোটা আর ২৫ শতাংশ অনলাইনে বিক্রির জন্য।
এদিকে স্টেশনে নারীদের দুটি কাউন্টার থাকলেও সোমবার সকাল ১০টার থেকে একটি বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, আজই নারীদের জন্য দুটি কাউন্টার হয়ে যাবে, কোনো সমস্যা নেই। একটা কাউন্টার আছে, আরেকটা কাউন্টার হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। ঢাকা স্টেশনে ৩২টি সিসি ক্যামেরা কার্যকর আছে। এ ছাড়া রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ে পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন ও র্যা ব নিয়োজিত রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/56498