৪ জুন ২০১৮, সোমবার, ১১:৩৭

ট্রেনের টিকিটের জন্য হাহাকার

ঈদের দুয়েকদিন আগের ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য হাহাকার করছেন ঘুরমুখো যাত্রীরা। সড়কে দুর্ভোগের শঙ্কায় যাত্রীরা ট্রেনের টিকিটের জন্য ভিড় করছেন কমলাপুর স্টেশনে। গতকাল তৃতীয় দিন ১২ই জুনের অগ্রিম টিকিট দেয়া হয়। রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে টিকিট কাউন্টারগুলোতে ছিল টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড়।

কানায় কানায় পূর্ণ কমলাপুর রেলস্টেশন। সবাই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন টিকিটের অপেক্ষায়।
এদের মধ্যে কেউ এসেছেন শনিবার রাতেই এবং কেউবা সেহরি খেয়ে। কিন্তু লাইনে থাকা সবার উদ্বেগ একটাই কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাবো তো। এদিকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর অনেকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়ে আবার উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। চোখে-মুখে ছিল হাসির বন্যা। লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীরা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে ধীরগতিতে টিকিট দেয়ার অভিযোগও করেছেন। ঈদের সময় মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও নানা দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ট্রেনের টিকিটের প্রতিই নগরবাসীর ঝোঁক বেশি থাকে। এবারও একই দৃশ্য দেখা গেছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সকাল আটটায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ভোর থেকে কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন ধরে বসে পড়েন অনেকে। সকাল আটটায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার আগেই প্রতিটি কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ লোকদের সারি আঁকাবাঁকা হয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফরম ছাড়িয়ে যায়। স্টেশনের ২৬টি কাউন্টারে প্রতিদিন ২৩ হাজার ৫১৪টি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, কাউন্টার থেকে ধীরগতিতে টিকিট দেয়া হচ্ছে। বারেক হোসেন যাবেন রাজশাহী। সেহরি খেয়ে ভোর ৫টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটের জন্য। ১১টার দিকে ধূমকেতু ট্রেনের টিকিট কেটেছেন।

টিকিট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ঈদে সবার সঙ্গে ঈদ পালন করার মজাটাই আলাদা বলে মন্তব্য করেন তিনি। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, কালোবাজারি ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি এবং র্যা ব-এর সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিছু অভিযোগ প্রসঙ্গে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদের সময় সবাই এসি টিকিট ও কেবিন চান। কিন্তু সেগুলোতো সীমিত। তিনি যে স্টেশনের জন্য চেয়েছেন সেখানকার বরাদ্দকৃত এসি টিকিট হয়তো শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে তারা পাচ্ছেন না। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন, বরাদ্দকৃত টিকিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে টিকিট বিক্রি চলবে। এবার টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬টি করা হয়েছে। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর।

হঠাৎ দুদক টিম: কমলাপুর রেলস্টেশনে ২৬টি কাউন্টারে সকাল থেকেই বিক্রি হচ্ছিল ১২ই জুনের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। কাউন্টারগুলোর সামনে তখনও মানুষের দীর্ঘ লাইন। এমন অবস্থায় স্টেশনে হঠাৎ উপস্থিত হন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা বা যাত্রীদের অভিযোগ আছে কিনা তা জানতে এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিতে ১০ সদস্যের একটি টিম বেলা ১২টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসে। দুদকের উপ-পরিচালক মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে এই টিমটি টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে গিয়ে অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা টিকিট ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে এক টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, সাধারণ টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। তবে সকাল থেকেই এসি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় তিনি অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশী অন্য যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেও সার্বিক বিষয় খোঁজখবর নেন।

দুদকের উপ-পরিচালক মাহমুদ হাসান সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীরা যেন দুর্নীতিমুক্ত এবং ঝামেলাহীনভাবে ঈদের অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেন সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতেই আমাদের আসা। কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমাদের টিম পরিদর্শনে এসেছে, অনেকের সঙ্গে কথা বলে ঘুরে দেখছি সার্বিক ব্যবস্থাপনা। দুর্নীতিমুক্ত ও ঝামেলাহীনভাবে যেন যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন সে লক্ষ্যে দুদকের অবস্থান থেকে আমাদের যা যা করা দরকার তা করবো। এর আগে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তীর কক্ষে দুদক টিম প্রবেশ করে তাকে সঙ্গে নিয়ে টিকিট কাউন্টারের ভেতরের অংশের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। পরে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, উনারা এসে টিকিট কাউন্টারের ভেতরে-বাইরে ঘুরে দেখে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয় ১লা জুন। যা চলবে আগামী ৬ই জুন পর্যন্ত। আজ ৪ঠা জুন ১৩ই জুনের টিকিট, ৫ই জুন ১৪ই জুনের টিকিট এবং ৬ই জুন ১৫ই জুনের অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে। একজন একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=120176