৫ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩৭

ইসরাইলী হায়েনাদের বুলেটে নিহত রাজানের জন্য কাঁদছে গাজা

চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজের ২১ বছরের মেয়েটির কথা স্মরণ করছিলেন মা সাবরিন আল-নাজ্জার। বলছিলেন, ‘ও এসে দাঁড়ালো আর আমাকে একটি হাসি দিয়ে বললো, বিক্ষোভে যাচ্ছে।’
গত শুক্রবার দশম সপ্তাহের মতো চলছিল ৩০ মার্চ শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ। ইসরাইলের দখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে সীমান্তে বিক্ষোভ করে আসছে গাজাবাসী। সেখানে ইসরাইলী হামলায় আহতদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য গিয়েছিলেন নার্স রাজান। শেষ পর্যন্ত এই চিকিৎসাকর্মী রেহাই পায়নি ইসরাইলী বুলেট থেকে। রাজানের শোকে এখন স্তব্ধ গাজা।

তার মা সাবরিন বলছিলেন, ‘ চোখের পলকেই ও দরজার বাইরে চলে গেলো। ওকে আরেকবার দেখার জন্য আমি দৌড়ে বেলকনিতে গেলাম। কিন্তু ততক্ষণে ও আমার দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। মনে হলো, আমার সামনে থেকে পাখির মতো উড়ে চলে গেলো।’
বিক্ষোভে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শুক্রবার নিজের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাগটি নিয়ে রাজান সীমান্ত বেড়ার কাছে গিয়েছিলেন। ১০০ গজ দূর থেকে দুই হাত তুলে তিনি ইসরায়েলী সেনাদের বোঝাতে চাইছিলেন, তিনি কোনো হুমকি নয়।

রাজান সীমান্ত বেড়ার কাছে আহত এক ফিলিস্তিনীর চিকিৎসার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তার বুকে গুলী করে ইসরাইলী বাহিনী। একটি জীবন্ত বুলেটে বুকের এফোড় ওফোড় হয়ে আরেকটি জীবন কেড়ে নিলো। চলমান এই বিক্ষোভে রাজানকে নিয়ে ১১৯ ফিলিস্তিনী মেয়েকে হত্যা করলো ইসরাইল। আহত হয়েছে অন্তত ১৩ হাজার মানুষ।
রাজানকে যখন গুলী করা হচ্ছিল, তখন তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আরেক চিকিৎসা কর্মী রিদা নাজ্জার। ২৯ বছরের এই নারী বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসার জন্য আমরা যখন বেড়ার ভেতর প্রবেশ করলাম, ইসরাইলী বাহিনী আমাদের দিকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরপর একটি স্নাইপারের গুলী এসে সোজা রাজানকে আঘাত করলো। বুলেটের ভাঙা অংশগুলো আমাদের টিমের আরো তিনজনকে আহত করেছিল। রাজান প্রথমে বুঝে উঠতে পারেনি, ও গুলীবিদ্ধ হয়েছে। এরপরই চিৎকার করে উঠে বলছিল- আমার পিঠ, আমার পিঠ। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।’

রিদা বলেন, ‘দূর থেকে আমাদের ইউনিফর্ম স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। আমাদের মেডিক্যাল ব্যাগও দেখা যাচ্ছিল। যে কেউ বুঝতে পারছিল, আমরা বিক্ষোভকারী ছিলাম না।’
গত ২০ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে রাজান জানান, আহত বিক্ষোভকারীদের সেবা দেয়া তিনি নিজের ‘দায়িত্ব ও কর্তব্য’ মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলী যত খুশি গুলী করতেই থাকে। ওরা উন্মাদ।’ শনিবার রাজানের দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিল হাজারো ফিলিস্তিনী। কলিগদের কাছে থাকা তার হত্যার ভিডিও ক্লিপ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সবাই। হাস্যকরভাবে রাজানের হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে ইসরাইলী বাহিনী।
এদিকে গত শুক্রবার গাজা-ভূগণ্ডের উত্তরে ইসরায়েলী সেনাবাহিনীর গুলীতে নিহত ফিলিস্তিনী নার্স রাজান আল নাজ্জারকে হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছে আরব লীগ। সংগঠনটির দাবি, ‘গাজা-ভূগ-ে মানবিক দায়িত্ব পালনের সময় ফিলিস্তিনী নার্স শহীদ রাজান নাজ্জারের সাথ করা দখলদার ইসরায়েলী প্রশাসনের আচরণ ইচ্ছাকৃত হত্যার অপরাধ।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য-তহবিল, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে এ অপরাধে চোখ বন্ধ করে না থেকে জড়িতদের বিচার এবং ডাক্তার ও নার্সদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলকে সন্মান প্রদর্শনে বাধ্য করতে আহবান জানায় আরব লীগ।
গত শুক্রবার খান ইউনুসে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর গুলীতে ফিলিস্তিনী স্বেচ্ছাসেবী নার্স রাজান নিহত হয়।’ প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, খান ইউনুসে ইসরাইলী সিমান্তের কাছে এক আহতকে সাহায্য করতে গেলে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর তাকে গুলী করে হত্যা করে। ইসরাইলী সেনাবাহিনী নার্স হত্যার তদন্তের ঘোষণা দিয়ে জানায়, ফিলিস্তিনী যোদ্ধারা সীমান্তে হাতবোমা দিয়ে তাদের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে।

http://www.dailysangram.com/post/333095